২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সহায়তা দিয়ে আসছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য কাজ করছে। এর মধ্যে সরকার ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গেও জড়িত। গত বছরের ১৫ নভেম্বর এবং এ বছরের ২২ আগস্ট দুই দফা প্রত্যাবাসন চেষ্টায় রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে রাজি কিনা, তা দেখার দয়িত্ব ছিল ইউএনএইচসিআরের।
রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দুই দফা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) তৈরি করেছিল জাতিসংঘ। এটি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বের কাছ থেকে তহবিলও সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথম জেআরপিতে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান এবং দ্বিতীয় জেআরপিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম তহবিল সংগ্রহের জন্য বিশ্বের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। ২০২০ সালের জন্য জেআরপি তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এবার ওই পরিকল্পনা তৈরির জন্য বাংলাদেশ নির্দিষ্ট একটি গাইডলাইন দিয়েছে। সরকার জাতিসংঘকে বলেছে, ওই গাইডলাইন অনুযায়ী জেআরপি তৈরি না হলে তহবিল সংগ্রহে বাংলাদেশ আর অংশ নেবে না।
জাতিসংঘের যেসব সংস্থা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কাজ করছে তাদের নিয়ে সরকার গত মাসে একটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে ওই গাইডলাইনের বিষয়ে জাতিসংঘকে জানানো হয়। এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘসহ সবাই কাজ করছে। এই কাজগুলোর মধ্যে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। তা না হলে বাড়তি সমস্যা তৈরি হতে পারে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কক্সবাজারে ছোট একটি জায়গায় প্রচুর রোহিঙ্গা থাকছে যা তাদের জন্য ভালো না। রোহিঙ্গাদের সুবিধার জন্য আমরা আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে ভাষানচরে তাদের জন্য আবাসস্থল বানিয়েছি। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের কর্মপরিকল্পনা, কিন্তু জাতিসংঘ সেখানে যেতে আপত্তি করছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে এবং গোটা বিষয়ে সরকারের মতামতের একটি গুরুত্ব থাকতে হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ যদি মনে করে তারা নিজেদের মতো করে সবকিছু ঠিক করবে, তবে আমরা তাদের তহবিল সংগ্রহে আর সহায়তা করবো না।’ উল্লেখ্য, জেআরপি থেকে তহবিল সংগ্রহে বাংলাদেশ সহায়তা করে, কিন্তু এর পুরো অর্থই জাতিসংঘের মাধ্যমে ব্যয় করা হয়।
গাইডলাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এবার জেআরপিতে ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে অর্থ বরাদ্দের জন্য তাদের আমরা বলেছি।’ এছাড়া কক্সবাজারে নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ রাখার বিষয়েও আমরা তাদের জানিয়েছি। তিনি বলেন, জেআরপি থেকে তহবিল সংগ্রহে আমরা সহায়তা করি, কিন্তু এর কোনও হিসাব আমাদের জানায় না জাতিসংঘ। সেজন্য আমরা বলেছি−তারা এই তহবিল কোথায়, কোন খাতে, কত টাকা ব্যয় করছে, সেটি যেন বিস্তারিত আমাদের জানায়।’
এছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা আগামী জেআরপিতে রাখার জন্য আমরা তাদের বলেছি।