ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরও যারা অমান্য করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তাদের গণহারে গ্রেফতার করছে দেশটির পুলিশ। এরই মধ্যে গ্রেফতার করা মানুষের সংখ্যা হাজার হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
রাজধানী দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য, ব্যাঙ্গালোর শহর ও কর্ণাটক রাজ্যের কিছু অংশে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছ
কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই উত্তরপ্রদেশ, ব্যাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ, পাটনা, চন্ডিগড়, মুম্বাই, দিল্লি, এবং অন্যান্য শহরগুলোতে লাখ লাখ বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে।
নাগরিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাধারণ নাগরিকরা টুইটার ও ইন্সটাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মানুষকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
দিল্লির যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছে সেখানে মোবাইল ডেটা সেবা স্থগিত করা হয়েছে।
নতুন নাগরিকত্ব আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নামে পরিচিত এই আইন ভারতের মানুষের মধ্যে ব্যাপক বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার বলছে, এটি ধর্মীয় সহিংসতা থেকে পার্শ্ববর্তী দেশের হিন্দুদের রক্ষা করবে। তবে সমালোচকদের মতে, এটি ভারতের ২০ কোটির বেশি মুসলিমদের কোনঠাসা করার ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী’ এজেন্ডা।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে কয়েকদিনের বিক্ষোভের পর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সহিংস সংঘাত হয়।
নিষেধাজ্ঞা জারি করে উত্তর প্রদেশের পুলিশ প্রধান ও.পি. সিং সাধারণ মানুষকে বিক্ষোভ কার্যক্রম থেকে দূরে থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন
পুলিশের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তাতে বলা হয়, এক জায়গায় চারজনের বেশি মানুষ একত্রিত হতে পারবে না।
পুলিশের দাবি, সহিংসতা এড়াতে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা।
চেন্নাইতে পুলিশ র্যালি, পদযাত্রা বা অন্য কোনো ধরণের বিক্ষোভ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া বন্ধ করেছে।
দিল্লির সাথে জয়পুরকে সংযুক্ত করা মহাসড়কে পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়েছে এবং রাজধানীতে প্রবেশ করা সব গাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
এর ফলে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছে এবং অনেকেই তাদের বিমানযাত্রার নির্ধারিত ফ্লাইট ধরতে পারছে না।
দিল্লির বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে একজন খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ও সরকারের সমালোচক রামাচান্দ গুহও রয়েছেন।
তিনি বলেছেন, তিনি ভারতের মোহনদাস গান্ধীর একটি ছবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলেন।
নাগরিকত্ব আইনে কী আছে?
মুসলিম প্রধান পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা ছয়টি সংখ্যালঘু ধর্মের – হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিষ্টান – নাগরিকরা যদি তাদের ধর্মের প্রমাণ দিতে পারে, তাহলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার রাস্তা খোলা রাখা হয়েছে এই আইনে।
নতুন আইন অনুযায়ী ছয় বছর যাবত ভারতে বসবাস করলে বা কাজের সূত্রে থাকলে তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আগে এই সময় ছিল অন্তত ১১ বছর।
২০২৪ সালের মধ্যে ‘প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্ত ও ভারত থেকে বিতাড়িত’ করার উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী নাগরিকদের তালিকা তৈরির ঘোষণা দেয়ার পর এই আইন নিয়ে শঙ্কা আরো বেড়েছে।
নাগরিকপঞ্জি বা ন্যাশনাল সিটিজেন রেজিস্টার (এনআরসি) এরই মধ্যে উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসামে প্রকাশ করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ জাতীয় পরিচয়হীন হয়ে পড়েছে।
কেন বিক্ষোভ?
ভারতের অনেক মুসলিমই আশঙ্কা করছেন যে, তারা এই আইনের ফলে জাতীয় পরিচয়হীন হয়ে পড়তে পারেন, কারণ তাদেরকে বিশদভাবে প্রমাণ করতে হবে যে তাদের পূর্বপুরুষরা ভারতের অধিবাসী ছিলেন।
সমালোচকরা বলছেন, এই আইন বৈষম্যমূলক এবং ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের পরিপন্থী।
তারা বলছেন, নাগরিকত্ব নির্ধারণে ধর্ম বিশ্বাসকে শর্ত হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার এক র্যালিতে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, তার রাজনৈতিক বিরোধীরা ‘গুজব ও মিথ্যা ছড়াচ্ছে’, ‘সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে’ ও ‘জোর প্রয়োগ করে মানুষের মধ্যে মিথ্যা ও বিভ্রম তৈরি করছে’।
সূত্র : বিবিসি