তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, তার দেশের সেনারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি গেরিলাদের বিরুদ্ধে যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে তা পশ্চিমা হুমকিতে বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো অস্ত্র ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই অভিযান বন্ধ করতে পারবে না। রোববার জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে এরদোগান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সিরিয়ায় অভিযান শুরুর পর আমরা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র অবরোধের মতো হুমকি পাচ্ছি; কিন্তু যারা ভাবছে এসব হুমকি দিয়ে তুরস্ককে পিছু হটানো যাবে তারা ভুল করছেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, অস্ত্র অবরোধের ব্যাপার নিয়ে তিনি বুধবার জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলের সাথে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন। এরদোগান বলেন, ‘আমি তাকে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে বলেছি। তাকে এ-ও বলেছি যে, আমরা সত্যিকার অর্থে মিত্র নাকি আমাকে না জানিয়েই কুর্দি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ন্যাটো জোটে গ্রহণ করা হয়েছে?’
ওয়াইপিজি গেরিলা গোষ্ঠী ও তুরস্কের ভেতরে মধ্যস্থতা করার পরিকল্পনাও এরদোগান নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের পরিকল্পনা করছে তারা কিভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে আমাদেরকে আলোচনার এক টেবিলে নিতে পারে? গত বুধবার থেকে তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি গেরিলাদের উচ্ছেদ করতে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। সিরিয়া সরকার এ অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এর মাধ্যমে সিরিয়ার জাতীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে।
সিরীয় সেনাবাহিনীর সাথে কুর্দিদের সমঝোতা
এ দিকে সিরীয় কুর্দিরা জানিয়েছে, তুরস্কের সামরিক অভিযান মোকাবেলায় সিরিয়ার সরকারের সাথে তাদের একটি সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতা অনুসারে সিরিয়ার সরকার দেশটির উত্তরাঞ্চলে সেনা পাঠাবে তুরস্কের অভিযান ঠেকাতে। এর আগে সিরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে সরকারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অবশিষ্ট সেনাদের সিরিয়ার ওই অঞ্চল থেকে প্রত্যাহারের পরপরই কুর্দিদের সাথে সিরীয় সেনাবাহিনীর সমঝোতার কথা জানা গেল। গত সপ্তাহে শুরু হওয়া তুরস্কের সামরিক অভিযানের লক্ষ্য হলো সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে কুর্দি বাহিনীকে সরে যেতে বাধ্য করা।
উত্তর সিরিয়ার কুর্দি নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমঝোতার অংশ হিসেবে সিরিয়ার সেনাবাহিনী পুরো সীমান্তে মোতায়েন করা হবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরীয় সেনাবাহিনী মোতায়েনের ফলে তুরস্কের সেনাবাহিনী ও তাদের ভাড়াটে যোদ্ধাদের আগ্রাসন ও দখলকৃত এলাকা উদ্ধারে এসডিএফকে সহযোগিতা করবে। কুর্দিরা আরো জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে তুর্কি সেনাবাহিনীর দখলকৃত আফরিনের মতো শহরও মুক্ত করার উপায় বের হবে। ২০১৮ সালে দুই মাসের অভিযানের পর তুরস্কের সেনাবাহিনী ও তাদের সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীরা আফরিন থেকে কুর্দিদের পিছু হটতে বাধ্য করে এবং শহরটির দখল নেয়।
তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভেতরের দিকে প্রবেশের চেষ্টা করছে। রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, তাদের সেনারা ১০৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। এই এলাকার মধ্যে ২১টি গ্রাম রয়েছে। সাংবাদিকদের এরদোগান জানিয়েছেন, সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ শহর রাস আল-আইন তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদিও এসডিএফ দাবি করেছে, তুর্কি বাহিনীকে তারা শহরের উপকণ্ঠে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরো জানিয়েছেন, সীমান্তের ১২০ কিলোমিটার ভেতরে তাল আবিয়াদ শহর দখল করেছে তুরস্কের সেনারা।
ব্রিটেন-ভিত্তিক যুদ্ধ পর্যালোচনাকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, তুর্কিরা ওই এলাকার প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। উত্তর সিরিয়া থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের বিতাড়িত করে সেখানে একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠা করে সিরীয় শরণার্থীদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে চায় তুরস্ক।
আনাদোলু ও বিবিসি