নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ৪ চিকিৎসক। চিকিৎসা সংকটের কারণে ভেঙ্গে পরেছে চিকিৎসা সেবা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মেডিক্যাল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও সহকারী সার্জনসহ ১৮ জনের পদ বিদ্যমান। কিন্তু আছেন শুধু ২জন মেডিক্যাল অফিসার, একজন ডেন্টাল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসকের গুরুত্বপূর্ণ ১৪ টি পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য।
শূন্য পদগুলো হলো আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ১জন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ১জন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ১জন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ১জন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এনেসথেসিয়া) ১জন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ১জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১জন, মিডওয়াইফ ২জন, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ডেন্টাল) ১জন, সহকারী সেবক ১জন, ওয়ার্ড বয় ১জন,ও এম,এল,এস,এস ২জন। এছাড়াও বাবুর্চী ১জন, সহকারী বাবুর্চী ১জন, মালী ১জন, নিরাপত্তা পহরী ১জন ও সুইপার ১জন।
ফলে একদিকে যেমন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে মফ:স্বল এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তাদের কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ১৯৮৪ইং সালে উপজেলা সদরের পশ্চিম বালুভরা মৌজায় ৬.২৫ একর জমি সরকার ক্রয় করে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নত করে তিন তলা ভবন নির্মাণ শেষে গত ২০১২ইং সালে হস্তান্তর করা হয়।
হাসপাতাল পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে এবং আন্ত:বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। সব চাইতে বড় কথা হচ্ছে রাণীনগর উপজেলায় প্রায় ২ লক্ষাধিক জনসংখ্যা রয়েছে। অথচ এই হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ৪ জন। আবাসিক, মেডিক্যাল, ডেন্টাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিলে মাত্র ৪ জন ডাক্তার দিয়ে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চলতি মাসে নওগাঁ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ায় গড়ে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক চিকিৎসা প্রদান করছেন। আর ১ জন মেডিক্যাল অফিসারকে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কোন রকমে জরুরী চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে ছোট-খাট, কাটা-ছেঁড়া ব্যান্ডিস ছাড়া এখানে বড় ধরনের রোগ বা কোন অপারেশন কিম্বা চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া ওষুধ সংকট তো লেগেই আছে। হাসপাতালে একটি মাত্র পুরাতন এক্সরে মেশিন থাকলেও ফিল্মের বরাদ্দ না থাকায় মেশিনটাও ঝিঁমিয়ে পরে আছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মকবুল হোসেন (৬০), জামাল উদ্দিন (৬৪), খুকি বেওয়া (৬৬ ) ফাতেমা বেওয়া (৬০)সহ অন্যান্য রোগীরা জানান, প্রতিদিন সকাল ১০ লাগাদ একবার ডাক্তার এসে চিকিৎসা দিয়ে চলে যান। এরপর সারাদিন, রাতে কোন ডাক্তারের দেখা মিলেনা। ফলে ডিউটিরত সেবিকা দিয়েই চলে সার্বিকচিকিৎসা। এছাড়াও ওষুধ ঠিকমত দেয়া হয়না হাসপাতাল থেকে। অধিকাংশ ওষুধই বাহিরে থেকে কিনতে হয়।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কে এইচ এম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, হাসাপাতালে ১৮টি পদের মধ্যে ১৪টি পদ শুণ্য রয়েছে। হাসপাতালের তীব্র জনবল সঙ্কট থাকার পরও টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে জনসাধারণকে সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। আমি নিজেও প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে রোগী দেখি।আসা করছি চলতি বছরের শেষ লাগাদ নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হলে এসমস্যা কেটে যাবে। এছাড়া ওষুধ সংকট আগে যে পরিমাণ ছিল তা থেকে বর্তমানে অনেকটা উন্নত হয়েছে।