কারাগারে গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে প্যারোল ছাড়া বিকল্প কোনো কিছুই ভাবছে না সরকার। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করতে চান সরকারের নীতি নির্ধারকরা। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো জানায়, বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে রাজি হলেই কেবল তার মুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান নেবে সরকার। কিন্তু প্যারোল ছাড়া সরকারের নির্বাহী আদেশ অথবা জামিনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবেন ক্ষমতাসীন দলটির নীতি নির্ধারকরা। ফলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি বর্তমানে প্যারোলেই আটকা পড়েছে বলে জানায় সূত্রগুলো।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সাজা দেয়া হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া এবং তার দল এটিকে মিথ্যা এবং রাজনৈতিক হিসেবে দাবি করে আসছে। এখন খালেদা জিয়ার জামিন অথবা সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলে তাদের সেই দাবি সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এতে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি লাভবান হবে। ফলে বিএনপিকে সেই সুযোগ দিতে চায় না সরকার। অন্যদিকে খালেদা জিয়া প্যারোলের আবেদন করলে সেখানে নিজের দোষ স্বীকার করতে হবে। এতে তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ অরাজনৈতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগই রাজনৈতিকভাবে জয়ী হবে। ফলে খালেদা জিয়া যতই অসুস্থ হোন না কেন আপাতত প্যারোলে মুক্তি ছাড়া বিকল্প কোনো পথে হাঁটবে না সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বেগম খালেদা জিয়া চরম অসুস্থ হলেও তিনি কোনোভাবেই প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে রাজি নন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মাধ্যমে প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারাগারে মৃত্যু হলেও তিনি প্যারোল নিয়ে সরকারের কাছে মাথানত করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন প্রস্তাবকারীদের। তার এমন কঠোর মনোভাব সংশ্লিষ্ট ওই মহলকে ভাবিয়ে তোলে।
এদিকে কারাবন্দী অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে চরম উদ্বিগ্ন বিএনপি। তার স্বাস্থ্য নিয়ে এখন কোনো রাজনীতি করতে চান না দলটির নীতিনির্ধারকরা। সে জন্য দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে টেলিফোন করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই সাথে তার জামিনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আলাপেরও অনুরোধ জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চপর্যায় থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো মনোভাব আসেনি।
সূত্রগুলো জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে সরকার। সে জন্যই মির্জা ফখরুলের প্রস্তাব সর্বোচ্চ মহলে প্রত্যাখ্যাত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীপর্যায়ের তিনজন নেতা এ প্রতিবেদককে জানান, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলতি বছর নানা কর্মসূচি রয়েছে সরকারের। এসব কর্মসূচিতে বিদেশী নানা অতিথিও অংশগ্রহণ করবেন। এমন পেক্ষাপটে অনাকাক্সিক্ষত কোনো কিছু ঘটে গেলে তার দায়ভার সরকারের ওপরই পড়বে। দেশের সাধারণ মানুষসহ বিদেশী অতিথিরাও বিষয়টি ভালোভাবে নেবেন না। সে জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক। সরকার চায় খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য যেন দেশের বাইরে চলে যান। তবে সেটি হতে হবে প্যারোলে। এর বিকল্প কোনো পথে মুক্তি সম্ভব নয়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ইতোমধ্যেই বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার প্যারোলের আবেদন আমরা এখনো পাইনি। পাইলে সেটি বিবেচনা করা হবে।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কোনো মামলায় সাজা ভোগ করছেন না। দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তার সাজা হয়েছে। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। সাজাপ্রাপ্ত একজন বন্দীর মুক্তির ব্যাপারে আদালত যেই সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই চূড়ান্ত।