বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে মাছধরার ওপর দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার, অর্থাৎ আজ বুধবার থেকে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবেন। কিন্তু এর আগেই জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাদের অভিযোগ, দুই মাসেরও বেশী সময় তারা সাগরে মাছ ধরতে পারেননি, কিন্তু সুযোগটি নিয়েছে ভারতীয় জেলেরা – তারা এ সময় বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় বরগুনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে নলিবাজার। বাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকাটি জেলে অধ্যুষিত।
এখানকার বেশিরভাগ মানুষ মূলত সাগরের মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভর।
সুটকেসে, বস্তায় আর হ্যান্ডবাগে শুধু ইলিশ
বাংলাদেশে বাড়ছে ইলিশ, মিয়ানমারে কেন কমছে
মাছ ধরার জন্য নৌকা নিয়ে সাগরে যেতে পারলে তাদের জীবিকা চলে, নতুবা জীবন থমকে যায়।
টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার সময় জেলেরা অলস সময় কাটিয়েছেন।
একজন জেলের স্ত্রী রেনু বেগম বলছিলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সময়টাতে তাঁর সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল।
“খাওয়া-দাওয়া চলাফেরায় সমস্যা হয়। এহন তো জাল বাইতে পারে না,” বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন রেনু আক্তার।
সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দেয়ার ব্যবস্থা নেয়।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, শুধু নিবন্ধিত জেলেরাই এই সহায়তা পাবে।
অন্যদিকে, ৬৫ দিনের জন্য ৪০ কেজি চাল নিতান্তই কম বলে জানালেন জেলে আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, বহু জেলে আছেন যারা সরকারের খাতায় নিজেদের নাম নিবন্ধন করাতে পারেননি।
“আমি যখন মাছ ধরতে সাগরে গেছি, তখন কার্ড কইরা ওরা চইল্যা গেছে। এই রকম আমার মতো হাজার-হাজার জেলে আছে কার্ড করতে পারে নাই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আব্দুর রাজ্জাক।
জেলা মৎস্য অফিসের হিসেব অনুযায়ী, বরগুনায় ৪৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে আছে।
তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।
মৎস্য আহরণের সাথে জড়িতরা বলছেন, ভারতে যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ থাকা উচিত।
বরগুনা জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম দাবি তোলেন, ভারতের সাথে মিল রেখে এই ‘অবরোধ’ কার্যকর করা হোক।
“ভারতে বাংলা পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০শে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত মাছ ধরার উপরে অবরোধ। আমাদের এখানে মাছ ধরার উপর অবরোধ ৬ই জ্যৈষ্ঠ থেকে ১০ই শ্রাবণ। বঙ্গোপসাগর একটাই। সাগরে তো কোন ওয়াল দেয়া নাই যে ইলিশ মাছ ওপাশে যাবে না,” বলছিলেন নজরুল ইসলাম।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, একই বঙ্গোপসাগরে দুই রকমের নিয়ম হয় কিভাবে?
তবে বরগুনা জেলার মৎস্য অফিস বলছে, বিচার-বিশ্লেষণ করেই এ সময়টিতে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জেলেদের অভিযোগ হচ্ছে, বাংলাদেশের সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ অংশে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোবসাগরে ৩২টি ভারতীয় ট্রলারসহ ৫০০ জেলে আটক করা হয়েছিল। এ খবর প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
বরগুনার ট্রলার মালিক এবং জেলেরা তাদের অভিযোগ জানাতে এ বিষয়টির কথা উল্লেখ করছেন।
ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে?
কিন্তু পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ঝড়ের কবলে পড়ে তারা বাংলাদেশের জলসীমা এসেছিলেন।
তবে ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশে এসে মাছ ধরার বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে বলে জানান বরগুনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।
এক্ষেত্রে কোস্ট গার্ড এবং নৌবাহিনী সজাগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
কর্মকর্তারা বলছেন, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়টি ২০১৫ সাল থেকে শুরু হলেও চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এই সময়টিতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার কারণে মাছের উৎপাদন বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন বরগুনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মি. আজাদ।