জাবেদ রহিম বিজন : সেখানে মানুষকে ডাকা হয় ‘গরু’ বলে। একইভাবে বেচাবিক্রিও হয় তারা। শিশুদের রাখা হয় খাবার না দিয়েই! হাসপাতালের চেহারা আবাসিক হোটেলের মতো। এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় এক হাজার টাকা। আর মুরগির মাংসের কেজি ৭০০ টাকা। এক কেজি পুঁটি মাছের দাম ১৬০০ টাকা। এক হাত জায়গার মূল্য ৩ হাজার টাকা। আর একটি কম্বল পেতে দিতে হয় ৫ হাজার টাকা।
এই ভিন্ন জগতের ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগার। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এখানকার অনিয়ম-দুর্নীতির এক ভয়াবহ চিত্র। এর সঙ্গে জড়িত ২৬ কারারক্ষীকে এরই মধ্যে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
বরখাস্ত করা হয়েছে আবদুল ওয়াহেদ নামে প্রধান কারারক্ষীকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতিসমূহ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্যে কারা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তিনি সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এই কমিটি গত ৬ই এপ্রিল ৫১ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্তে বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য
এবং জামিন বাণিজ্যের প্রমাণ মিলে। এ থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে এ টাকা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনে কারাগারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগঠিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বন্দি বেচাকেনার বিষয়ে বলা হয়- ‘কারাগারে যখন বন্দিদের প্রথম আনা হয় তখন তাদের একটি কক্ষে রাখা হয়। যাকে আমদানি কক্ষ বলা হয়। এই কক্ষে থাকা বন্দিদের বলা হয় ‘গরু’। আমদানি কক্ষ থেকে বন্দিদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এসকল ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করে পুরাতন বন্দি ও কারারক্ষীরা। ওয়ার্ড থেকে কেউ কেউ হাসপাতালে চিকিৎসার নামে বিক্রি হয়ে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে মাসে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান করতে হয়। হাসপাতাল ব্যতীত অপরাপর ওয়ার্ডে থাকতে গেলে ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বন্দিদের নিকট থেকে।
প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে নিয়ন্ত্রক থাকে। কারা কর্মকর্তাদের অর্থ দিয়ে এসব ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণ পুরনো বন্দিরা ক্রয় করে নেয়। যে সকল ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রকদের অর্থ প্রদান করতে কোনো বন্দি অক্ষম হয় বা অক্ষমতা প্রকাশ করে তখন বন্দিদের নির্যাতন করা হয়। তাদের ওয়ার্ডের বাথরুমে আটকে রাখা হয়। প্রতি ওয়ার্ডে এক হাত পরিমাণ জায়গা বরাদ্দের জন্যে ৩ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। ওয়ার্ডে মোটা কম্বল ও অতিরিক্ত কম্বল পেতে ৫ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। কারাগারে তল্লাশির সময় কোন গাঁজা, ইয়াবা বা অন্যকোনো প্রকার মাদকদ্রব্য পাওয়া গেলে তা বিনষ্ট না করে সর্ব প্রধান কারারক্ষী আবদুল ওয়াহেদের নিকট রাখা হয়। পরে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে এসকল মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে শাস্তি দেয়া হয়। মাদক কারা অভ্যন্তরে প্রবেশের ক্ষেত্রে গেট অর্ডারগন এবং কারা অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্যে গোয়েন্দা কারারক্ষীগণ সম্পৃক্ত থাকে।’
