মার্কিন অভিযানে নিহত হয়েছেন চরমপন্থী গোষ্ঠি আইএসের প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি। বেশ কয়েক বছর ধরে তার অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করে আসছিল কয়েকটি দেশের গোয়েন্দারা। পরে বাগদাদির শীর্ষ সহযোগীদের কাছে পাওয়া তথ্যেই তার অবস্থান চিহ্নিত করা গেছে বলে জানিয়েছেন ইরাকি গোয়েন্দারা।
দুই ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এক রিপোর্টে জানিয়েছে রয়টার্স।
২০১৮ সালের শুরুতেইরাকি গোয়েন্দারা প্রথম একটি সূত্রের সন্ধান পান। ইসমাইল আল ইথাবি নামের বাগদাদির এক সহযোগিকে আটক করে তুরস্ক। পরে তারা তাকে হস্তান্তর করে ইরাকের কাছে। ইথাবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, বাগদাদি অনেক সময় শাকসবজি ভরা চলন্ত মিনিবাসে বসে তার কমান্ডারদের সঙ্গে কৌশল নিয়ে আলোচনায় বসতেন। যাতে তার অবস্থান চিহ্নিত করা না যায় সে জন্য এই পন্থা নিয়েছিলেন তিনি।
এক ইরাকি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘বাগাদাদির চলাফেরা ও লুকিয়ে থাকার জন্য যেসব জায়গা সে ব্যবহার করে সে ব্যাপারে খণ্ড খণ্ড কিছু তথ্য ছিল। কিন্তু বাকি তথ্যগুলো খুঁজে পেতে সাহায্য করে ইথাবির দেয়া তথ্য। এগুলো কাজে লাগিয়ে অগ্রসর হন তারা।
তিনি আরো বলেন, ‘ইথাবি তার নিজের কথাসহ মোট পাঁচ জন লোকের বিস্তারিত তথ্য আমাদের জানায়, এরা সবাই বাগদাদির সঙ্গে সিরিয়া ও বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করেছিল।
ইসলামিক সায়েন্সে পিএইচডিধারী ইথাবি ২০০৬ সালে আল কায়দায় যোগ দেন। ২০০৮ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে চার বছর জেলে কাটান। পরে বাগদাদি ইথাবিকে ধর্মীয় নির্দেশনা ও আইএসের কমান্ডার বেছে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়। ২০১৭ সালে আইএস ব্যাপক বিপর্যয়ের শিকার হলে ইথাবি তার সিরীয় স্ত্রীকে নিয়ে ইরাক থেকে সিরিয়ায় চলে যান।
চলতি বছরের প্রথমদিকে মার্কিন, তুর্কি ও ইরাকি গোয়েন্দাদের যৌথ অভিযানে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইএস নেতা ধরা পরার পর আরেকটি মোড় ঘুরানো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই নেতাদের মধ্যে চার জন ইরাকি ও একজন সিরিয়ান ছিলেন বলে জানিয়েছেন ইরাকি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
সিরিয়ার কোথায় কোথায় তারা বাগদাদির সাথে বৈঠক করেছে সেগুলো জানতে পারে গোয়েন্দারা। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই এলাকাগুলোর ভিতরে আরও সূত্র মোতায়েনের জন্য সিআইএ-র সঙ্গে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নেই আমরা। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আমরা ইদলিবকে শনাক্ত করি- যেখানে বাগদাদি তার পরিবার ও তিন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে নিয়ে অনবরত এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চলে যাচ্ছিলেন।
এই সময় সিরিয়ায় থাকা গুপ্তচররা ইদলিবের বাজারে পাগড়িতে মাথা ঢাকা এক ইরাকিকে দেখতে পায় যাকে তাকে অনুসরণ করে বাগদাদি যে বাড়িতে অবস্থান করছিল তার খোঁজ পায়। এই ব্যক্তিটি ইথাবি ছিলেন বলে জানিয়েছেন ইরাকি কর্মকর্তারা।
এরপর তারা সেই তথ্য সিআইএকে দেন। সিআইয়ে স্যাটেলাইট ও ড্রোনের সাহায্যে ৫ মাস ওই এলাকার ওপর নজরদারি চালায়।অভিযানের ২ দিন আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাগদাদি একটি মিনিবাসে চড়ে পাশ্ববর্তী একটি গ্রামে চলে যান। সেখানেই তার বিরুদ্ধে অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী।