পুলিশ প্রশাসনের দু-একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনভিজ্ঞতা কিংবা বাড়াবাড়ির কারণে গত রোববার ভোলার ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে করছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি মাওলানা মাহফুজুল হক। হেফাজতের প্রতিনিধি হিসেবে সরেজমিন ঘুরে আসা এই আলেম গতকাল নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে আরো জানান, প্রশাসনের সাথে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সমাবেশে আলেম সমাজ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রেখে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
কিন্তু ঘটনার দিন সকালে পুলিশের বরিশাল বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা চাপ দিয়ে ১১টার সমাবেশ সাড়ে ১০টায় শেষ করে দেয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।
মাওলানা মাহফুজ বলেন, সেখানে প্রশাসনের সাথে আলেম সমাজের একটি বোঝাপড়া হয়েছিল। এভাবে সমঝোতা হয়েছিল যে, প্রতিবাদটা অবমাননার বিরুদ্ধে হবে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে হবে না। এখন কিন্তু হ্যাকের কথা বলে পুরো ঘটনাকেই একেবারে ধামাচাপা দেয়া-সেটি তো হতে পারে না। ঘটনার আগের দিন বৈঠকে আলেম সমাজের প্রশ্নের জবাবে প্রশাসন আইডি হ্যাক হওয়া বা না হওয়াÑ কোনোটাই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড-বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব। তার নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগীর একটি প্রতিনিধিদল গত বৃহস্পতিবার ভোলার বোরহানউদ্দিনে যান।
সাক্ষাৎকার নিম্নরূপ
নয়া দিগন্ত : আপনারাতো ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনাস্থল সরেজমিন ঘুরে এলেন। ওইদিনের ঘটনার ব্যাপারে কি জানলেন?
মাওলানা মাহফুজ : আমরা যা জানতে পারলাম তাতে বুঝা যায়, আসলে ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনভিজ্ঞতা বলব, না কী বাড়াবাড়ি বলব- এসবের কারণেই হয়েছে। না হয় এমন ঘটনা ঘটত না।
নয়া দিগন্ত : ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে হলো?
মাওলানা মাহফুজ : বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন, ঈদগাহ মসজিদের সাথের মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান আলেম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ঘটনার ব্যাপারে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। উনাদের সাথে আমাদের সরাসরি কথা হয়েছে।
ওনাদের দেয়া তথ্য থেকে আমরা যা জেনেছি তা হলো- প্রথমে ঘটনাটির প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করে সাধারণ মানুষ। যে এলাকায় ওই হিন্দু ছেলেটি বসবাস করে ওই এলাকায় এটি জানাজানি হওয়ার পর সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। কোনো জায়গায় ব্যক্তিগতভাবে হয়তো আলেম-ওলামা প্রতিবাদে থাকতে পারেন। কিন্তু সেটা মৌলিকভাবে বোরহানউদ্দিনের শহর কেন্দ্রিক যে বড় ওলামায়ে কেরাম আছেন তাদের নজরে আসে শনিবার। তারা ওই দিন জানতে পারেন বিভিন্ন দিকে এমন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। এগুলো শুনে ওনারা পরামর্শ সভায় বসেন। সভায় পরদিন রোববার বেলা ১১টায় প্রতিবাদ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। সভা থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তাদেরকে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেয়া হয়।
যেখানে সমাবেশটা হয় তার একদম কাছেই থানা। ওই প্রতিনিধি দল মাগরিবের পরে থানায় যায়। ওখানে এশা পর্যন্ত আলোচনা শেষ না হওয়ায় এশার নামাজ পড়ে আবার আলোচনায় বসেন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। প্রথমে ওসির সাথে কথা বলেন। পরে এসপিও আসেন। এরপর ডিসিসহ প্রশাসনের আরো কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসেন। বৈঠকটি শেষ হতে প্রায় সাড়ে ১১টা বা পৌনে ১২টা বেজে যায়। বৈঠকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, যেহেতু ইতোমধ্যেই প্রতিবাদ হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় সেটা উনাদের নজরে আসার কথা।
হিন্দু ছেলেটা প্রথমে থানায় যায় সম্ভবত শুক্রবার। বৈঠকে সেটাও জানানো হয়। কিন্তু বৈঠকে যাওয়ার আগে আলেম উলামারা ওই ছেলেটা যে থানায় গেছে, তার আইডি হ্যাক হওয়ার কথা বলেছেন সেটা জানতেন না। প্রতিবাদ হয়েছে উনারা সেটাই জেনেছন।
নয়া দিগন্ত : শনিবার সন্ধ্যার আগে ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়টি আলেমরা জানতেন না বলছেন?
