এশিয়ান বাংলা, চট্টগ্রাম : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে হঠাৎ চট্টগ্রামের কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান । এ সময় বিদ্যালয়গুলোতে বেশির ভাগ শিক্ষককেই অনুপস্থিত পেয়েছেন তিনি।
পরিদর্শন শেষে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনুপস্থিতিসহ নানা অনিয়মের খবর পেয়ে সারপ্রাইজ ভিজিট করি। কিন্তু যে কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়েছি সেখানে বেশিরভাগ শিক্ষককেই অনুপস্থিত পেয়েছি।
তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সত্যিই আমি বিস্মিত। এভাবে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলত দেয়া যায় না। যেকোনো মূল্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে দুদক দণ্ডবিধির ১৬৬ ধারা প্রয়োগ করবে। তারপরও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতিসাধন করবেন বা করার চেষ্টা করবেন- এমন কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
দুদক দণ্ডবিধি ১৬৬ ধারায় কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনকল্পে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক আইন অমান্যকরণ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
এমন আইন অমান্যকরণে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে বিশেষ মাধ্যমে অভিযোগ আসে চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসেন না। বিষয়টি গোপন রেখে দুদক চেয়ারম্যান সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রাম যান। এরপর সকাল সোয়া ৯টার দিকে প্রথমে নগরীর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।
এ সময় স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের স্কুলের বাইরে অবস্থান করতে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান। এরপর তিনি স্কুলে ঢুকে সরজমিন দেখেন আটজন শিক্ষকের মধ্যে একমাত্র ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপস্থিত রয়েছেন। বাকি সাতজন শিক্ষকই অনুপস্থিত। ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের আশেপাশে আচার-চানাচুর খেয়ে অলস সময় পার করছে।
এর পরপরই দুদক চেয়ারম্যান যান নগরীর ভাটিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ জন শিক্ষক অনুপস্থিত পান। তাদের অনুপস্থিতির কারণ দুদক চেয়ারম্যানকে জানাতে পারেন নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
দুদক চেয়ারম্যান ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি শিট পরীক্ষা করে দেখেন, শনিবার যে সব শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল তাদের অনেককেই উপস্থিত দেখানো হয়েছে। আবার রোববার বেলা ১০টা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের রোল কল করা হয়নি। এ বিষয়েও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি।
এরপর দুদক চেয়ারম্যান আকস্মিক পরিদর্শনে যান নগরীর শীতলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা কোনো শিক্ষার্থীকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় সুযোগ দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি অবহিত হয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান।
তবে নবম শ্রেণিতে এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের ২ হাজার টাকার বিনিময়ে দশম শ্রেণিতে প্রমোশন দেয়ার অভিযোগ আসে।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এটা অনৈতিক। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনৈতিকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দুদক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।