হেইস ব্রাউন : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানে হামলা চালানোর জন্য অনুমোদন দিয়েও পরে তা বাতিল করার সংবাদটি যখন প্রকাশিত হয়েছে, তখন থেকেই পত্রিকাগুলো, বিশ্লেষকেরা, এমনকি সরকারি কর্মকর্তারা এর পেছনের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস–এ প্রথম ইরানে হামলা চালানোর অনুমোদনের খবরটি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ইরানের হামলায় একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা হামলা চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু গত শুক্রবার বিকেলে জানা গেল যে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির কথা বিবেচনা করে ট্রাম্প সেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। ট্রাম্পের এই হঠাৎ ইউটার্নের কারণ হিসেবে একাধিক তত্ত্ব বেরিয়ে এসেছে।
প্রথম কারণটি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র জানতে পেরেছে যে ইরানের নেতৃত্ব কখনোই মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার নির্দেশ দেয়নি। তেহরান বলেছে যে ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমায় ছিল, তাই তারা এটি ভূপাতিত করেছে। তবে মার্কিন প্রশাসন বলেছে, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক জলসীমার ওপর ছিল।
জ্যাক কিন নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল বলেছেন, ইরানের জাতীয় নেতৃত্ব যারা মার্কিন ড্রোনটি ভূপাতিত করেছে, তাদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ, তাঁরা চাননি যে কোনো ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হোক। এই খবরের ওপর ভিত্তি করে হয়তো ট্রাম্প হামলার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।
কেন ট্রাম্প ইরানে বোমা হামলা বাতিল করেছেন, সে ব্যাপারে দুজন মার্কিন কর্মকর্তা একটি সংবাদমাধ্যমকে সম্পূর্ণ ভিন্ন উত্তর দিয়েছেন। একজন বলেছেন, মার্কিন বোমারু বিমানগুলো হয়তো হামলার জন্য প্রস্তুত হতে পারেনি। এ জন্য হামলার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। অন্যজন বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের কথা চিন্তা করেই ট্রাম্প হামলা বাতিল করেছেন।
ডেইলি বিস্ট–এর খবর অনুযায়ী, ফক্স নিউজের উপস্থাপক টাকার কার্লসনের পরামর্শক্রমে ট্রাম্প হামলার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট–এর জশ রজিন টুইটারে লিখেছেন, বৃহস্পতিবার রাতে টাকার কার্লসনের অনুষ্ঠান দেখার পর ট্রাম্প ইরানের হামলা বাতিল করেছেন, এমন সামান্যতম জল্পনাও ওয়াশিংটনে নেই।
কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা মার্কিন প্রশাসনের ইরানের ওপর ‘সর্বাধিক চাপ’ প্রয়োগের বিষয়টি দেখেছি। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং মার্কিন সম্পদের ওপর আক্রমণ প্রতিরোধে মধ্যপ্রাচ্যে আরও মার্কিন সেনা মোতায়েন। ইরানের বিরুদ্ধে হরমুজ প্রণালির কাছে কয়েকটি ট্যাংকার জাহাজকে ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দেশটি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে ২০১৫ সালে করা পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন করে তারা ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করবে। কিছু বিশ্লেষক ইরানের কর্মকাণ্ডকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন ওই পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে এসব নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ইরানের ওপর সামরিক আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে খোদ ট্রাম্প প্রশাসনে বিতর্ক আছে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং সিআইএ পরিচালক জিনা হাস্পেল এই হামলার পক্ষে ছিলেন। পম্পেও এমনও বলেছেন যে ইরানের হামলার কারণে কোনো মার্কিন সেনার মৃত্যু হলে তার জবাব তাঁরা দেবেন। অন্যদিকে, এ ধরনের মিশন সম্পর্কে খুব একটা নিশ্চিত নন মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে। ট্রাম্প কয়েক বছর ধরে ইরানি শাসনের সমালোচনা করে আসছেন ঠিকই, কিন্তু আবারও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ শুরু করাটা তাঁর জন্য এখনো কঠিন।
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিবিষয়ক গবেষণার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল প্লেটকা বাজফিড নিউজের সঙ্গে একটি ফোন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পর্যবেক্ষকেরা বুঝতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসলে কীভাবে ইরানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্পর্কে চিন্তা করছেন। তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য যে ইরানিদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা, সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রজেক্টের প্রধান আলী ভায়েজ বাজফিড নিউজকে পাঠানো একটি ই-মেইল বার্তায় বলেছেন, ইরানিরা ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলগত বিভ্রান্তির বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন এবং তাঁরা এর সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তেহরানের বিষয়ে ট্রাম্পের ভুল হিসাব যুক্তরাষ্ট্রকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
তারপরও ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইরানে আঘাত হানা হতে পারে এমন খবর রয়েছে। যদি তা–ই হয়, তাহলে ইরান পাল্টা আঘাত হানবে না, তা কীভাবে নিশ্চিত হবে? ইরান হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র কী করবে? উত্তরটা একটু কঠিন বটে।
বাজফিড নিউজ থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
হেইস ব্রাউন: বাজফিড নিউজের সাংবাদিক