জাতীয় কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত সাংগঠনিক কাজে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি মনিটর করছে বিএনপি। বিশেষ করে বিগত নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থী ও মনোনয়নের প্রাথমিক চিঠি পাওয়া নেতাদের সক্রিয়তা-নিষ্ক্রিয়তা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামীতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বলয়ের সুযোগ না রাখতেই এই পথ বেছে নিয়েছে হাইকমান্ড।
বিএনপির সূত্র মতে, জাতীয় নির্বাচনে অনাকাক্সিক্ষত ফলাফলের পর অধিকাংশ নেতাকর্মী এক ধরনের হতাশা থেকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে বিএনপির টিকিটে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্র্থী, মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাকেই দলীয় কোনো কর্মসূচিতে পাওয়া যায়নি। মানববন্ধনের মতো সাদামাটা কর্মসূচিতে দেখা যায়নি নেতাদের। সম্প্রতি ডেঙ্গু সচেতনতায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে ঢাকার বিএনপির প্রার্থীদের মাঠে থেকে কর্মসূচি সফল করার কথা বলা হলেও হাতেগোনা ২-৩ জনের বেশি প্রার্থীকে কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। সঙ্গত কারণে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরে আছে অসংখ্য পোস্টার, লিফলেট। এর বাইরে আসন্ন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতির কার্যক্রমেও পাওয়া যাচ্ছে না অনেককেই।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, একযুগ ধরে নির্যাতন, হামলা-মামলার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা আছে। নির্বাচনের পরে তা আরো বেড়েছে। এ সময়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এবং ধানের শীষের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা যদি সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতো, তাহলে কর্মীদের মধ্যে হতাশা কমিয়ে তাদের চাঙ্গা করা সম্ভব হতো। কিন্তু তাদের নিষ্ক্রিয়তায় দলে চাপ আরো বেড়েছে। এ জন্য সাবাইকে সক্রিয় করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। কাউন্সিল সামনে রেখে সব নেতাকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিগুলোতে কারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন এবং কারা নিষ্ক্রিয় আছে তা মনিটরিং করছেন খোদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে জেলা-উপজেলাসহ কেদ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সক্রিয় অংশ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশসহ প্রতিটি কর্মসূচিতে যারা সক্রিয় থাকবেন না তাদের বিষয়ে নতুন করে ভাবারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে দীর্ঘদিন যেসব এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই সেসব জায়গায় নেতৃত্ব পরিবর্তন করা হবে। দলীয় কর্মকাণ্ডে গতি আনতে যোগ্য, ত্যাগী নেতাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড না থাকায় জেলা-উপজেলাসহ প্রায় সব পর্যায়ে একটি তালিকা করা হচ্ছে। এসব স্থানে কারা নিষ্ক্রিয় তাদেরও তালিকা হচ্ছে। যেসব ইউনিটে দীর্ঘদিন কমিটি পুনর্গঠন হচ্ছে না সেগুলো দ্রুত পুনর্গঠন করা হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগীদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে। যাতে দল নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। শুধু মূল দল নয়, অঙ্গসংগঠনগুলোও পুনর্গঠন করা হবে। আর এখনই যেসব সংগঠন পুনর্গঠন করা যাচ্ছে না সেসব স্থানে বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠন করে শূন্যস্থান পূরণ করা হবে। এর অংশ হিসেবে মহিলা দল থাকা সত্ত্বেও দলীয় নেতাদের নেতৃত্বেই শুক্রবার নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামে জাতীয় কমিটি গঠন করেছে বিএনপি।
সূত্র মতে, নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে সক্রিয়দের নেতৃত্ব আনতে চলতি বছরেই জাতীয় কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ডিসেম্বরে দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তা করা হচ্ছে। সে জন্য দ্রুত সাংগঠনিক জেলা শাখা পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন কমিটিতে উচ্চ পদগুলোতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা কাদের আনা যায় তা নিয়েও চলছে গবেষণা।
বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি ও নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করার পরিকল্পনার বিষযে দলের একাধিক নেতা জানান, ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করতে চাইছে দলের হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিভাগের পর বড় জেলাগুলোতে সমাবেশ করা হবে। একই সঙ্গে বিগত আন্দোলনে মামলা-হামলাসহ নানা কারণে যেসব নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সরাসরি সহযোগিতা করা হবে। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। নিহতের পাশাপাশি আহত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশ সফর করবেন। এসব কর্মসূচি পালনে কোন নেতারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন তাও মনিটরিং করা হবে।
নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা আছে। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে নেতাকর্মীরা আবারো উজ্জীবিত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠক : দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল ৫টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, তার মুক্তি ও সুচিকিৎসা, ছাত্রদলের কাউন্সিল, বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পুনর্গঠন, ডেঙ্গু ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।