এলপিজি রপ্তানি চুক্তির বিরোধিতা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমরা এলপিজি বিদেশ থেকে আমদানি করি। এখানে ডিউটি ফ্রি এলপিজি আমদানি করে কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তাদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য আবার ভারতে এখান থেকে সেই এলপিজি সরবরাহ করা হবে। ভারতে থেকে যেখানে ১৫ শত কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে যে এলপিজি নিয়ে আসতে হতো, বাংলাদেশের এই সুবিধা দিয়ে মাত্র ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম সেই এলপিজি ভারতে পৌঁছেছে। তাহলে এটা বাংলাদেশের স্বার্থ, নাকি ভারতে স্বার্থ।’
সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতকে গ্যাস না দেওয়ার কারণে তিনি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। আজকে প্রশ্ন এসেছে, তাহলে আমদানি করা এলপিজি দিয়ে ২০০১ সালের গ্যাস না দেওয়ার খেসারত দিচ্ছেন কি না। আপনার উদ্দেশ্য একটাই, ক্ষমতা।’
জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করায় আবরারকে প্রাণ দিতে হয়েছে’—মন্তব্য করে মোশাররফ বলেন, ‘আবরারের বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের মনের কথা। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কথা। আপনারা আবরারকে হত্যা করে জনগণের স্বার্থকে হত্যা করেছেন। আধিপত্যবাদের পথ খুলে দেওয়ার জন্য আবরারকে হত্যা করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্রকে হত্যা করে, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ এবং ক্যাসিনোবাজ সৃষ্টি করে যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান, আবরার তাঁর রক্ত দিয়ে আপনাদের পতনের সূত্রপাত করে গেছেন।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। এমন খাদে পড়েছে, যে খাদ থেকে তাদের নিষ্কৃতি নেই। আমি মনে করি, এই সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার। এই দেশের মানুষ কখনো এ ধরনের সরকার বরদাশত করতে পারে না।’
হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খবরের কাগজে দেখলাম, এমন কোনো হল নেই, যেখানে টর্চার সেল নেই। ১২০টি টর্চার সেল আছে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজকে আবরার হত্যাকাণ্ড সারা দেশের মানুষকে অবাক করেছে, মর্মাহত করেছে। একজন আবরারকে হত্যা করে লাভ হবে না, এক আবরার শত শত, হাজার হাজার আবরারের জন্ম হবে বাংলাদেশে।’
ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চারটি চুক্তির উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তিনি নাকি দেশের কোনো স্বার্থ বিক্রি করেননি। কিন্তু দেশের মানুষ জানে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে এসেছেন ভারতে। এর পরিবর্তে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছুই আনতে পারেননি তিনি। এই ব্যর্থতা এই সরকারের জন্য কালিমা হয়ে থাকতে ইতিহাসে।
খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া দুই কোটি টাকার কারণে মিথ্যা মামলায় জেলখানায় রাখা হয়েছে। অথচ, আজকে জিকে শামীমের বাড়িতে ২৫০ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। সম্রাট মাত্র দুই দিন কারাগারে ছিলেন, তারপর তাঁকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানো হয়েছে। সমস্ত সরকার উদ্বিগ্ন তার স্বাস্থ্য নিয়ে। কখন তাঁকে আবার সিঙ্গাপুর পাঠানো যাবে, সে ব্যাপারে তারা ব্যস্ত। অথচ আমার নেত্রী খালেদা জিয়া এক বছরের ওপরে জেলখানায় আছেন। হাসপাতালে আনার জন্য আমরা কতবার বলেছি, এক বছর ২ মাস পর হাসপাতালের এনেছেন।
মওদুদ আহমদ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আন্দোলনের সময় এসেছে গেছে। প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যেতে পারে না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবীব-ঊন নবী খানের সভাপতিত্বে সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রমুখ।