কারাগার থেকে সরবরাহকৃত খাবার অত্যধিক নিম্নমানের উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয় ‘বন্দিদের সরবরাহকৃত রুটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে প্রতিটি রুটি খাবার অযোগ্য। সিদ্ধ করা আটার রুটি কোনোভাবে গরম করে বন্দিদের দেয়া হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, কারাগারে মহিলা ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে মহিলা বন্দিদের সঙ্গে আনুমানিক ৬ থেকে দেড় বছর বয়সী দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিল। শিশুদের মায়েরা অভিযোগ করেন কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন শুধুমাত্র ছোট গ্লাসে একবার করে পানি মিশ্রিত নিম্নমানের দুধ শিশুদের দিয়ে থাকে। এছাড়া সারা দিনে আর কোনো খাবার দেয়া হয় না।’ প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, প্রধান কাররক্ষী আবদুল ওয়াহেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কারা হাসপাতাল থেকে দুধ তার মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় বলে স্বীকার করেন। এই অমানবিক আচরণে প্রধান কাররক্ষী আবদুল ওয়াহেদ জড়িত বলে প্রতিভাত হয়। এছাড়া কারাগারে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের সঙ্গে সর্বপ্রধান কারারক্ষী, ডেপুটি জেলার, জেলার এবং জেল সুপার সরাসরি জড়িত।
কারা ক্যান্টিনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয় ‘কারাগারের নিয়ন্ত্রণে ২টি ক্যান্টিন পরিচালনা হয়। একটি কারাগারের ভেতরে, অন্যটি বাইরে অবস্থিত। কারাগারের বাইরের ক্যান্টিনে কোনো মূল্য তালিকা পাওয়া যায়নি। পরে কারাগারের অভ্যন্তরের ক্যান্টিন জেলার ও জেল সুপারসহ পরিদর্শন করা হয়। ক্যান্টিনের পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক। ক্যান্টিনটিকে ছোটখাটো একটি বাজার বলে মনে হয়েছে। অসংখ্য বন্দি কেনাকাটার জন্যে ভিড় জমিয়েছে। একটি মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা থাকলেও সকল পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা ছিল না। ওয়ার্ডে গিয়ে ক্যান্টিন থেকে বিক্রীত পণ্য সামগ্রীর মূল্যের বিষয়ে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বন্দিগণ কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী পণ্য সামগ্রীর বিক্রয়মূল্যর তালিকা এবং কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারণকৃত মূল্য তালিকা প্রতিবেদনে পাশাপাশি উপস্থাপন করা হয়। যাতে দেখা যায় ২৫০ গ্রামের লেমন নামীয় পানির মূল্য ১৫ টাকা ধরা আছে। কিন্তু সেটি বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ টাকা। মাম দেড় লিটার ও ফ্রেশ ২ লিটার পানির মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ টাকা। আকিজ বিড়ি প্রতি প্যাকেট ১৪ টাকার স্থলে ৩০ টাকা, সাড়ে ৩ টাকার ছোট শ্যাম্পু ৭ টাকা, স্টার সিগারেট (ছোট প্যাকেট) ৯১ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা, বেনসন (ছোট প্যাকেট) ২০৯ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা, গোল্ডলিফ সিগারেট (বড় প্যাকেট) ১৪৮ টাকার স্থলে ২২০ টাকা, চিঁড়া প্রতি কেজি ৪৪ টাকার বদলে ১০০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৪৯ টাকার বদলে ১০০ টাকা, রুই মাছ এক কেজি ৩০০ টাকার বদলে ৭০০ টাকা, ডিম প্রতি পিস ৮ টাকার বদলে ২০ টাকা, আলু এক কেজি ২০ টাকার বদলে ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ টাকা কেজির বদলে ৪০০ টাকা, পেয়াজ প্রতি কেজি ২৪ টাকার বদলে ১২০ টাকা, সরিষার তেল ১৬ গ্রাম ১৬ টাকার স্থলে ৩৫ টাকা, ১০ গ্রাম গুঁড়া দুধ সাড়ে ১২ টাকার বদলে ৩০ টাকা, পুঁটি মাছ এক কেজি ২৫০-৩০০ টাকার বদলে ১৬০০ টাকা, ৩১ টাকা দামের ছোট লাক্স সাবান ৪০ টাকা, ১০ টাকার পরোটা ২০ টাকা, ১০ টাকায় বড় পুরির বদলে ছোট পুরি, ১০ টাকায় বড় লুচির পরিবর্তে ছোট লুচি, ১০ টাকায় বড় সিঙ্গাড়ার পরিবর্তে ছোট সিঙ্গাড়া, জর্দ্দা (ছোট) ১৭ টাকার বদলে ৩০ টাকা, সুপারি ৫০ গ্রাম ২০ টাকার স্থলে ৩৫ টাকা, ১১ টাকার রেজার ৩০ টাকা, ৩৮ টাকা দামের ছোট টুথপেস্ট ৬০ টাকা। এবিষয়ে প্রতিবেদনে আরো বলা হয় বন্দিগণ কর্তৃক ক্রয়কৃত মালামালের বিপরীতে মূল্য পিসি (প্রিজনার ক্যাশ) কার্ড থেকে কর্তন করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে শুভংকরের ফাঁকি হলো পিসি কার্ডে পণ্য সামগ্রীর কোনো বর্ণনা দেয়া থাকে না। শুধুমাত্র কর্তনকৃত মোট টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা থাকে। ফলে কোনো পণ্যের বিপরীতে পিসি কার্ড থেকে কত টাকা কর্তন করা হয়েছে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র মার্চ মাসে ক্যান্টিনের লাভ্যাংশ এবং অপরাপর উৎস থেকে কারাগারের আয় ছিল ৩১৮৬৬৯ টাকা। অথচ এ মাসে কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক খরচ করা হয়েছে ৩৩৪৪৫৭ টাকা। ক্যান্টিন পরিচালনার নীতিমালা অনুযায়ী ক্যান্টিন থেকে লাভ্যাংশের অর্থ কারারক্ষী এবং বন্দিদের কল্যাণে খরচ করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। প্রতি মাসেই খরচের ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিক বিধিবিধান ও পিপিআর ২০১৮ অনুসরণ করা হয়নি। জেলার এবং জেল সুপার ইচ্ছেম মাফিক কারা ক্যান্টিনের লাভ্যাংশ অর্থ খরচ করে থাকেন।
কারা হাসপাতালের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ব্যতিক্রমধর্মী মর্মে প্রতীয়মান হয়। হাসপাতালটিকে আবাসিক হোটেল বলে মনে হয়েছে। পরিদর্শনকালে তোলা হাসপাতালের ছবি পর্যালোচনা করলে বিষয়টি সহজেই অনুমেয় হবে। মাসিক ১০-২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল/প্রভাবশালী বন্দিরা হাসপাতালে অবস্থান করে হাসপাতালটিকে তাদের নিজস্ব বাসাবাড়িতে পরিণত করেছে। পরিদর্শনের সংবাদ পেয়ে ১২টি বেডের বন্দিরা পালিয়ে যায়। ৯ জন বন্দিকে হাসপাতালে পাওয়া যায়। হাসপাতালের বিছানায় ও যত্রতত্র বন্দিদের ব্যবহৃত মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কোনোভাবেই এটিকে হাসপাতাল বলা যায় না। হাসপাতালটিকে একটি আবাসিক মেস হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।’ প্রতিবেদনে বলা হয় কোর্টে হাজিরা দিয়ে বন্দিগণ কারাগারে ফেরত আসার সময় যদি তাদের সঙ্গে কোনো মালামাল থাকে তবে তা কারা ফটকে রেখে দেয়া হয়। কিছু অর্থ প্রদান করলে তা কারা অভ্যন্তরে নিয়ে যেতে দেয়া হয়। এমনকি বন্দিদের পরিধেয় জামা কাপড় কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হলেও টাকা দিতে হয়। প্রতিটি জামা-লুঙ্গি কারা অভ্যন্তরে নিতে ৩০ টাকা করে দিতে হয়। বন্দিদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজন কারাগারে দেখা-সাক্ষাৎ করতে এলে বিড়ম্বনার শেষ নেই বলেও উল্লেখ করা প্রতিবেদনে। অফিস কলের মাধ্যমে সাক্ষাৎ করার সময় অফিসে অবস্থানের জন্যে আত্মীয় স্বজনকে বন্দিপ্রতি ৫০০ টাকা দিতে হয় এবং কারা অভ্যন্তর থেকে জানালা দিয়ে কথা বলার জন্যে বন্দিকে ১০০ টাকা প্রদান করতে হয়।
