চীনের মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী উইঘুরদের ওপর নির্যাতনের নতুন এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। উইঘুর যেসব নারীর স্বামীকে বন্দী রাখা হয়েছে, তাদের বাড়িঘরের ওপর নজর রাখতে অন্য জাতির পুরুষদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। শুধু তা-ই নয়, তাদেরকে ওই পুরুষদের সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমাতে বাধ্য করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে রেডিও ফ্রি এশিয়া এই খবর প্রকাশ করেছে। খবরে বলা হয়, গত দুই বছর ধরেই মুসলিম উইঘুর জনগোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়ন বৃদ্ধি হয়েছে। বেইজিং মনে করে, সকল উইঘুরই সন্ত্রাসী। কারাগারের মতো বন্দীশিবিরে প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে বন্দী করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে এসব বন্দী শিবিরকে বলা হচ্ছে পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই দমনপীড়ন জাতিগত নিধনের সমতুল্য।
২০১৭ সালের পর থেকে চীন ওই অঞ্চলে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। ওই প্রকল্পের আওতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতিগোষ্ঠীর লোকরা উইঘুর বাড়ীঘরে থাকছেন। সরকারী কর্মকর্তাদের দাবি, এই প্রকল্প করা হয়েছে জাতিগত ঐক্যের স্বার্থে। তবে এর মাধ্যমে সরকার উইঘুরদের ওপর ঘনিষ্ঠ নজরও রাখতে পারছে। হান জাতিগোষ্ঠীর এই পুরুষরা সাধারণত প্রতিটি উইঘুর বাড়িতে সর্বোচ্চ ৬ দিন করে থাকেন। কিন্তু বহু উইঘুর পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বন্দী শিবিরে আছেন।
চীনের ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টির এক সদস্য বলেছেন, হান জাতিগোষ্ঠীর এই লোকদের বলা হচ্ছে ‘আত্মীয়’, যদিও তাদের সঙ্গে উইঘুরদের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব পর্যবেক্ষক মূলত কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য। তাদের কাজ হচ্ছে উইঘুর পরিবারের সঙ্গে থাকা, খাওয়া ও কাজ করা এবং তাদের সঙ্গে কম্যুনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে আলোচনা করা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই কর্মকর্তারা উইঘুর পরিবারের সঙ্গে আদর্শ ও ধ্যানধারণা নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের সঙ্গে জীবন নিয়ে আলোচনা করে। এই সময় তাদের মধ্যে হয়তো একে অপরের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়।’ তার ভাষ্য, ‘সাধারণত, এক বা দুই ব্যক্তি একই বিছানায় ঘুমায়। শীত বেশি হলে, ৩ জন একসঙ্গে ঘুমায়। এখন এটি সাধারণ যে নারীরা তাদের পুরুষ ‘আত্মীয়ে’র সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমায়।’
রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েনজিসার গ্রামের এক স্থানীয় কর্মকর্তাও এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তার দাবি, এই ‘আত্মীয়’রা উইঘুর নারীদের সঙ্গে রাতে ঘুমানোর সময় নিজেদের মধ্যে ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রাখে। উভয় কর্মকর্তাই দাবি করেছেন, হান জাতিগোষ্ঠীর এই কর্মকর্তারা কখনই ওই নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে যাননি। এক কর্মকর্তা দাবি করেন যে, উইঘুর পরিবারগুলো তাদেরকে স্বাগত জানাতে বেশ উদগ্রীব।
কিন্তু এ ব্যাপারে উইঘুরদের বক্তব্য জানা যায়নি। কেননা, সাংবাদিক বা ওই অঞ্চলের বাইরের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করলেই জেলে যেতে হয় তাদের। বিদেশে বসবাসরত উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজন আরও বিভিন্ন ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। কেউ কেউ বন্দীশিবিরে গণধর্ষিত হওয়ার অভিযোগও করেছেন। এছাড়া ধর্মীয়ভাবে মুসলিম এই উইঘুরদের শুকরের মাংস খেতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও খবরে উঠে এসেছিল।