ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের ব্যার্থতার কথা উল্ল্যেখ করে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রের পদত্যাগের দাবি করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন সসমন্বিতভাবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতো তবে এই ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করত না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা জজ কোর্ট এর গেটের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণার জন্য ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকলেও সেটি আর হয়নি। ঢাকা জজকোর্টের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশের অনুমিত না মেলায় র্যালিটি করা সম্ভব হয়নি বলে দাবী বিএনপি নেতাদের। অনুষ্ঠানে খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, এই সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য এবং জনগণকে সচেতন করার জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আজ একটি র্যালীর আয়োজন করেছিল। কিন্তু আমাদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে প্রশাসন পালন করতে না দেয়ায় আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তখনো ডেঙ্গু ছিল। আমরা তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশন সমন্বিতভাবে প্রোগ্রাম করেছি। আমি প্রত্যেক সিজনের পূর্বে সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সভা করে কৌশল নির্ধারণ করেছি এবং আমরা সফলও হয়েছি। তিনি বলেন, তখনও ডেঙ্গু ছিল কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা যেহেতু সচেতন ছিলাম তাই ডেঙ্গু এত মহামারী আকার ধারণ করতে পারেনি। তাই আজকে আমরা মনে করি এই সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুটি সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থ। তারা সময় মতো এডিস মশাকে নিধন করতে পারেনি যার জন্য আজকে এই ডেঙ্গু মহামারীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, এখনো দুই মাস সামনে রয়েছে। আমরা রাজনীতি করি সেই দায়িত্ববোধ থেকে আমরা সারা বাংলাদেশে জনগণকে সচেতন করার জন্য এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এখনো যদি জনগণ সচেতন হয়, যার যার বাড়িতে স্বচ্ছ পানি আটকে থাকে সেই পানি যদি তারা বিনষ্ট করে দেয় এবং সরকার এখনও যদি সচেষ্ট হয় তাহলে এখনো এটাকে কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, সরকারি যেসব অফিস-আদালত আছে তার ছাদের কেউ খবর রাখে না। এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সিনিয়র সদস্য বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আমরা শুনেছি যে মশা নিধনের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে আইসিডি-টিআরবি গত মার্চ মাসেই বলেছে এগুলোর কার্যকারিতা নেই। কার্যকর ওষুধ আনার জন্য হাইকোর্ট থেকে বলা হয়েছে। কালকেও জানতে চাওয়া হয়েছে কত দিনের মধ্যে কার্যকর ঔষুধ আনা হবে? তিনি বলেন, আজকে এই যে সরকারের ব্যর্থতা এবং তাদের যে উদাসীনতা এর জন্য এই ডেঙ্গু মশা আজকে বিরাট মহামারীর আকার ধারণ করেছে। আমরা এর জন্য দায়ী করি সরকারকে এর জন্য দায়ী করি সিটি করপোরেশনকে। আমাদের দাবি যত শীঘ্রই আধুনিক কার্যকর ঔষধ এনে যথাযথভাবে ছিটিয়ে এই এডিস মশাকে নিশ্চিহ্ন করা প্রয়োজন। এ বছর যদি এটা করা সম্ভব না হয় তবে আগামী বছরও এই এডিস মশার ডিম থেকে যাবে এবং একই অবস্থা হতে পারে। তাই আমরা অতিদ্রুত কার্যকর ওষুধ এনে এই এডিস মশাকে নিধন করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। তাই জনগণের প্রতি এই সরকারের দায়বদ্ধতা নেই। তাই এই বন্যা এবং ডেঙ্গুর সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশে। এ থেকে বুঝা যায় সরকার কত অবহেলা এবং উদাসীন এ ব্যাপারে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি এ দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন। সকল প্রকার সংকট থেকে উত্তোরণ চাইলে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এই গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে এদেশকে সকল সংকট থেকে মুক্ত করবো ইনশাআল্লাহ।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, ঢাকা মহানগর শ্রমিকদলের সহ-সভাপতি সুমন ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বাদল প্রমুখ।