বন্যা শুরুর এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। বরং পদ্মা ও যমুনায় পানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ফলে এসব নদী পারাপারে সঙ্কটে পড়ছে ফেরিসহ অন্যান্য যানবাহনগুলো। পানি বৃদ্ধি ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বানভাসি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও বেশির ভাগ মানুষ হাঁটুপানি, কোমর পানির মধ্যেই নিজেদের বসতভিটায় রয়ে গেছেন। তবে সব এলাকাতেই খাদ্য-পানি ও ওষুধের সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। ত্রাণের জন্য তাই হাহাকারও ক্রমে বাড়ছে। বন্যার পানিতে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, পাট, সবজিসহ ভিন্ন ফসলের ক্ষেত বিনষ্ট হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। এদিকে টাঙ্গাইলে বন্যার পানিতে ডুবে দুই বোন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বগুড়া অফিস জানায়, জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের ১২৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৩১ হাজার ৫৮৫টি পরিবারের ১ লাখ ২৪ হাজার ২২০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারিভাবে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। এ দিকে ধুনটের সহড়াবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশের রাস্তা ভেঙে দেড়শতাধিক বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত ২ হাজার ২৫০টি পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এবং ৬৫০টি পরিবার অন্যান্য স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তিন উপজেলার ৮৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টর জমির পাট, আউশ, শাকসবজি, মরিচ ও আমনবীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। বন্যায় ২ হাজার ৩৩০ টি ল্যাটট্রিন ও ২ হাজার ৭৩৬টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বেড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিপদসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নদীবেষ্টিত এলাকাগুলোতে ২২ হাজার ২১২টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পাঁচ উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দেড়লাখ মানুষ। জেলার প্রায় ছয় হাজার ৪০০ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমন,আউশ ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। অন্য দিকে, যমুনা নদীর প্রবল ¯্রােতে মঙ্গলবার রাতে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মেঘাই এলাকায় যমুনা নদী সংলগ্ন রিং বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ধসে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে পাঁচ শতাধিক পরিবারের মানুষ।
কাজিপুরে যমুনার পেটে গেল খাসরাজবাড়ী বাজার
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, চোখের সামনে ভাইসা গেল আমার দোকান ঘর। চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই কইরবার পারিলাম না। কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের খাসরাজবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী হোসেন আলী। বৃহস্পতিবার দুপুরে কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই ওই বাজারের হোসেন মিয়াসহ কোব্বাত, রহিম, নরু, মিথুনদের ব্যবসায়িক দোকান ঘরগুলো যমুনার পেটে চলে যায়।
খাসরাজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম জানান, তিন দিন ধরে ওই বাজারের ঘরগুলোতে পানি উঠেছিল। গতকাল দুপুরে ঘরগুলো নিচের দিকে দেবে যায়। ফলে ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ওই গ্রামের গ্রামপুলিশ কার্তিক চন্দ্র জানান, সকালে আমি কাজে বাড়ির বাইরে যাই। দুপুরে ফিরে এসে দেখি আমার বাড়ি নাই। দুই দিন আগে আমার পরিবারকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে ছিলাম বলে তারা রক্ষা পেয়েছে। ব্যবসায়ী কোব্বাত ব্যাপারি জানান, পানির নিচ দিয়ে কখন ভাঙন শুরু হয়েছে, তা বুঝতে পারিনি। ঘরের সাথে দোকানে মালামাল সব নদীতে ভেসে গেছে