ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মনে করতো, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে সন্ত্রাসীরা কাশ্মিরে অনুপ্রবেশ করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। কিন্তু কাশ্মিরের স্থানীয় স্বাধীনতাকামী যুবকেরা সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে শুরু করেছে তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে নয়াদিল্লি। পুলওয়ামা থেকে হালের কুলগাম, প্রতিটি হামলায় স্থানীয় স্বাধীনতাকামী যুবকেরা জড়িত বলে দাবি করছে ভারতীয় পুলিশ। আর এটাই এখন দিল্লির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে ব্যাংককে প্রবাসী ভারতীয়দের অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছেন, জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদাই ছিল সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতা ছড়ানোর মূল কারণ। তাই নভেম্বরের প্রথম থেকে কাজ শুরু করেছেন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মিরের উপরাজ্যপাল জি সি মুর্মু। কিন্তু বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতাকামীদের হামলার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন প্রশাসন।
প্রশ্ন উঠেছে, ফের কি কঠিন হতে শুরু করেছে কাশ্মিরের পরিস্থিতি? যেমনটি হয়েছিল স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে। ২০১৬ সালে ২৯ বছরের ওই স্বাধীনতাকামী তরুণের মৃত্যুর পর স্বাধীনতাবাদীদের দলে নাম লেখানোর হিড়িক উঠেছিল গোটা কাশ্মির জুড়ে। জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা লোপ ও তিন মাসের টানা নিষেধাজ্ঞা ফের সেই পরিস্থিতিকেই দ্রুত ফিরিয়ে আনছে বলে আশঙ্কা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
পুলওয়ামায় আধাসামরিক বাহিনীর কনভয়ে হামলাকারী তরুণ আদিল দার বা কুলগামে অবস্থানরত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি শ্রমিকদের হত্যার পিছনে থাকা হিজবুল মুজাহিদিন সংগঠনের আইজাজ মালিক, সকলেই স্থানীয়। গত তিন মাসে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে যে কয়েকজন স্বাধীনতাকামী যুবক নিহত হয়েছে তার ৮০ শতাংশই হল কাশ্মিরের স্থানীয় যুবক। ভারত-বিরোধিতাই হল এইসব তরুণদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। মূলত কাশ্মিরের দক্ষিণাঞ্চলে ঘর ছাড়তে শুরু করেছে স্বাধীনতাকামী যুবকেরা। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এইসব যুবকদের অধিকাংশ নাম লিখিয়েছে স্বাধীনতাকামীদের দলে।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে আরো আশঙ্কার বিষয় হল, এই মুহূর্তে গোটা কাশ্মির উপত্যকার মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৩০-এর কম। স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান ওয়ানির মতো ব্যক্তিত্বরা এখন কাশ্মিরি যুবকদের কাছে রোল মডেল।
এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার আক্ষেপ,‘ভারতের দুর্ভাগ্য যে বুরহান বা জাকির মুসাই হল কাশ্মিরের যুবকদের রোল মডেল। পাল্টা কোনো রোল মডেল আমরা দাঁড় করতে পারিনি।’
শুধু কাশ্মিরি যুবক আর তরুণরাই নয়, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এখন ঝুঁকছে স্বাধীনতার আন্দোলনে। জীবনের প্রথম স্তর থেকেই তার বেড়ে উঠছে ভারতবিরোধী হিসেবে। সূত্র : আনন্দবাজার।