মাওলানা মাহফুজ : না, জানতেন না বলেই আমাদের জানিয়েছেন। আমরা আলাপ করে জেনেছি, থানায় আলোচনায় বসার পর বিষয়গুলো সামনে আসে। তখন ওই হিন্দু ছেলে এবং হ্যাক করার সন্দেহে আরো দুইজনকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়ে তিনজনকে প্রতিনিধি দলের মুখোমুখি করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরাতো একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। তখন আলেমদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘটনাটাতো ঘটেছে অবমাননাকর এবং একটা বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এটার দোষী কে, সেটা হয়তো এখনো নির্ধারিত হচ্ছে না। কিন্তু অবমাননার ঘটনাতো হয়েছে। আলেমরা প্রশাসনকে তখনই বলেন, আপনারা কি বলেন, এই হিন্দু ছেলে এটা করেনি নিশ্চিতভাবে বা এই দুই মুসলমান ছেলে হ্যাক করেছে? উনারা বললেন যে, না উনারা বলতে পারেন না। আলেমরা বলেন, আমরা এটার প্রতিকার চাই।
তখন প্রশাসনের কর্মকর্তারা তিনজনকে দেখিয়ে বলেন, তারা গ্রেফতারে আছে। এটার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এদের ছাড়া হবে না। উনারা তখন প্রতিবাদ সমাবেশটি স্থগিত করার জন্য বলেন। তখন আলেমরা বলেন, বৈঠক শেষ হতে হতে প্রায় ১২টা বেজে গেছে। এখন প্রতিবাদ সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দেয়া সম্ভব না। কারণ সন্ধ্যায় গ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে স্থগিত করলেও মানুষের আসাতো বন্ধ হবে না। তা ছাড়া প্রশাসনের বিবরণতো আমরা জানলাম, সব মানুষের কাছেতো বিষয়টা স্পষ্ট না। আলেমরা অনুরোধ করেন, ঠিক প্রতিবাদ সমাবেশ না। শুধু এই পর্যন্ত যা হয়েছে তা মানুষের সামনে সুন্দর করে উপস্থাপন করা, যাতে সামনে এই নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি না হয়- এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাওয়া দরকার। তখন প্রশাসনও ওনাদের সঙ্গে একমত হন। ডিসি, এসপি, ওসি সবাই মিলে বক্তব্য দিবেন, কারা দিবেন সেটাও নির্ধারিত হয়। আলেমদের থেকে তিনজন।
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কারা বক্তব্য দিবেন তাও ঠিক হয়। প্রশাসনের এএসপি ও সার্কেল ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান বক্তব্য দেবেন। লম্বা প্রোগ্রাম হবে না, প্রতিবাদী বক্তব্য না, বিষয়টি তুলে ধরা। এভাবে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাতে এই বৈঠকের পর বরিশাল বিভাগীয় এডিশনাল ডিআইজি সেখানে যান। পরদিন সকাল বেলা তিনি এসপি ওসিসহ অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে ঈদগাহ মাঠে যান। উনি গিয়ে আলেমদের মধ্যে যে পাঁচজন ছিলেন তাদের চারজন সেখানে একত্র হয়েছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলেন। উনাদেরকে বলেন, এই ধরনের কোনো কিছু করা যাবে না। উনি জোর দিয়ে জানান, এমন কিছু করা হলে ঝামেলা হবে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দিক থেকে মানুষ আসা শুরু হয়। একপর্যায়ে ১০টার কিছু সময় আগে এসপি সাহেব, এডিশনাল ডিআইজি মাইক নিয়ে কথা বলা শুরু করেন।
উনারা এই পর্যন্ত কী কী করেছেন এসব বলেন। কিন্তু প্রথমেই প্রশাসনের কথা বলাটা সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। আগের রাতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আলেমদের তিনজন কথা বলবেন তার মধ্য থেকে এক-দুইজন প্রথমে বক্তব্য রাখবেন- এমন কথাই ছিল। এরপর প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধি বক্তব্য রাখবেন । ওখানে স্থানীয় একজন পীর সাহেব আছেন- উনি সভাপতিত্ব করবেন এবং তার দোয়ার মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ হয়ে যাবে- এমনই পরিকল্পনা ছিল।
সকালে এই এডিশনাল ডিআইজি এসে অনেক দৌড়াদোড়ি, অনেক ধরনের প্রস্তাব দেন। এমনও প্রস্তাব দেন আলেমরা অসুস্থতার বাহানা দিয়ে যেন অ্যাম্বুলেন্সে সরে যান। উনারা বলেন, আমাদের গ্রেফতার করতে পারেন কিন্তু আমরা এইভাবে করতে পারব না, এতে আমরা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবো। আমাদের প্রতি তারা আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। পরে ওনারা বলেন, এভাবে করলে আরো ক্ষতি হবে। কালকে পর্যন্ত যা যা হয়েছে যেভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেভাবে করেন। ১১টায় সময় দেয়া আছে ১১টার পরে ১৫ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার বেশি দরকার নেই। প্রশাসন তা না করে ১০টারও আগে বক্তব্য দেয়া শুরু করে।
জোর করে ওনাদেরকে স্টেজে নিয়ে যান এবং বক্তব্য দিতে বাধ্য করেন। যদিও ওনারা বেশি কথা বলেননি। প্রশাসনই বেশি কথা বলেন। প্রশাসনের নির্দেশে একজন দোয়া করে শেষ করে দেন ১০টা ২০-২২ মিনিটের দিকে। ওনারা মাইকে সবাইকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু ১১টায় প্রোগ্রাম হওয়ার কারণে অনেক লোকজন আসতে থাকেন। উপস্থিত যারা ছিলেন তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হলেও কিছু বক্তব্য শুনেছেন, কিন্তু পরে যারা এসেছেন তারা কিছুই শুনেনি। বরং গিয়ে ধারণা হয় যে, প্রশাসন এখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে দেয়নি। এটাই তাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে। এ থেকেই আসলে ঘটনার সূত্রপাত।
নয়া দিগন্ত : ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী হতে পারে মনে করেন?
মাওলানা মাহফুজ : ওখানে ঘটনা যখন শুরু হয় তখন এডিশনাল ডিআইজি এসপি এবং ইউএনও এ তিনজন মসজিদের দোতলায় ইমাম সাহেবের কক্ষে ঢুকেন। তাদের সাথে ফোর্স ছিল। দোতলার অন্য জায়গায় কিছু ছিল। ওসি সাহেব ছিলেন বাইরের মাঠে। এরপর যে প্রায় আধা ঘণ্টা পর্যন্ত ঝামেলা হয়েছে, ওখান থেকে থানা একদম কাছে। ওখানে ভেতরে যারা ছিল তাদের কাছে টিয়ার শেল ছিল না। দ্রুত সময়ে ওসি সাহেব থানা থেকে টিয়ার শেল বা ফায়ার সার্ভিস এনে পানি নিক্ষেপ করা বা এই ধরনের ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু এ ব্যাপারে ওসি সাহেবের অনভিজ্ঞতা, অযোগ্যতা বা অবহেলা যাই বলি যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল তা তিনি নেননি। পরে গুলিবর্ষণের অনেক পরে টিয়ার শেল আনা হয়। নিক্ষেপও করা হয়। কিন্তু প্রথমই এটা করতে পারত।
নয়া দিগন্ত : ঘটনার সময় উত্তেজিতদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বিশেষ করে শার্টপ্যান্ট পরা কিছু লোককে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কেউ পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে হয়েছে? অনেকে তো এমন আশঙ্কার কথাও বলছেন।
মাওলানা মাহফুজ : আশঙ্কাতো অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তাতে আমাদের মনে হয়নি তেমন কিছু হয়েছে। পরিকল্পিত কোনো কিছু সেখানে করা হয়েছে এমন কিছু আমাদের কাছে মনে হয়নি। প্রতিবাদ সমাবেশে সাধারণ মানুষই বেশি ছিল। কারণ প্রতিবাদটা তো শুরুই হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে।
নয়া দিগন্ত : ফেসবুক হ্যাক হওয়ার ব্যাপারে তখন প্রশাসন নিশ্চিত ছিল না আপনি বলছেন। কিন্তু এখন তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হ্যাককারী শনাক্ত হয়েছে। ধরার চেষ্টা চলছে।
মাওলানা মাহফুজ : সর্বশেষ কী হয়েছে আমি এখনো খোঁজ নিতে পারিনি। সফরের মধ্যে ছিলাম। তবে আমাদের আলেমরা জিজ্ঞেস করলে শনিবারে প্রশাসন তো নিশ্চিত বলতে পারেনি। বরং তারা হিন্দু ছেলেটি মুসলমান ছেলের বিক্রি করা ফোন নম্বরে আরেকজনের কথোপকথনের কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। তারা হ্যাক হওয়া না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। হ্যাকের কথাটা এসেছে, হ্যাক করেছে, কে করেছে বা নিশ্চিতভাবে করেছে কি না সেটা তারা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি। বরং রাতে যখন বৈঠক হয় তখন হিন্দু ছেলেটা যেই ওয়ার্ডের, সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সাথে কথা বলেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কাউন্সিলর এতটুকু বলেছেন যে ওই ছেলেটার চাল চলন ভালো না। তার দ্বারা এমন কাজ হতে পারে এটা সম্ভব। বাকিটা হয়েছে কি না এটা নিশ্চিতভাবে তিনি বলতে পারেননি।
নয়া দিগন্ত : আপনার বক্তব্য থেকে তো মনে হচ্ছে, আলেমদের সাথে প্রশাসনের একটা বোঝাপড়া হয়েছিল।
মাওলানা মাহফুজ : সেখানে প্রশাসনের সাথে আলেম সমাজের একটি বোঝাপড়া হয়েছিল। এভাবে সমঝোতা হয়েছিল যে, প্রতিবাদটা অবমাননার বিরুদ্ধে হবে- কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে হবে না। নির্দিষ্ট ব্যক্তি চিহ্নিত না হলে তার বিরুদ্ধে নাও হতে পারে। কিন্তু এখন হ্যাকের কথা বলে পুরো ঘটনাকেই একেবারে ধামাচাপা দেয়া, তাতো হতে পারে না।
নয়া দিগন্ত : ঘটনার পর হিন্দু বাড়ি মন্দিরে হামলার ঘটনা কারা ঘটালো?
মাওলানা মাহফুজ : আসলে আমরা স্বল্প সময় নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপরও আমরা যেটা বুঝলাম তাতে সেখানে বিষয়টা এত বেশি আলোচনা হচ্ছে না। আমরা ওই বিষয়টার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করিনি।
নয়া দিগন্ত : সরেজমিন ঘুরে আসার পর ঘটনার ব্যাপারে চূড়ান্ত মন্তব্য কি আপনাদের?
মাওলানা মাহফুজ : বরিশালের এডিশনাল ডিআইজির যে কার্যক্রম সেটা থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপের বিষয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। উনি বরিশাল থেকে সেখানে যান। এতে সন্দেহ হয়। একটা বিষয় সুন্দরভাবে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর উনি এসে একটা জিনিস চাপিয়ে দেয়া- এটা কী উদ্দেশ্যমূলক না অনভিজ্ঞতা না বাড়াবাড়ি সবগুলো হওয়ারই সুযোগ আছে। বোরহান উদ্দিন থানার ওসি সাহেব, ওনি বাইরে থাকলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিক যে ব্যবস্থাপনা তা তিনি নিলেন না- এটা নিয়েও প্রশ্ন হয়।
নয়া দিগন্ত : ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ মামলা করেছে। আলেমরা আইনি কোনো পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছেন কি না?
মাওলানা মাহফুজ : আলেমসমাজ আইনি কোনো পদক্ষেপে যাননি। তবে আলেমসমাজের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ভোলার ওলামায়ে কেরাম, কেন্দ্রীয় উলামায়ে কেরাম পরামর্শের মাধ্যমে ৬ দফা দাবি পেশ করেছেন। এগুলো নিয়ে প্রশাসনের সাথে বৈঠকও কিছু হয়েছে। কোনো কোনো দাবি পূরণের আশ^াস দেয়া হয়েছে। কোনটার ব্যাপারে বলা হয়েছে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে ইত্যাদি।
নয়া দিগন্ত : এই যে একটা উত্তেজনা তৈরি হলো, হতাহতের ঘটনা ঘটল, আপনারা দাবি দাওয়া দিয়ে আন্দোলনে নামলেন- আসলে সমাধানটা কোন জায়গায় আপনারা মনে করেন?
মাওলানা মাহফুজ : সমাধান হতে হলে ওই ঘটনায় সাধারণ মানুষ যারা প্রতিবাদ সমাবেশ উপলক্ষে গিয়েছে তারা পরিস্থিতির কারণে গিয়েছে। কিছু বাড়াবাড়ি হয়েছে সত্য। কিন্তু আসলে মূল ঘটনার ওই অবস্থার দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের একটা দুরভিসন্ধি বলি, অনভিজ্ঞতা বলি বা বাড়াবাড়ি বলি এটার কারণেই ঘটনা হয়েছে, এ জন্য সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা বা দোষী সাব্যস্ত করা সঠিক মনে করি না। প্রশাসনের ওই দুইজনের অবহেলা বা বাড়াবাড়ির কারণে তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি দেখা দরকার।
পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনা রোধ করার জন্য আইন আরো শক্ত হওয়া দরকার। আইনের প্রয়োগ হওয়া দরকার। এই ধরনের যে ঘটনাগুলো ঘটে এগুলোতে আমরা শুধু আইওয়াশ দেখি। গ্রেফতার করে, এরপর আর বিচারের কিছু দেখি না। অনেক ঘটনায় হ্যাকের কথা বলা হয়, কিন্তু পরে চূড়ান্তভাবে বিষয়গুলো মানুষের সামনে আসে না। আসলে আইনের বাস্তবায়ন নাই বলে ঘটনাগুলো বার বার ঘটছে। তাছাড়া আইনে যে শাস্তি আছে তা আরো কঠোর হওয়া দরকার। বাস্তব প্রয়োগও থাকা দরকার।