ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী অক্টোবরে দেশটিতে সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বাংলাদেশ সরকারের আশা, শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ভারত সফরকে সফল করার জন্য দুই দেশের কর্মকর্তারা দ্রুততার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত এক মাসে অন্যান্য বৈঠকের পাশাপাশি দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পানি সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে পানি সচিবদের বৈঠক আট বছর পর অনুষ্ঠিত হলো। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরও আগামী সোমবার ঢাকায় আসছেন। এটি মন্ত্রী হিসেবে জয়শংকরের প্রথম ঢাকা সফর। এর আগে পররাষ্ট্র সচিব থাকাকালীন তিনি একাধিকবার ঢাকা সফর করেন। দুই দেশের অগ্রাধিকার ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার জন্য আগামী মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং জয়শংকর আলোচনায় বসবেন।
সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশই একে অপরের চাহিদা ভালোমতো বুঝতে চায়। কারণ উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতারা জানেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রতিবন্ধকতা আসবেই।’ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়াটা সমস্যা নয়, কিন্তু সমাধানের জন্য মনোবৃত্তি না থাকাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং, যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
উদাহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নেয়। ওই সময় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে সামনে এগোনো যায় তা বুঝতে অনেক কর্মকর্তার অসুবিধা হচ্ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারণে পরে এই সমস্যা কেটে যায়।
তিনি বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ এবং এজন্য রাজনৈতিক বোঝাপড়া অত্যন্ত জরুরি।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান দুরূহ মন্তব্য করে তিনি বলেন, উভয় দেশের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি আছে।’ সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিন্তু ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সম্পর্ক ভালো হওয়ার কারণে সীমানা নির্ধারণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ও সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।’
পানি
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানির ন্যায্যবণ্টন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। আট বছর পরে দুই দেশের মধ্যে পানি সচিব পর্যায়ের বৈঠক এমাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের ভালো-মন্দ যাচাইয়ের জন্য একটি যৌথ কমিটি এ বছরের মধ্যে গঠন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া, সাতটি যৌথ নদীর পানি প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্লেষণ করে পানি বণ্টনের চুক্তির খসড়া তৈরি করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নদীগুলো হচ্ছে মনু, ফেনী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার ও মুহুরি।
এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিটি নদীর জন্য আলাদা আলাদা চুক্তি হবে। তবে কবে হবে, এটি এখন বলা যাবে না।’
এই কর্মকর্তা আরও জানান, তিস্তা নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। এটি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, আমরা কাজ করছি এবং বাকিটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করবে। ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তির আলোচনা শেষ করে ঢাকা ও দিল্লি। কিন্তু গত আট বছরেও ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে এটিতে স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি।
আসাম সমস্যা
আসামে জাতীয় নিবন্ধন কার্ড একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানকার মানুষের সমর্থন আদায় করার জন্য প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ কার্ড’ ব্যবহার করে থাকে। এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকা অবগত আছে, আসামে ৪০ লাখ ভারতীয় নাগরিকের এখনও নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু আমরা এই সমস্যাকে সীমান্ত পার হতে দেবো না।’
তিনি বলেন, ভারতের শাসক দল বিজেপিসহ অন্য রাজনৈতিক নেতারা অভিযোগ করেন, অনেক বাংলাদেশি সীমান্ত অতিক্রম করে আসামে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।
এই কর্মকর্তা জানান, এই বিষয় নিয়ে মতানৈক্য থাকায় গত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। তবে পরবর্তী সময়ে ভারতের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়ের উল্লেখ থাকার কারণে বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ করে।