এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : পায়রা বন্দরের দখল নিতে পারে চীন। এমন শঙ্কাই প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। দেশটির সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর বিশেষ প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয় । এতে বলা হয়েছে, নিজের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চাইছে চীন। পাকিস্তানের গোয়াদার, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের পর এবার বাংলাদেশের পায়রা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় বেইজিং।
এএনআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ও বাংলাদেশ নিজেদের মধ্যে থাকা সম্পর্ককে আরো বিস্তৃত করতে বেশ কিছু চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। চীনের আড়ম্বরপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অর্থনৈতিক করিডোর ওবর (ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড) কর্মসূচি, যাকে বিআরআই’ও (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) বলা হয়ে থাকে, তার অধীনে এ চুক্তি করা হয়। এর উদ্দেশ্য অবকাঠামো বিষয়ক প্রকল্পগুলোতে চীনের অর্থায়নে এশিয়ার দেশগুলোকে সম্পর্কযুক্ত করা।
একে পর্যবেক্ষকরা দেখেন একবিংশ শতাব্দীর ‘সিল্ক রোড’ হিসেবে।
বাংলাদেশে যে প্রকল্পগুলোতে হাত দিয়েছে চীন তার মধ্যে বিশেষ করে একটিতে তাদের বিশেষ স্বার্থ রয়েছে। সেটি হলো পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের বিস্তার ও উন্নয়ন। এই বন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণে ৬০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীনের দু’টি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং। নদী তীরবর্তী অবকাঠামো নির্মাণের কথাও রয়েছে এর মধ্যে। তার মধ্যে আছে গৃহায়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা।
ঢাকার কর্মকর্তারা এ নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে। তারা বলেছেন, মূল উদ্দেশ্যকে চীন তার বিনিয়োগ কৌশলের মধ্যে ধোঁয়াসাচ্ছন্ন করে রেখেছে। তারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। চীন একই রকম কৌশল প্রয়োগ করেছিল শ্রীলঙ্কায় হাম্বানটোটা বন্দরের উন্নয়নকালে।
ওবিওআর কর্মসূচির অধীনে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের সরকারকে কয়েক শ’ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল চীন। এর উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ নেয়া। তার মধ্যে কৌশলগত হাম্বানটোটা বন্দরের উন্নয়ন ছিল তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকারে। কিন্তু ঋণের ভারে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার ঋণ ফুলেফেঁপে বেলুনের মতো রূপ ধারণ করতে থাকে। এই তথাকথিত ‘সফ্ট লোন’ শ্রীলঙ্কাকে শোধ করতে গিয়ে ওই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে ৯৯ বছরের জন্য তুলে দেয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।
ঢাকায় চীনের এই কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার কথা কেউ ভুলে যায়নি। কর্মকর্তারা এটা ভেবে উদ্বিগ্ন যে, চীন সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত মদতপুষ্ট দু’টি কোম্পানি সিএইচইসি এবং সিএসসিইসি দরজায় পা ফেলেছে। ফলে পায়রা বন্দরে অধিক হারে নিয়ন্ত্রণ চাইবে চীন এটা অনেক দূরের কথা নয়। পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগে হাম্বানটোটা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চীন।
পোর্ট-পার্ক সিটি নামে পরিচিত হয়ে ওঠা গোয়াদার বন্দরকে ধরা হয় সিপিইসি প্রজেক্টের অন্যতম সফলতা হিসেবে। তবে সেখানেও চীন তার সফ্ট লোনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। পাকিস্তানকে ঋণের ফাঁদে ফেলে চীন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে গোয়াদারে। সেখানে কার্যত নিজের নিয়ন্ত্রিত এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে চীন। এটি এখন স্পষ্ট যে, ইসলামাবাদ নয়, গোয়াদারের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক এখন বেইজিং।
বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বরিশাল বিভাগের পায়রা সমুদ্র বন্দর কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন এই বন্দরের বিনিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় তার কারণ দেশটির ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ। গোয়াদার বন্দর থেকে শুরু হয়ে সামুদ্রিক আধিপত্যের যে মুক্তার মালা তৈরি করতে চাইছে চীন তার একটি অংশ হতে যাচ্ছে পায়রা সমুদ্রবন্দর। ২৭শে এপ্রিল ওবর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো বেইজিং-এ বৈঠকে বসছে।
এএনআই’র দাবি, চীন ওবরভুক্ত দেশগুলোর নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে বা চেষ্টা করেছে। এরমধ্যে মালদ্বীপ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছে তারা। এছাড়াও রয়েছে মিয়ানমারের কপার মাইনে ব্যাপক মাত্রার চীনা বিনিয়োগ, যা অঞ্চলে তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে তার কথাও। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে সাবধান করেছে যে, চীনা বিনিয়োগে সবসময়ই গোপন চুক্তি থাকে। এটি শুধুমাত্র তখনই প্রকাশিত হয়, যখন ঋণ নেয়া দেশটি ঋণ ফেরতে ব্যর্থ হয়। পায়রা বন্দরও এই ভয়াবহ পথে যেতে পারে।