গার্মেন্টসকর্মী খতিব মিয়া হত্যার পাঁচ বছর পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। মূল আসামি আলমগীর হোসেন ডেমরা থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো বলে জানা যায়। ২০১৪ সালের ১৪ই নভেম্বর, রাত সাড়ে ১২টা। ডেমরার সানারপাড় এলাকার পটুয়াখালী হোটেলের সামনে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন গার্মেন্টসকর্মী খতিব মিয়া। পকেটে ছিলো তার পুরো মাসের পারিশ্রমিক। ছিনতাইকারীর হাতে তুলে দিতে না চাওয়ায় এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয় তাকে। ঘটনাস্থলেই খতিব মিয়ার মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতেই তার মা খোদেজা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে রাজধানীর ডেমরা থানায় মামলা করেন।
ঘটনার একমাস পরে মামলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গেলেও কেউ গ্রেপ্তান হয়নি। ঘটনার পাঁচ বছর পর আবার সামনে আসে মামলাটি। ২০শে সেপ্টেম্বর ধলপুর সূতিখালপাড় এলাকা থেকে আলমগীর নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। আলমগীরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শনিবার সানারপাড় থেকে হৃদয় এবং সূতিখালপাড় এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আলমগীর ও হৃদয় ছিনতাই এর পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িত। জানা যায় , ৫ বছর ধরে হত্যাকান্ডের কোনো ক্লু না পাওয়ায় ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। ঠিক এ সময় শেষবারের মতো তদন্তে নেমে পাওয়া যায় একটি মোবাইল ফোনের নম্বর। পরে ওই ফোন নম্বরের সূত্র ধরে আটক করা হয় এক ব্যক্তিকে। ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানান, এটি তার ছেলের নম্বর। এরপর তার ছেলেকে আটক করা হয়। তিনি পুলিশকে জানান দেড় মাস আগে তার ওই মোবাইল ছিনতাই করেছে স্থানীয় এক ছিনতাইকারী। সঙ্গে সঙ্গে ওই ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যে বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য। গ্রেপ্তার করা হয় জড়িত আরো দুজনকে।
সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট সূত্র জানায়, ৫ বছর পর হত্যা মামলাটির তদন্তে নেমে প্রথমেই বের করা হয় হত্যার পরে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া সংবাদ। সেখান থেকে ছিনতাইয়ের বিষয়টি অনুমান করলে ডেমরা এলাকার স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টালে দেখা যায়, পুলিশের উঠান বৈঠকে স্থানীয়রা তৎকালীন ডেমরা থানার ওসি ও ওয়ারী বিভাগের ডিসিকে ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা আলমগীর সম্পর্কে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন। পরে আলমগীর সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডেমরা এলাকার ছিনতাই চক্রের মূলহোতা সে। দিনে ডেমরা থানার ইনফর্মার এবং রাতে ছিনতাই করে সে। পরে সোর্সের মাধ্যমে আলমগীরের নম্বর পাওয়া গেলেও কোনো কূলকিনারা হচ্ছিল না। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ওই নম্বরে বেশি কথা হয়েছে এমন একটি নম্বর চিহ্নিত করে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ব্যক্তি জানান, নাম্বারটি তার ছেলে সাদিদের (ছদ্মনাম)। সাদিদকে আটক করা হলে তিনি জানান, দেড় মাস আগে স্থানীয় ছিনতাইকারী আলমগীর তার মোবাইল ছিনতাই করে। পরে সাদিককে সঙ্গে নিয়ে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু মোবাইল নম্বরটির খোঁজ মিলছিল না। ওই নম্বরের মোবাইল কোথায় জানতে চাইলে আলমগীর জানান, জুয়া খেলে খুইয়ে ফেলেছেন। পরে ওই নম্বরের সিমসহ মোবাইলটি জব্দ করা হয়।
সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটের শুটিং ইনসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার আশরাফউল্লাহ বলেন , খতিব হত্যার দিনই ডেমরা থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়। পরে মামলাটি ডিবিতে স্থান্তর করা হয়। কিন্তু ৫ বছরেও কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। ক্লুলেস এই মামলার তদন্তে অবশেষে একটি ফোন নম্বরের সূত্র ধরে খুনিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামিরা। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।