অবশেষে বাণিজ্য যুদ্ধে ‘অস্ত্রবিরতি’তে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। শুক্রবার ওয়াশিংটন একটি সীমিত চুক্তিতে রাজি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে যে শুল্ক বৃদ্ধি করার কথা ছিল তা স্থগিত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। বিনিময়ে চীন কিছু বিষয়, বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্য ক্রয়ে ছাড় দেবে। অর্থাৎ একে পূর্ণাঙ্গ চুক্তি বলা যাচ্ছে না। সাময়িক এই চুক্তিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘প্রথম পর্যায়ের চুক্তি’। এ খবর দিয়েছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
খবরে বলা হয়, এ চুক্তির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি কিছুটা হলেও হাফ ছেড়ে বাঁচবে। এছাড়া বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে উত্তাল থাকা বৈশ্বিক পুঁজিবাজারও কিছুটা শান্ত হবে।
তবে এ-ও সত্য, হোয়াইট হাউজে আসীন হওয়ার প্রথম দিন থেকেই ট্রাম্প আমেরিকা-চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক যেভাবে করতে চেয়েছিলেন, তেমনটা এই চুক্তির মধ্য দিয়ে হয়নি। আগামী ৫ সপ্তাহের মধ্যেই সীমিত এই চুক্তির লিখিত দলিল চূড়ান্ত করবেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। মূলত আগামী মাসে চীনে আপেক নেতাদের সম্মেলনে ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সম্ভাব্য বৈঠকের পূর্বেই লিখিত দলিলাদি চূড়ান্ত করার কথা।
যদি চুক্তি সম্পন্ন হয়, তাহলে ট্রাম্প দাবি করতে পারবেন যে, তিনি বাণিজ্য ইস্যুতে অগ্রগতি আনতে পেরেছেন। কেননা, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে তিনি রাজনৈতিকভাবে চাপে ছিলেন। এমনিতেও ঘরোয়া রাজনীতিতে তার অবস্থা টালমাটাল। বিরোধী ডেমোক্রেটরা তার বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত শুরু করেছে। চুক্তি হলে ট্রাম্প নিশ্চিতভাবেই কিছুটা সাফল্য দাবি করতে পারবেন।
চীনের সঙ্গে দরকষাকষিতে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সীমিত আকারে ছাড় দিয়েছেন। চীন থেকে আমদানি করা ২৫০০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। মঙ্গলবারই এই বৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এই সীমিত চুক্তির আওতায় তা আপাতত স্থগিত থাকছে।
তবে ২০১৮ সালের শুরু থেকে আজ অবদি চীনা পণ্যের ওপর আরোপকৃত শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস করেনি যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া ১১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর আরোপ করা ১৫ শতাংশ শুল্কও বহাল। এছাড়া ১৫ই ডিসেম্বর নতুন চীনা পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি থেকেও সরে আসেনি যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া চীনের টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে চলমান অবরোধ থেকেও সরে আসার কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের ছাড়ও ছিল তুলনামূলক অল্প। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিজাত পণ্য, বিশেষ করে সয়াবিন ও শূকরের মাংস ক্রয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। সেই হিসাবে বার্ষিক ৪০-৫০ বিলিয়ন ডলারের কৃষিজাত পণ্য আমদানি করবে বেইজিং। এছাড়া মেধা সম্পত্তি (ইন্টিলেকচুয়াল প্রোপার্টি), মুদ্রা ও আর্থিক সেবার ক্ষেত্রেও চীন কিছু ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে শিল্পক্ষেত্রে ভর্তুকি সহ অন্যান্য ইস্যুতে বড় ধরণের ছাড় দিতে রাজি হয়নি চীন।
তবে দুই পক্ষের সম্মত হওয়া সীমিত চুক্তি কীভাবে কার্যকর করা হবে, সেই ধরণের কাঠামো এখনও দাঁড় করানো হয়নি। হোয়াইট হাউজ ডনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে লেখা শি জিনপিং-এর একটি বার্তা প্রকাশ করেছে। এতে শি জিনপিং লিখেছেন, ‘চুক্তির কিছু অংশ নিয়ে আমাদের দুই দল অগ্রগতি করতে পেরেছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা একে-অপরের উদ্বেগ নিরসন করবো ও অন্যান্য দিকেও ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হবো। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক সম্পর্ক দুই দেশ ও সামগ্রিক বিশ্বের স্বার্থের পক্ষে।’ অপরদিকে ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রত্যাশা এই চুক্তি সামনের দিনগুলোতে আরও বৃহৎ হবে। তার ভাষ্য, ‘ভাগেভাগে চুক্তি করাই আমি মনে করি ভালো। আমরা এখন দ্বিতীয় ধাপের দিকে নজর দিতে পারবো।’
চুক্তির খবরে মার্কিন পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইতিবাচকভাবে। প্রসঙ্গত, দরকষাকষিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন মার্কিন রাজস্ব বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইথিজার। চীনের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ হে। মার্কিন মন্ত্রী মনুচিন বলেছেন, এই চুক্তির পর চীনকে ‘কারেন্সি ম্যানিপুলেটর’ আখ্যা দেওয়া থেকে বিরত থাকার বিষয়টি বিবেচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র।