দর্শনার্থী কক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে মসজিদের জন্যে ১০ টাকা এবং কারা অভ্যন্তর থেকে কথা বলার জন্যে বন্দিপ্রতি ১০০ টাকা দিতে হয়। অফিস কল এবং সাক্ষাৎকালে টাকা আদায়ের সঙ্গে সর্বপ্রধান কাররক্ষী, প্রধান কারারক্ষী সরাসরি জড়িত থেকে টাকা সংগ্রহ করে থাকে এবং পরবর্তীকালে এই টাকা ডেপুটি জেলার, জেলার এবং জেল সুপারের মধ্যে ভাগভাটোয়ারা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। এছাড়া সাক্ষাৎকালে সচ্ছল বন্দিদের মহিলা আত্মীয়দের ফোন নম্বর কারারক্ষীগণ কর্তৃক সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীকালে বন্দির মাধ্যমে টেলিফোন করে টাকা প্রদান না করলে নির্যাতন করা হবে মর্মে উল্লেখ করে বাড়ি থেকে অতিরিক্ত টাকা প্রেরণ করতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় যেসকল বন্দিরা আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে থাকে তাদের মুক্তি পেতে হলে অনেক বেগ পেতে হয়। অর্থ প্রদান না করলে জামিননামা আটকিয়ে রেখে বন্দিদের মুক্তি বিলম্বিত করা হয়। জামিননামার মাধ্যমে বন্দিদেরকে মুক্তি পেতে হলে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা কাররক্ষী হেলালের মাধ্যমে প্রদান করতে হয়।
বন্দিদের পিসি কার্ডের বিপরীতে আত্মীয়স্বজন কর্তৃক তাদের দৈনন্দিন খরচাদি মেটানোর জন্যে অর্থ জমা প্রদান করা হয়ে থাকে। পিসির টাকা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে ১০% হারে টাকা জেল সুপারের ড্রাইভার হিসেবে দায়িত্ব পালনরত কারারক্ষী এবং পিসি লেখার কাজে নিয়োজিত কারারক্ষীদের মাধ্যমে আদায় করা হয়ে থাকে। কারা অভ্যন্তর ও বাইরে উৎপাদিত শাকসবজি ঠিকাদারের মাধ্যমে সরবরাহ করে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘কারাগারের ভেতরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী ও খালি জায়গায় বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করা হয়ে থাকে। এছাড়া কারাগারের বাইরে বিদ্যমান জমিতে আলুসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। বন্দিদের দৈননন্দিন খাবারের জন্যে যে পরিমাণ সবজি প্রয়োজন হয় তার একটি অংশ উৎপাদিত এসকল সবজি থেকে মিটানো হয়ে থাকে। অবশিষ্ট সবজি ঠিকাদারের নিকট থেকে গ্রহণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রতিদিন চাহিদার বিপরীতে একটি অংশ কারাগারের উৎপাদিত ভাণ্ডার থেকে এবং অবশিষ্ট অংশ ঠিকাদার থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সকল বন্দিগণ এ মর্মে বক্তব্য প্রদান করেন যে তাদের খাবারে যে সবজি প্রদান করা হয় তা কারাগারের জমিতে উৎপাদিত সবজিসমূহ।
এক্ষেত্রে ঠিকাদারের নিকট থেকে কোনো সবজি গ্রহণ করা হয় না। মূলত প্রতিদিন ঠিকাদারের নিকট থেকে মাছ ও মাংশ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সবজির বিপরীতে সমস্ত অর্থ ঠিকাদারের মাধ্যমে জেলার এবং জেল সুপার কর্তৃক আত্মসাৎ করা হয়।’এই প্রতিবেদন দাখিলের পর তদন্ত কমিটির মতামত ও সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক মো. বজলুর রশিদ ৫ই মে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠান। যাতে ২৬ জন কারারক্ষীর নামের তালিকা দিয়ে তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে বদলিপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করত বলা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের জেলার এ জি মাহমুদ ২৬ জন কারারক্ষীর বদলির কথা স্বীকার করে জানান বেনামি দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। এই তদন্তের পর আইজি প্রিজনের নির্দেশে তাদের বদলি করা হয়েছে এবং একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জেলার আরো জানান, তার এবং জেল সুপারের বদলিরও প্রস্তাব হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ঝিনাইদহ জেলা কারাগার পরিদর্শন করে। ওই সকল কারাগারে একই ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয় তাদের কাছে।