সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে ড্রোন হামলা ইরানের আগ্রাসনের অংশ। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। বুধবার এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল তুর্কি আল মালকি। তিনি বলেছেন, গত শনিবার সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় যে হামলা হয়েছে তা চালানো হয়েছে উত্তর দিক থেকে। এতে যে ইরানের মদত রয়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তবু প্রকৃতপক্ষে কোন স্থান থেকে ওই হামলা চালানো হয়েছিল তা নিয়ে তদন্ত করছে সৌদি আরব। সংবাদ সম্মেলনে তিনি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের বিধ্বস্ত অংশগুলো প্রদর্শন করেন। বলেন, এ হামলা ইয়েমেন থেকে চালানো হয় নি। যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে হামলায় তার অংশবিশেষ পাওয়া গেছে। তা থেকে অকাট্য প্রমাণ মিলেছে যে, ইরান আগ্রাসন চালিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
সংবাদ সম্মেলনে তুর্কি আল মালকি বলেন, মোট ১৮টি ড্রোন এবং ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ইরানিয়ান ডেল্টা উইংয়ের মনুষ্যবিহীন অস্ত্র। তিনি আরো বলেন, ক্রুজ মিসাইলের পাল্লা হলো ৭০০ কিলোমিটার। এর অর্থ হলো এসব মিসাইল ইয়েমেনের ভিতর থেকে সৌদি আরবে হামলায় ব্যবহার হতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে একটি সার্ভিলেন্স ভিডিও দেখান। তাতে দেখা যায়, একটি ড্রোন দেশটির উত্তর দিক থেকে আসছে। কর্নেল তুর্কি আল মালকি বলেন, এসব অস্ত্রই ইরানের শাসকগোষ্ঠী এবং রেভ্যুলুশনারি গার্ডরা বেসামরিক স্থাপনায় হামলায় ব্যবহার করছে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এ জন্য তিনি সরাসরি ইরানকে হামলার জন্য দায়ী করেন নি। তবে বলেছেন, অপরাধীদের অবশ্যই চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
ওদিকে এ হামলায় জড়িত থাকার কথা বার বার অস্বীকার করে আসছে ইরান। যদি তাদেরকে এ হামলার জন্য টার্গেট করে যুক্তরাষ্ট্র তাহলে তার তাৎক্ষণিক জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। কর্নেল তুর্কি আল মালকির সংবাদ সম্মেলনের পর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির একজন উপদেষ্টা হিসামেদ্দিন আশেনা বলেছেন, সৌদি আরব প্রমাণ করেছে তারা কিছুই জানে না। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ওই সংবাদ সম্মেলন প্রমাণ করে যে, মিসাইল এবং ড্রোন কোথায় তৈরি এবং কোথা থেকে তা ছোড়া হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই জানে না সৌদি আরব। তা ছাড়া দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেন এগুলো আকাশে সনাক্ত করতে বা তা নিষ্ক্রিয় করতে পারলো না তা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
সৌদি আরবে হামলার জন্য দায়ী ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতিরা এই বক্তব্যেই অটল আছে ইরান। বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেছেন, সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনের ভিতরে যে হস্তক্ষেপ করছে তার পরিণামে বৃহত্তর একটি যুদ্ধের সূচনা হতে পারে। হুতিদের ওই হামলা তারই সতর্কতা। কিন্তু সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আল মালকি বলেছেন, ইরান যা-ই বলার চেষ্টা করুক, ওই হামলা ইয়েমেন থেকে চালানো হয়নি। এমন হামলা হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কিংস কলেজ লন্ডনের একজন লেকচারার আন্দ্রেয়াস ক্রিগ আল জাজিরাকে বলেছেন, হামলাকে কেন্দ্র করে যেসব প্রশ্ন উঠেছিল তার কিছুটা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেছেন, প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে এতটা নিখুুঁত টার্গেট চালানো সম্ভব হলো তাদের পক্ষে, যেখানে সৌদি আরবের রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে একটি ব্যাখ্যা হলো তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য দক্ষিণ দিকে নজর রাখছিল, উত্তর দিকে নয়। ফলে সৌদি আরবের ওই সংবাদ সম্মেলনকে বাকযুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। তিনি আরো বলেছেন, সৌদি আরব একটি ঘটনা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে এবং এক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে।