আল্লাহর কুদরতের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। তিনি যেমন অসীম ও অনন্ত, তাঁর নিদর্শনাবলির শেষ বলতে কিছু নেই। আল্লাহর কুদরতের বিস্ময়কর নিদর্শন হলো জমজমের পানি। পৃথিবীর জমিনের সর্বোৎকৃষ্ট পানি হলো জমজমের পানি। এ পানি যেমন পবিত্র, তেমনি বরকতময় ও সুস্বাদু। জমজমের পানি খাওয়ার স্বাদ কখনো মিটে না। জমজমের পানি পানে শুধু তৃষ্ণাই মিটে না; বরং ক্ষুধা নিবারণ হয়, রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হজরত রাসূল সা: সব সময় জমজমের পানি সাথে রাখতেন। তিনি নিজে জমজমের পানি পান করতে পছন্দ করতেন। রোগ বিমারের দাওয়াই হিসেবে অন্যদের জমজমের পানি পান করতে বলতেন। হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘রাসূল সা: জমজমের পানি পান করতেন। সফরে বের হলে জমজমের পানি সাথে রাখতেন। এ পানি অসুস্থদের ওপর ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন’ (সুনানে তিরিমিজি ও বায়হাকি)।
পবিত্র কাবাঘর থেকে মাত্র ২১ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে জমজম কূপের অবস্থান। আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে হজরত ইবরাহিম আ: আল্লাহর নির্দেশে নিজের স্ত্রী হাজেরা আ: এবং শিশুপুত্র ইসমাঈল আ:-কে মক্কার ফারান পাহাড়ের পাদদেশে এক জনমানবহীন স্থানে নির্বাসন দেন। হজরত ইবরাহিম আ: প্রিয়তমা স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে বিরান মরুভূমির পাহাড়ের পাদদেশে রেখে সামান্য আহার সামগ্রী সাথে দিয়ে ফেরত চলে আসেন। ওই সময়কালে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত বিবি হাজেরা আ: এবং হজরত ইসমাঈল আ:-এর আশপাশে দ্বিতীয় কেউ ছিল না। হজরত ইবরাহিম আ:-এর রেখে যাওয়া সামান্য আহার সামগ্রী শেষ হয়ে যাওয়ার পর; কোনো একসময় হজরত ইসমাঈল আ: পানির পিপাসায় কান্নাকাটি করতে থাকেন। বিবি হাজেরা শিশুপুত্রের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানির খোঁজে চারিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। বিবি হাজেরা আ: পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সাতবার ছুটাছুটি করেছেন। কোথাও কোনো পানির সন্ধান পাননি। অবশেষে পানির খোঁজে ব্যর্থ হয়ে শিশুপুত্রের কাছে ফিরে আসেন। হঠাৎ করে বিবি হাজেরা দেখতে পান, শিশুপুত্রের পায়ের গোড়ালির ঘষাতে আল্লাহর হুকুমে নিচ থেকে পানি উঠছে এবং একটি ঝর্ণার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ঝর্ণাটি পরবর্তীকালে জমজম কূপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
জমজম কূপের পানি আল্লাহর কুদরতের এক বিস্ময়কর নিদর্শন। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব হাজী সাহেবরা হজ করতে যান, তারা নিজেরা জমজমের পানি পান করে থাকেন এবং দেশে ফেরার পথে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের জন্য জমজমের পানি নিয়ে আসেন। আল্লাহ তায়ালার তৌহিদের বিস্ময়কর নিদর্শন এ কূপের পানি উত্তোলন শেষে, মাত্র ১১ মিনিটে কূপটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। জমজম কূপের সৃষ্টি থেকে আজো পানির স্বাদ, গন্ধ ও গুণাগুণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। জমজমের পানিতে ফ্লুরাইডের পরিমাণ বেশি থাকায় এ পানিতে কোনো জীবাণুু জন্মাতে পারে না। আজ পর্যন্ত জমজমের পানিতে একটি ছত্রাক কিংবা শৈবালও জন্মায়নি। অলৌকিকভাবে জমজমের পানি পরিশোধন হয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা জমজম কূপের পানি রহস্যে উদঘাটনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না।
জমজমের পানি সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস এবং বর্ণনায় এসেছে, যে উদ্দেশ্যে নিয়ে জমজমের পানি পান করবে, আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির ইচ্ছা পূরণ করে দেন। হাজী সাহেবদের অনেকে জমজমের পানি রোগ-বিমার থেকে আরোগ্য উদ্দেশে পান করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা হাজী সাহেবদের অনেকেরই শেফা দান করেছেন। তাদের ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছেন।