মাহবুব আলী খানশূর
ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সমর্থকরা এদেশের জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির বিরুদ্ধে জোর প্রচারণা চালাবে। একইসাথে তারা ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ তথা টোরী পার্টির পক্ষে কাজ করবে। এমনটাই জানিয়েছে ওভারসিস ফ্রেন্ডস অব বিজেপি (ওএফবিজেপি) গ্রুপের প্রেসিডেন্ট কুলদ্বীপ সিং শেখাওয়াত। ওই কাজের অংশ হিসেবে তারা ব্রিটেনের হিন্দু মন্দির , সামাজিক সংগঠন ও কমিউনিটির মানুষদের সংগঠিত করে লেবার পার্টিকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানাবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাথে আলাপকালে কুলদ্বীপ শেখাওয়াত জানান, কাশ্মীরে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়ে লেবার পার্টির জোরালো বিরোধীতার কারনে তারা লেবার পার্র্টির বিরুদ্ধে প্রচারণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ৪৮টি আসনকে লক্ষ্য করে তারা প্রচারণা চালাবে। তাদের বিশ্বাস ওই ৪৮টি আসনে ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্রিটিশদের প্রচারণা ও ভোটের কারণে লেবার পার্টির পরিবর্তে কনজার্ভেটিভ পার্টি জয়ী হবে। তবে ওএফবিজেপি বা বিজেপির প্রবাসী বন্ধু গ্রুপটি তাদের মূল দল ভারতীয় জনতা পার্টি থেকে নির্বাচনী ব্যায়ের অর্থ কিভাবে সংগ্রহ করবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন ধারণা নেই। এ বিষয়ে স্কাই নিউজের প্রতিনিধি তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা তাৎক্ষনিক কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ব্রিটেনের নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী কোন গ্রুপ যদি নির্বাচনে ২০ হাজার পাউন্ডের বেশি ব্যয় করার পরিকল্পনা করে তবে তাদের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন করতে হবে। পক্ষান্তরে ২০ হাজার পাউন্ডের কম হলে নিবন্ধনে বাধ্যবাধকতা নেই। আবার কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোন গ্রুপকে ৫০০ পাউন্ড বা তার বেশি ডোনেশন দিতে চাইলে তাকে ব্রিটেনের ভোটার হতে হবে। আর ডোনেশন ৫০০ পাউন্ডের কম হলে বিদেশ থেকে আসতে পারে।
অপরদিকে কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কেউ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করলে তা কমিশনের আওতাধীন নয়। এমনকি ওই স্বেচ্ছাসেবীরা অন্য কোন দেশের কোন দলের সক্রিয় সমর্থক হলেও তাদের জন্য একই নিয়ম।
এ বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর লেবার পার্টি ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ করার অনুমতি দেয়ার জন্য এবং ওই এলাকার নাগরিকদের আত্মরক্ষার অধিকারের দাবিতে সংসদে জরুরী প্রস্তাব উত্থাপন করে। ওই প্রস্তাব উত্থাপনের পর লেবার পার্টি ও এর প্রধান জেরেমি করবিনের ওই ক্ষোভে ফেটে পড়ে ব্রিটেনের ভারতীয় বিজেপির সমর্থকরা। ব্রিটিশ-ভারতীয় প্রায় ১০০টি সংগঠনের নেতারা জেরেমি করবিনের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে লেবার পার্টির সমালোচনা করে। চিঠিতে তারা জানায়, কাশ্মীর ইস্যু ভারত ও পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে ব্রিটেনের কোন জাতীয় দলের নাক গলানো উচিত নয়।
কাশ্মীর নিয়ে লেবারের অবস্থানের বিষয়ে বিজেপির প্রবাসী বন্ধু গ্রুপের প্রেসিডেন্ট শেখাওয়াত বলেন, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীর বিষয়। লেবার পার্টি কেন ভারতের রাজ্যের বিষয়ে সংসদে আলোচনা করে ? নির্বাচনে আমরা ওই সাংসদদের সমর্থন করবো যারা আমাদের সমর্থন করে। তিনি বলেন, ব্রিটেনে ভারতীয় কমিউনিটি যদি টোরী পার্টিকে ভোট দেয় তবে প্রায় ৪০টি আসনে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর এর ফলে সারা দেশের নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন হবে বলে আমরা মনে করি।
এদিকে বিজেপির প্রবাসী বন্ধু গ্রুপের সদস্য তানমানজিত সিং দেশাই অক্সফোর্ডের পার্শ্ববর্তী স্লাউ আসন থেকে লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচন করায় প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গ্রুপের প্রেসিডেন্ট শেখাওয়াত। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কোন হিন্দু এবার তানমানজিত সিং দেশাইকে ভোট দিবে না। হিন্দু ভোটাররা মনে করে সে পাকিস্তানী কমিউনিটির সাথে ঘনিষ্ট হয়ে কাজ করে। তাকে সব সময় পাকিস্তানীদের সাথে চলাফেরা করতে দেখা যায়। প্রায়শঃ সে পাকিস্তান হাই কমিশনে যায়। সে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অব কাশ্মীরের ভাইস চেয়ার ছিল। বর্তমানে সে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন ব্রিটেন-পাকিস্তান ট্রেড এন্ড টুরিজমের ভাইস চেয়ার। ভারতীয় হয়ে কেন সে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করে ? এ কারণেই স্লাউয়ের ভারতীয় কমিউনিটি তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে টোরী পার্টির প্রার্থীকে ভোট দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেখাওয়াতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশাই তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্কাই নিউজকে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনে বাইরে থেকে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমার বিষয়ে প্রপাগান্ডও সেসবের একটি বড় উদাহরণ। যাই হোক আমি মনে করি স্লাউয়ের জনগণ তাদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে ভাল মানুষকেই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। আর আমি সবসময় মানবাধিকারের জন্য কঠোর মূল্যবোধ ধরে রাখতে কথা বলেই যাবো।
নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব অসলোর গবেষক এভিয়ান লেইডিগ স্কাই নিউজের সাথে আলাপকালে জানান, কনজার্ভেটিভ পার্টি ২০১৫ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনের ভোটার তালিকানুযায়ী দেখতে পেয়েছে ব্রিটেনে ভারতীয় বিশেষ করে হিন্দু ভোটার সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। রাজনৈতিক চরমপন্থা বিশেষ করে ভারতের ও পাশ্চাত্যের ডানপন্থীদের নিয়ে গবেষণা করা মিসেস লেইডিগ বলেন, ব্রিটিশ হিন্দুরা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রিটেনের রাজনীতিতে তৃণমূলে প্রভাব রাখছে এবং রাজনৈতিক দলের প্রচারণায় অনেক কাজ করছে।
এবারের নির্বাচনে তাদের প্রচারণায় লেবার পার্টির বিরোধীতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ হিন্দু কমিউনিটির একটি অংশ মনে করে, ব্রিটিশ পাকিস্তানী ও ব্রিটিশ বাংলাদেশী মুসলিম ব্লকটি দ্বারা লেবার পার্টি নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। হিন্দু কমিউনিটির ওই অংশটি মনে করে লেবার পার্টি হিন্দু বিদ্বেষী এবং মুসলিম সহায়ক।
ওভারসিস ফ্রেন্ডস অব বিজেপি (ওএফবিজেপি) গ্রুপের বিবৃতির বিষয়ে লেবার পার্টি ও কনজার্ভেটিভ পার্টির মনোভাব কি তা জানতে স্কাই নিউজের পক্ষ থেকে দুই প্রধান দলের মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু কোন দল থেকেই ওই মুহুর্তে তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।