মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন প্রিয়া সাহার স্বামী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মলয় সাহাও। এ লক্ষ্যে তিনি তিনবার ছুটির আবেদন দিয়েছিলেন। তবে দুদক প্রশাসন তার আবেদন মঞ্জুর করেনি। মলয় সাহার পাসপোর্টে মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্র সফরের সিল থাকায় গোপনে এখন তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।সূত্রটি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করে দেশ ও সরকার বিরোধী তৎপরতার বিষয়টি প্রিয়া সাহার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার ফসল। এ ধরণের তৎপরতার পর তিনি যদি দেশে ফিরতে না পারেন এ লক্ষ্যে স্বামী-সন্তানসহ ওই দেশেই থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো।
কারণ, সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে নালিশ জানানো এবং সহযোগিতার পর বাংলাদেশে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে- সেটি তিনি জানতেন। অত্যন্ত সচেতনভাবে প্রিয়া সাহা এটি করেছেন। এটির জের স্বামী মলয় সাহার ওপরও বর্তাবে- এটিও নিশ্চিত ছিলেন তিনি। ফলে প্রিয়া-কান্ডের পরপরই পর্দার অন্তরালে চলে যান মলয় সাহা। তার ব্যবহার্য মোবাইল নম্বরটি কখনো বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আবার কল হলেও ওই প্রান্ত থেকে কেউ ধরছে না। যাবতীয় তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও। শো করছে না ইমু আইডিও। এ ছাড়া সেগুনবাগিচাস্থ দুদক কার্যালয়ে তার কক্ষে গিয়েও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রিয়া সাহার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই অফিস করছেন না মলয় সাহা। কোনো ছুটিও নেননি। সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারির মুখে মুখে শুধু মলয় সাহা ও প্রিয়া সাহা । সেই সঙ্গে রয়েছে প্রিয়া সাহার প্রতি ধিক্কার ও ঘৃণা। বিশেষ করে প্রিয়া সাহার এ ঘটনার পর স্বামী মলয় সাহা দুদক কর্মকর্তা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আবারো নেতিবাচক ভাবে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। মলয় সাহা আত্মগোপনে থেকে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার মলয় সাহা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি দুদক প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা। এমনকি তার ঘনিষ্ট সহকর্মীরাও তার বিষয়ে কোনো কথা বলতে না রাজ।
এদিকে প্রিয়া এবং মলয়স সাহার দুই কন্যা প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষèী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করলেও বর্তমানে বাংলাদেশেই অবস্থান করছে বলে জানাগেছে। মলয় সাহা তাদের সঙ্গে নিয়েই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি আত্মগোপনে রয়েছেন। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছেন। যদিও মলয় সাহার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের অভিযোগ আনা হয়নি। কোনো মামলাও দায়ের হয়নি। তবে তার কাছ থেকে তথ্য উদ্ধার এবং সেই লক্ষ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা হন্যে হয়ে খুঁজছে বলে জানায় সূত্র।
‘শারি’ নামে বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে একটি এনজিওর পরিচালক হলেন প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয়া বালা বিশ্বাস। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।
তার বাবার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারী গ্রামে। শ্বশুর বাড়ি বৃহত্তর যশোরে। প্রিয়ার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুদকের সদর দফতরে উপপরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। তার দুই মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষ্মী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করেন।দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক তারা।অথচ আয়র উৎস তার স্বামীর সরকারের দেওয়া বেতন।এত টাকার মালিক তারা কিভাবে হলেন আয়ের কোন উৎস নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিরোজপুরের এক এনজিও কর্মী বলেন, হয়তো নিজের মেয়েদেরকে গ্রিনকার্ড পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রিয়া সাহা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে চরবানিয়ারীতে প্রিয়ার ভাই জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাসের একটি অব্যবহৃত ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তখন অভিযোগ ওঠে, পাশের বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান শামীম ঘরটি রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে একটি মন্দিরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেখানে শামীমের একটি মাছের ঘের রয়েছে। তখন পাল্টা অভিযোগ ওঠেছিল শামীমেরও তিনটি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় চিতলমারী এলাকায়।
পুলিশসহ প্রশাসন এবং পিরোজপুর ও নাজিরপুরের সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে বারবার গিয়ে অনুসন্ধান করে তখন ঘটনার কূলকিনারা পাননি। একপর্যায়ে ঘটনাটি আলোচনার বাইরে চলে যায়। ঘটনাটি নাটক বা সাজানো বলে প্রতিষ্ঠিত হয় পিরোজপুরে। তবে প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা হস্তক্ষেপ করায় পরবর্তীতে ঘটনার বিস্তার ঘটেনি বলে জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোসলেম।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত অসুস্থ থাকায় গত মঙ্গলবার রাতে প্রিয়া সাহা সংগঠনের প্রতিনিধি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। এরপর গত বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন।
ট্রাম্পের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ নিখোঁজ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’প্রিয়া সাহা বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করছে। তারা সব সময় রাজনৈতিকভাবে শেল্টার পায়। সব সময়।’
প্রিয়া সাহার ওই অভিযোগের ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমালোচনার ঝড় বইয়ে গেছে। কেউ কেউ এই ঘটনার পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুকে বলেন, ধর্মীয় সম্প্রতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। অনেকেই ব্যক্তি স্বার্থে বা না বুঝে এটার ক্ষতি করে ফেলেন। সবার উচিত এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা। প্রিয়া সাহা কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অভিযোগগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে।