আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজভূমিতে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়াই সংকটের একমাত্র সমাধান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সংকট এবং এর মূল গভীরভাবে মিয়ানমারে প্রোথিত। তাই এর সমাধানও মিয়ানমারের অভ্যন্তরেই খুঁজতে হবে। এই সংকট কেবল বাংলাদেশে নয়, এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার বিকালে আজারবাইজানের বাকু কংগ্রেস সেন্টারে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সমসাময়িক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত ও পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিশ্চিতে ‘বান্দুং নীতিমালা’ সমুন্নত রাখা বিষয়ে এক সাধারণ আলোচনায় এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট কেবল বাংলাদেশে নয়, এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছি। এটির আমাদের দেশ এবং এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করছি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটির বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে ভারত আশ্রয় দেয়ার কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার পর বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ায় তিনি এবং তার ছোটবোন শেখ রেহানাকে ছয় বছর নির্বাসনে কাটাতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায় খুবই নগণ্য হওয়া সত্ত্বেও দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোকে তাই অবশ্যই জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানাতে হবে।
শেখ হাসিনা শান্তি বজায় রাখতে ন্যামের কার্যকরী ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা মোকাবিলায় দায়িত্ব পালন করে। তবে শান্তি রক্ষা, বজায় রাখা এবং সংহত করতে ন্যাম সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, যেকোনো অঞ্চলের যেকোনো দেশকে রক্ষায় শক্তি ও প্রভাব ব্যবহারে আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নিরস্ত্রীকরণ ও পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, নিরস্ত্রীকরণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি হাতিয়ার। বাংলাদেশ নিরস্ত্রীকরণের বিকাশে সবসময় সক্রিয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ এবং এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রতিও দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের লক্ষ্যের প্রতি বাংলাদেশ দৃঢ় বিশ্বাসী বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যামের নীতিমালা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে নানাভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ন্যামের গুরুত্বের প্রতি স্বীকৃতি জানিয়ে এর আলজিয়ার্স শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এ শীর্ষ সম্মেলনে বলেছিলেন, পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক আরেক দিকে শোষিত। ২০২০ সালের মার্চে আমরা এই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিন বিষয়টি সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম জটিল সমস্যা। ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী পদক্ষেপের অভাবে ফিলিস্তিনি জনগণ অধিকার বঞ্চিত রয়েছে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এ অবৈধ দখলদারিত্বের অবশ্যই অবসান হতে হবে।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করায় আজারবাইজানকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ন্যামের নতুন প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভকে বাংলাদেশের সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই খাতে আমরা নজিরবিহীন অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমাদের জিডিপি বর্তমানে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আমরা গণতন্ত্র ও বিচার ব্যবস্থাকে জোরদারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্য হ্রাসে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায়, নারীর ক্ষমতায়নে এবং লিঙ্গ সমতায় আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশকে ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক চোরাচালান এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমাদের এ পদক্ষেপ সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে। বাসস