প্রিয়া সাহার মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াবে না সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সুসম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ জটিলতা বিবেচনা করে গত ১৯ জুলাই হোয়াইট হাউজে প্রিয়া সাহার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলাপের বিষয়ে সরকার বাড়াবাড়ি করতে চায় না। নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে প্রিয়া সাহা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ থেকে ৩.৭ কোটি সংখ্যালঘু ‘উধাও’ হয়ে গেছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে ওই আলাপের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলে। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য সরকার ওই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায়।
গত বুধবার (২৪ জুলাই) দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, তার ধারণা সরকার বিষয়টি উপেক্ষা করবে। কারণ, দেশে অনেকে অনেক কিছু বলে, কিন্তু এর জন্য তাদের হয়রানি করা হয় না।
সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ইতিবাচক বৈষম্য নীতি অনুসরণ করছে বর্তমান সরকার।’
এ কারণে এখন আগের থেকে অনেক বেশি নারী বা সংখ্যালঘু ব্যক্তি সচিব হচ্ছেন এবং এই পদমর্যাদা তাদের সম্প্রদায়ের জন্য একটি নিরাপত্তা হিসাবেও কাজ করে থাকে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য বুয়েট বা মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সংরক্ষিত আসন আছে এবং এর মাধ্যমে তারা দেশের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ার সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য এগুলো হচ্ছে সরকারের এফারমেটিভ অ্যাকশন এবং এই প্রেক্ষাপটে প্রিয়া সাহার বক্তব্য ঠিক নয়।’
মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ভালো আছেন বলে জানান তিনি।
অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এই বিষয়টিতে আমরা জটিলতা সৃষ্টি করতে দেবো না। আমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।’
গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) ঢাকায় ফিরে আসার পর পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রিয়া সাহার হোয়াইট হাউজে যাওয়াটা কোনও দুর্ঘটনা নয়। এটা আমরা বুঝি, কিন্তু বিষয়টি উপেক্ষা করবো।’
দলিত সম্প্রদায়ের অধিকারভিত্তিক সংস্থা ‘শারি’র পরিচালক প্রিয়া সাহা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এই ঘটনার পরে তার পদ সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়। তিনি গত ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ধর্মীয় স্বাধীনতা শীর্ষক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন।