তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, একদিকে গ্যাস সংকটের কথা বলে এলএনজি আমদানি, সুন্দরবন বিনাশ অন্যদিকে দেশের গ্যাস রফতানির সর্বনাশা নীতি জনগণ মানবে না। কারণ এধরণের ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য সৃষ্টি করা হচ্ছে মহাবিপর্যয় ও জাতীয় নিরাপত্তাহীনতা।
আজ জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে একথা বলেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রে তেল-গ্যাস সম্পদ নিয়ে সরকার বিদেশি কোম্পানির সাথে অধিকতর জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির প্রস্তুতিস্বরূপ পিএসসি-২০১৯ প্রণয়ন করেছে যাতে বিদেশি কোম্পানিকে রফতানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশকে যে গ্যাস কিনতে হবে তা বাড়িয়ে ৭.২৫ মার্কিন ডলার করা হয়েছে, ট্যাক্স মওকুফ করা হয়েছে, যাতে কার্যত এই গ্যাসের দাম পড়বে ১০ মার্কিন ডলার।
অথচ স্থলভাগ ও সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরা অনেকদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু সরকার এই পথে কখনও যায়নি, বরং সক্ষমতা বাড়ানোর বদলে যতটুকু সক্ষমতা আছে তা আরও সংকুচিত করা হয়েছে। জাতীয় সংস্থাকে সুযোগ না দিয়ে কয়েকগুণ বেশি খরচে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়েছে। সমুদ্রের সম্পদ অনুসন্ধানে উদ্যোগ না নিয়ে গ্যাস সংকট জিইয়ে রাখা হয়েছে তারপর তার অজুহাতে কয়েকগুণ বেশি দামে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। গ্যাস সংকটের অজুহাতে ব্যাপকভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে, এমনকি দেশের প্রাকৃতিক রক্ষাবাঁধ সুন্দরবন ধ্বংস করতেও সরকারের দ্বিধা নেই, করছে দেশবিনাশী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র; অন্যদিকে এই একই সরকার দেশের নিজস্ব গ্যাস তেল সম্পদ রফতানির বিধান রেখে বিদেশি কোম্পানি ডাকছে।
এসব উদ্যোগে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি আর তাদের দেশি কমিশনভোগীদের পকেট ভারীর ব্যবস্থা হচ্ছে, আর বাংলাদেশের জন্য সৃষ্টি করা হচ্ছে মহাবিপর্যয় ও জাতীয় নিরাপত্তাহীনতা। নিজেদের গ্যাস সম্পদ যথাযথভাবে উত্তোলন ও দেশের কাজে শতভাগ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সুলভ টেকসই সমাধান সম্ভব।
একদিকে গ্যাস সংকটের কথা বলে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি, রামপালসহ দেশবিনাশী কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অন্যদিকে দেশের গ্যাস সম্পদ বিদেশে রফতানি করার সিদ্ধান্ত জনগণ কোনো ভাবেই মেনে নিবে না।
জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে দেশের জনগণ বারবার গ্যাসসম্পদ রফতানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তার কারণেই এখনো দেশে শিল্পকারখানা চলছে, বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
সরকার গ্যাস রফতানির উদ্যোগ থেকে সরে না এলে দেশের সম্পদের ওপর দেশের শতভাগ মালিকানা, শতভাগ সম্পদ দেশের কাজে ব্যবহার, গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সমন্বয়ে টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তার দাবিতে জাতীয় কমিটি থেকে দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।