ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ এবার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস) তুলবে পাকিস্তান। মঙ্গলবার পাকিস্তান সরকার এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যুটি আমরা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব আইনি বিষয় বিবেচনায় নেয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওদিকে আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তথ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফিরদৌস আশিক আওয়ান মন্ত্রীপষিদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি ওই আদালতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ। এ নিয়ে অভিযোগে পাকিস্তান গুরুত্ব দেবে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস হলো জাতিসংঘের বিচারিক অঙ্গ। জাতিসংঘ সনদের অধীনে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই আদালত। কাজ শুরু করে ১৯৪৬ সালের এপ্রিলে। এ আদালতকে ওয়ার্ল্ড কোর্ট নামেও অভিহিত করা হয়। এই আদালতের অবস্থান নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে পিস প্যালেসে। জাতিসংঘের মূল ৬টি অঙ্গ। তার মধ্যে শুধু এই ওয়ার্ল্ড কোর্টই নিউ ইয়র্কের বাইরে অবস্থিত। এই আদালতের ভূমিকা হলো, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে রাষ্ট্রগুলো উত্থাপিত আইনি বিরোধ মিটিয়ে দেয়া, আইনি প্রশ্নে পরামর্শ দেয়া। এই আদালতে আছেন ১৫ জন বিচারক। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন ও নিরাপত্তা পরিষদ এসব বিচারককে ৯ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করে।
ফিরদৌস আশিক আওয়ান বলেছেন, জাতিসংঘের এই শীর্ষ আদালতে পাকিস্তানের পক্ষে মামলা লড়বেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীদের একটি প্যানেল। উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্ট একতরফাভাবে জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার। সাত দশক ওই সুবিধা ভোগ করলেও আকস্মিকভাবে সরকার ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। তারা কাশ্মীরে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে। সাবেক দু’জন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর ফারুক সহ নির্বাচিত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে। ভারত সরকার তার সংবিধান থেকে বাতিল করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ। এর ফলে কাশ্মীরের জমিজমার অধিকার ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষ ভোগ করতে পারবে। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। বিয়ে করতে পারবে কাশ্মীরে। কাশ্মীর মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু সরকার তার পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সেই জনসংখ্যাতত্ত্বকে পাল্টে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এসব সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। তারা ইসলামাবাদে নিয়োগ করা ভারতীয় হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়াকে বহিষ্কার করেছে। স্থগিত করেছে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য। কাশ্মীর ইস্যুটি নিয়ে গেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। এতে তাদেরকে সমর্থন করেছে চীন। ওদিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবসকে পাকিস্তান পালন করেছে কালোদিবস হিসেবে। অন্যদিকে কাশ্মীরি জনগণের কণ্ঠকে বিশ্বের প্রতিটি ফোরামে তুলে ধরার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ ইস্যুতে নীরব থাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।