পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা বন্ধুপ্রতীম ভারত এমন কিছু করবে না যাতে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পারস্পরিক বন্ধুত্বের মাধ্যমেই বাংলাদেশ-ভারত সর্ম্পক এগিয়ে যাবে। দুই দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
আজ শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতির ৪৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ সব কথা বলেন।
‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক’ বিষয়ক এ আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গলি দাশ। এতে আরো বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলী, মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা জুলিয়ান ফ্রান্সিস এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক বিচারপতি জনাব শামসুদ্দিন চৌধুরী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সরকার প্রধানদের সৌহার্দ্য বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে, যা ভবিষ্যতে আরো নিবিড় হবে। আগামী বছর মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। তাছাড়া ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীও বাংলাদেশে আসবেন।
তিনি বলেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে প্রতিবেশী এই দেশটি।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের বিপদের সময়ে ভারতের জনগণের সহানুভূতি ও আতিথেয়তা এ দেশের মানুষ সবসময়েই স্মরণ রাখবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গঠনে ভারত সরকারের অপরিসীম অবদান কখনোই ভোলার নয়। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ১৭ হাজার সদস্য শহীদ হয়েছেন। আরো অনেকে আহত হয়েছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী এবং ভারতীয় জনগনের অপরিসীম অবদানের কথা আজ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় অনেক সেনা পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ১২ ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। অবশিষ্ট এক হাজার ৫৮২ জন শহীদ ভারতীয় সেনা সদস্যদেরকেও সম্মাননা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ৩৮০ জন শহীদ ভারতীয় সেনা সদস্যের জন্য সম্মাননা স্মারক প্রস্তুত করেছে, যা শিগগির ভারতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক ১৯৭১ যেমন ছিল, ভবিষ্যতে তেমনই থাকবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষায়, ‘প্রতিবেশী প্রথম। আর প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বেড়ে ওঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, আর যেন কোনো অশুভ শক্তি এখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। আর যেন ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ করতে না হয়। আর যেন ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ এমন বই লেখা না হয়।