প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুনি, আগুন সন্ত্রাসী, গ্রেনেড হামলাকারী ও এতিমের টাকা লুটকারীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান আগুন সন্ত্রাসী, গ্রেনেড হামলাকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাতকারী, সুদখোর ও ঘুষখোররা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্য প্রদানকালে একথা বলেন।
আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশ এগিয়ে যায় ও মর্যাদা অর্জন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার মত অন্যান্যের আমলে দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, ‘বরং বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখন দেশ সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে গেছে।’
খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসবাদের গডফাদার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিরীহ মানুষদের হত্যা করার চেয়ে বড় কোনো সন্ত্রাস নেই। খালেদা জিয়ার নির্দেশে পরিচালিত আগুন সন্ত্রাসে পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ৫শ’লোক নিহত এবং তিন হাজারের বেশি আহত হয়েছে।’
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান চালিয়ে যাবার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের সুফল পেতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।’ এতিমের অর্থ আত্মসাতের জন্য খালেদা জিয়ার কঠোর সমলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি প্রধান ও তারেক রহমান অর্থ আত্মসাতে জড়িত ছিলেন এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দুর্নীতির পৃষ্টপোষকতা করেছেন। ‘খালেদা জিয়া নিজে এতিমদের অর্থ আত্মসাত করেছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা জনগণের কল্যাণ চায়নি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন।
২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি’র আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ তাদের ভোট দেবে না জানতে পেরে তারা সংসদীয় নির্বাচন নস্যাৎ করার জন্য বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। তিনি বলেন, ‘বিদেশী জরিপের পূর্বাভাস অনুযায়ী বিএনপি জানতো যে তারা ক্ষমতায় আসবে না। তাই তারা ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার নামে প্রতিটি সংসদীয় আসনের বিপরীতে তিনজন করে মনোনয়ন দিয়ে বাণিজ্য করেছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি সারা দেশে নৈরাজ্য চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার জন্য বিএনপি’র সমালোচনা করে ইঙ্গিত করেন যে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত ছিলেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়া, খালেদা ও তারেক খুনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন না লোকজন কেন আগুন হামলা চালিয়ে কয়েকশ’ লোক হত্যাকারী খালেদা জিয়ার মতো একজন দুর্নীতিবাজের চিকিৎসা নিয়ে কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ‘ক্লিনহার্ট’ অভিযান চালানোর নামে মূলত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা এবং হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দেয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া খুনিদের বৈধতা দিয়েছেন।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া্উর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে সেনা ও বিমান বাহিনী কর্মকর্তাসহ কয়েক হাজার লোককে হত্যা করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি বিল পাস করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালিত ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ‘মিরাকল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আবারো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু এমপি ও তোফায়েল আহমেদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডেয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, মোহাম্মদ নাসিম এমপি, কাজী জাফরুল্লাহ, নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এমপি, লে. ক. (অব.) মো. ফারুক খান এমপি, রমেশ চন্দ্র সেন এমপি, এড. আবদুল মান্নান খান ও এড. আবদুল মতিন খসরু এমপি ও সিনিয়ার নির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপি অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া কারাভোগ করছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ মামলা দায়ের করেছে।
তিনি বলেন, ‘কারাগারে খালেদা জিয়াকে গৃহপরিচারিকা দিয়ে আমরা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বিশ্বে এ ধরনের আর কোনো দৃষ্টান্ত নেই।’ বিএনপি চেয়ারপার্সনের স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে তার হাঁটুতে সার্জারি করা হয়। পরে সৌদি আরবেও তার একই চিকিৎসা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত চক্রের দুঃশাসনের কথা ভুলে না যাওয়ার এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদেরকে ভোট না দেয়ার জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, দুঃশাসনের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছে।
তিনি প্রশ্ন করেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে যারা মাত্র ২৯টি আসন পায় এবং হত্যা ও আগুনসন্ত্রাসের সাথে জড়িত হয় তারা কিভাবে জনগণের কাছ থেকে ভোটের এবং আবার ক্ষমতায় যাওয়ার আসা করতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির লক্ষ্য হচ্ছে দেশের চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, যা তারা সবসময় করে আসছে। তিনি বলেন, তারা কখনো জনগণের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির বর্ণনা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে আসছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানে দেশ ও জনগণের উন্নয়ন হওয়া।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তার সরকার, দল, বিদেশে বাংলাদেশ মিশন ও বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। এ জন্য সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সূত্র : বাসস