ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে একে অন্যের ঘোর বিরোধী। কেউ কাউকে ভাল সম্বোধন করেছেন বা একজনের সম্পর্কে অন্যজন ভাল কথা বলেছেন এমনটা বিরল। বলা যায়, দা-কুমড়ো সম্পর্ক দু’জনার। রাজনীতিতে ঘোর বিরোধী এই দু’ব্যক্তি মুখোমুখি বসেছিলেন। তাদেরকে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীণ পাটনায়েকের দেয়া নৈশভোজে দেখা গেছে একেবারে মুখোমুখি টেবিলে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর ফোরাম ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিলের (ইজেডসি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা দু’জনেই গিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর। ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নবীণ পাটনায়েক ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তবে ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমান্ত সরেনের দেখা মেলে নি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
ইজেডসির ভাইস চেয়ারম্যান নবীণ পাটনায়েক। তিনিই ২৪তম এই বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাড়িতে একসঙ্গে নৈশভোজে মুখোমুখি বসেছেন এই ছবি টুইটারে পোস্টও করেছেন ওই নবীণ পাটনায়েক। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা শুক্রবার বলেছেন, ভুবনেশ্বরের ওই বৈঠকে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বা এনআরসি নিয়ে কোনোই আলোচনা হয় নি। তবে তিনি দিল্লি সহিংসতার ইস্যু তুলে ধরেছেন। ওদিকে দিল্লি পুলিশকে নিয়ন্ত্রণকারী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে কংগ্রেস সহ বিভিন্ন মহল থেকে, এই দাবিকে তিনি সমর্থন করেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেছেন, প্রথমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তারপর আমরা রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ওড়িশা সফর করছেন অমিত শাহ। পরে তিনি সেখানে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের পক্ষে সমর্থনকারী একটি জনসভায় বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্য বিরোধী নেতাদের মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিহিত করেন। অমিত শাহ বলেন, বহুজন সমাজ পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, কমিউনিস্ট, কংগ্রেস ও মমতা দিদি নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরোধিতা করছেন। কারণ, তারা বলছেন, এতে সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্ব হারাবে। কেন তারা মিথ্যে কথা বলছেন? নাগরিকত্ব দেয়ার জন্যই তো নাগরিকত্ব সংশোধন আইন। এটা তো কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার জন্য করা হয় নি।
এই আইনকে কেন্দ্র করে ভারতে ভয়াবহ প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। দিল্লিতে সহিংসতার পর বিরাজ করছে এক ভয়াবহ অবস্থা। সেখানে প্রাণ ঝরেছে বেশ কিছু মানুষের। এখনও দিল্লি থমথমে। সাম্প্রতিক সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত শাহের মধ্যে বিরোধের মূলেও রয়েছে এই আইন। আইনটি ব্যক্তিগতভাবে পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন অমিত শাহ। এর কড়া সমালোচক মমতা। তিনি পশ্চিমবঙ্গে এই আইন বাস্তবায়ন করবেন না বলে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এই আইনকে গভীরভাবে বিভক্তি সৃষ্টিকারী ও বৈষম্যমুলক বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এই আইনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভারতের নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে থাকবেন মুসলিমরা।
অমিত শাহ এবং ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা বিজেপি বার বার বলার চেষ্টা করছে যে, প্রতিবেশী এসব দেশে ধর্মীয় নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন এমন মানুষকে সহায়তা করার জন্য। কিন্তু মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রস্তাবিত নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইন করা হয়েছে শুধু মুসলিমদেরকে টার্গেট করে।