মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচিকে একদা মানবাধিকারের ‘হিরোইন’ আখ্যা দিয়েছিল পশ্চিমারা। রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাদের পক্ষেই সাফাই গাইতে তিনি এ সপ্তাহে সফর করবেন নেদারল্যান্ডসের হেগ। তার দেশের বিরুদ্ধে এই মামলাকে দেখা হয় আন্তর্জাতিক সবচেয়ে উঁচু মাত্রার একটি আইনিগত মামলার অন্যতম হিসেবে।
২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে জাতিনিধনের উদ্দেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নৃশংসতা শুরু করে। এর ফলে বাধ্য হয়ে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তারা এখন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। সেনাবাহিনীর নৃশংসতার ফলে উঠে আসা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার।
আগামী মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে অভিযোগের প্রথম শুনানি হবে। সেখানে নিজের দেশের নবীন গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন ব্যক্তিগতভাবে সুচি। ওই শুনানিতে তিনি ‘জাতীয় স্বার্থের পক্ষ’ অবলম্বন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
এটা করার মাধ্যমে তিনি সেই সেনাবাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করবেন, যারা তাকে এক সময় ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য বছরে পর বছর গৃহবন্দি করে রেখেছিল।
উদ্বেগকে একপাশে সরিয়ে রাখার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন তাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকে সমর্থন দেয়া হয়। এতে আন্তর্জাতিকভাবে তার সুনাম বর্তমানে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার চেয়ে আরো বেশি কলঙ্কিত হবে তার সুনাম। দেশের মানুষের পক্ষে আবারও তিনি চ্যাম্পিয়ন হবেন, এ জন্য দেশের ভিতরে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
ওদিকে ওই শুনানিতে যে বা যারা উপস্থিত হতে চান তাদের জন্য হলিডে প্যাকেজে ডিসকাউন্ট দিচ্ছে মিয়ানমারের পর্যটন বিষয়ক কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিকরা তাদেরকে আবাসিক সুবিধা ও যৌক্তিক সমর্থন দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
এমন একটি কোম্পানির ভিসা সেবা দেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ড জুলাই বলেছেন, যতটা সম্ভব সস্তায় টিকিট বিক্রি করার চেষ্টা করছেন তারা। মিয়ানমারে সুচিকে ডাকা হয় মাদার সু নামে। সেই ডাকনাম উল্লেখ করে তিনি মিয়ানমার টাইমসকে বলেছেন, এটাই হলো মাদার সু’কে সমর্থন প্রদর্শনের উপায়।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেছে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। এতে সমর্থন রয়েছে ৫৭ জাতির সংগঠন ওআইসির। মামলায় গণহত্যা, ধর্ষণ সহ জাতিনিধনের অভিযোগ আনা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে।
গাম্বিয়ার পক্ষে এই মামলায় লড়বেন বৃটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত আইনমন্ত্রী আবুবাকর তামবাদোউ। তিনি ১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডায় গণহত্যার মামলায় এক দশকের বেশি সময় লড়াই করেছেন।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে গাদাগাদি করে অবস্থান করা শরণার্থীর শিবির পরিদর্শন করে, সেখানকার মানুষদের ধর্ষণ, হত্যা ও শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার বর্ণনা শুনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করতে ব্যক্তিগতভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ওআইসির সমর্থন চেয়েছিলেন তামবাদোউ । গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, এসব কাহিনীর মধ্যে আমি গণহত্যা দেখতে পেয়েছি।
গাম্বিয়ার এই মন্ত্রীর পরিকল্পনায় রয়েছে যে, তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে বিচারকরা যেন মিয়ানমারের প্রতি নির্দেশ দেন এবং আদালতকে অনুরোধ করবেন প্রমাণ সংরক্ষণ করতে, যা গণকত্যার মামলায় পরে সহায়ক হবে। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সময় গাম্বিয়ার সাবেক স্বৈরাচারের অধীনে বসবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার কথা তার।
(বৃটেনের অনলাইন দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদন)