সিরিয়ায় সামরিক হামলার জবাবে তুরস্কের দুটি মন্ত্রণালয় ও সরকারের তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে তুরস্কে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। কিন্তু তাদের এমন সিদ্ধান্তকে বেআইনি ও পক্ষপাতী বলে মন্তব্য করেছে তুরস্ক। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখবে বলে জানিয়েছে দেশটি। আগেই দেশটিকে সতর্ক করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তুরস্কের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও তুরস্ক বিরত বা সীমিত আকারে যুদ্ধ না করায় তিনি ফোন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগানকে। তাকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার দাবি করেন।
ওদিকে স্থানীয় সময় সোমবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন আরোপিত অবরোধকে অত্যন্ত শক্তিশালী বলে বর্ণনা করেন এবং বলেন এতে তুরস্কের অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রভাব পড়বে।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে এবং প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। কারণ, তুরস্ক সরকারের সামরিক হামলায় নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ওই অঞ্চল। আইসিস বা আইএসকে পরাজিত করার যে অভিযান তাকে ছোট করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন অর্থমন্ত্রী মনুচিন কথা বলছিলেন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই অবরোধ অব্যাহত থাকবে। তুরস্ক যতক্ষণ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে না যায়, সহিংসতা বন্ধ না করে, সিরিয়া ও তুরস্ক সীমান্তের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধানে সম্মত না হয় ততদিন বা ততক্ষণ এই অবরোধ অব্যাহত থাকবে। প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ফোন করে সোমবার এ কথাই পুনরায় জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সিরিয়ায় আগ্রাসন চালানোর জন্য তুরস্ককে কোনো সবুজ সংকেত যুক্তরাষ্ট্র দেয় নি বলে এদিন জানান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এর আগে সিরিয়ায় অগ্রহণযোগ্য আগ্রাসন চালাচ্ছে তুরস্ক- এমন মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আরো বলা হয়, ওই আগ্রাসনের ফলে বহু আটক আইএস যোদ্ধা মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে মাইক প্রেন্স বলেছেন, তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই অঞ্চল সফরে যাবেন।
এরই মধ্যে সিরিয়ার সেনাবাহিনী প্রবেশ করেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। এর ফলে সেখানে তুরস্কের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের মুখোমুখি যুদ্ধ হতে পারে। ফলে সিরিয়া পরিস্থিতি নতুন এক যুদ্ধে রূপ নেবে। এর আগে তুর্কি হামলার জবাবে বাধ্য হয়ে কুর্দি সেনারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি চুক্তি করে। সেই চুক্তির অধীনে কুর্দি ও সেনাবাহিনী মিলে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তুরস্ক বলছে, তারা তুর্কি সীমান্তের কাছে কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সেখানে তারা একটি নিরাপদ এলাকা গড়ে তুলবে। তুরস্কে বর্তমানে অবস্থান করছেন ১৫ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী। তাদের অনেককে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।