যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশ নাগরিকই মনে করেন নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপ দেওয়ার যেই অভিযোগ উঠেছে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে, তা গুরুতর। এবিসি ও ইপসোসের করা এক জরিপের এই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে ৪৩ শতাংশ উত্তরদাতাই মনে করেন, এই অভিযোগ ‘অত্যন্ত গুরুতর।’ ২১ শতাংশ মনে করেন ‘কিছুটা গুরুতর।’ মাত্র ১৭ শতাংশ বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দেখে তারা বিস্মিত হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
খবরে বলা হয়, মূলত গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এক কর্মীর অভিযোগ ও খোদ হোয়াইট হাউজের প্রকাশিত ফোনালাপের বিবরণীর ভিত্তিতে বর্তমানে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত চলছে।
ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েকদিন পর ২৫শে জুলাই ডনাল্ড ট্রাম্প আলাপ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। সেখানে তিনি নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপ দেন। এমনকি এ বিষয়ে নিজের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জিলানি ও মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের সঙ্গে কাজ করারও পরামর্শ দেন তিনি।
উল্লেখ্য, জো বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তার ছেলে হান্টার বাইডেন ছিলেন বুরিজমা নামে ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির বোর্ড সদস্য। ট্রাম্পের অভিযোগ, বুরিজমা তথা নিজের ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে তিনি তৎকালীন ইউক্রেনিয়ান প্রধান কৌঁসুলিকে বরখাস্ত করতে চাপ দেন।
অন্যথায়, মার্কিন সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুমকি দেন।
বাইডেন যে ওই কৌঁসুলির পদত্যাগের জন্য চাপ দিয়েছিলেন, সেটি তিনি নিজেও অস্বীকার করেন না। কিন্তু তখন পশ্চিমা অন্যান্য দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ওই কৌঁসুলির অপসারণ দাবি করছিলেন। বাইডেন নিজের ছেলের জন্য কোনো অনৈতিক কাজ করেছেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই। এছাড়া তখন ওই কৌঁসুলির অধীনে বুরিজমা সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত চললেও, মূলত ওইসব তদন্ত জোর দিয়ে না করা ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগেই পশ্চিমা দেশগুলো তার উপর ক্ষুদ্ধ ছিল।
অনেক পর্যবেক্ষকই তাই মনে করেন, ইউক্রেনকে দিয়ে বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালু করাতে পারলে ট্রাম্প একে সামনের নির্বাচনে আক্রমণ হিসেবে ব্যবহার করতেন।
তবে ট্রাম্পের ফোনালাপের বিস্তারিত প্রকাশ হওয়ার পর, তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিশংসন তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ডেমোক্রেট স্পিকার ন্যান্সি প্যালোসি এতদিন এই বিষয়ে দ্বিধান্বিত থাকলেও, ইউক্রেনের ঘটনার পর তিনিও এই প্রক্রিয়ায় সমর্থন দিয়েছেন। তার ভাষ্য, প্রেসিডেন্ট মার্কিন করদাতাদের অর্থকে পুঁজি করে বিদেশী সরকারকে দিয়ে নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে তদন্ত করানোর জন্য চাপ দিয়েছেন, এই অভিযোগ সকল সীমা অতিক্রম করেছে।