সাধ করে কেউ দেশ ত্যাগ করে না বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।
শনিবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সুলতানা কামলা বলেন, সাধ করে কেউ দেশ ত্যাগ করে না। জীবন ও সম্পদের ওপর যখন হুমকির সৃষ্টি হয়, তখনই মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে এমন হওয়ার কথা ছিল না।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের ঘটনার বিচার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সুলতানা কামাল জানান, গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনজন আদিবাসি সাঁওতাল নিহত হয়েছিলেন। ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে এই সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর লোকদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এরপর প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। সেই হত্যার কোনো বিচার হয়নি।
তিনি জানান, উচ্ছেদের শিকার ব্যক্তিরা নিজ ভিটেতে ফিরতে পারেননি। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা আজও প্রত্যাহার হয়নি। ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়নি। সরকার চাইলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো। কিন্তু বাস্তবতা বলছে এই ঘটনার বিচারে রাষ্ট্রের অনীহা রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, রংপুর চিনিকল স্থাপন ও আখ চাষ করতে ১৯৬২ সালে বাগদা ফার্ম এলাকার ১ হাজার ৮৪০ একর জমি অধিকরণ করা হয়। এসব ছিল স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালিদের ভোগদখলীয় সম্পত্তি। চুক্তি ছিল, যে কাজের (আখ চাষ) জন্য জমি নেওয়া হয়েছে তা না করা হলে আগের মালিকদের ক্ষতিপূরণসহ ভূমি ফেরত দিতে হবে।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালে রংপুর চিনিকল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কর্তৃপক্ষ প্রকৃত মালিকদের কাছে জমি ফেরত না দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে তা লিজ দেয়। জমি ফেরত পেতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আন্দোলন শুরু করে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরে উচ্ছেদের নামে সাঁওতাল ও বাঙালিদের পরিবারে হামলা করা হয়।
ফিলিমন বাস্কে বলেন, ওই ঘটনার পর হাইকোর্ট মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন। কিন্তু আড়াই বছর হলেও তদন্তের কাজ শেষ হয়নি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই জেলার এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার মামলায় তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। তাহলে এ মামলার তদন্ত আড়াই বছরেও শেষ হচ্ছে না কেন?’
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের প্রধান আইন উপদেষ্টা সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, গোবিন্দগঞ্জের এই ইস্যুতে সরকার চুপ করে আছে। সবাই এই ঘটনার বিচার চায়। এটা মনাবিক অধিকারের প্রশ্ন। সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করুক।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, এ ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। সরকার তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, বাগদা ফার্মের সাঁওতালদের জমি একর পতি ১ হাজার ৮০০ টাকা করে লিজ দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালীদের কাছে। তার আবার সাবলিজ দিয়েছে ৩০ হাজার টাকা করে। এভাবে শতকোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। এই বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান প্রয়োজন।
ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সুবল হেমব্রম ও প্রিসিলা মুর্মু অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা শিক্ষা, চিকিৎসা বাসস্থানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এখনো তুলে নেওয়া হয়নি।
দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। আগুনে পুড়ে যাওয়া আদিবাসীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনঃস্থাপনের জন্য দুজনেই সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।