করোনা ভাইরাসের যুগে বাংলাদেশসহ ছোটবড় সব গণমাধ্যমই বিশ্বজুড়ে এবং নিজ নিজ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা, আরোগ্যলাভের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত হালনাগাদের তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে খবর সংগ্রহে অনেকেই অনেক ‘সোর্স’ এর আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ সিএনএন-বিবিসির মতো বড় নিউজ চ্যানেলের আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ আবার ভয়েস অব আমেরিকা কিংবা বড়বড় পত্রিকা থেকে খবর সংগ্রহ করছেন। বার্তা সংস্থাগুলো তো আছেই।
এমনই এক দুঃসময়ে সঠিক পরিসংখ্যানের জন্য ভরসার নাম ‘Worldometer’ নামক ওয়েবসাইট। অসংখ্য ডেভেলপার, গবেষক এবং স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কাজ করা এই আন্তর্জাতিক সাইটটি ৩৪ টি ভাষায় সহজলভ্য। ২০০৭ সালে শুরু হলেও এটি বিশ্বব্যাপী জনি প্রয় হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিদিন কভিড-১৯ মহামারী বা করোনার তথ্য দিয়ে।
যাই হোক। এসব আলাপ পরেও করা যাবে।
গতকাল (২৬ মার্চ ২০২০) এটি যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের স্বল্প সংখ্যা নিয়ে (৪৪ জন) অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করলেও মৃত্যুর হার কিন্তু ভয়াবহ (১১.৩৬%)।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত সরকারি হিসেবমতেই ৪৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১১ জনেরও বেশি মারা যাচ্ছেন যা worldometer এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে সর্বোচ্চ!
আর করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে প্রতি ১০০ জনে মারা যাচ্ছেন মাত্র ৪ জন! যে ইতালিতে করোনার ভয়াবহতা নিয়ে গোটা বিশ্ব শিউরে, সেখানেও প্রতি ১০০ জনে মারা যাচ্ছে ১০ জন! বাংলাদেশের চেয়েও কম!
অনেকে অবশ্য আশার বাণীও শোনাচ্ছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা হিসাব নিকাশে ভুল হবার কারণেই এটা হচ্ছে। করোনা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের সঠিক পরীক্ষা নিশ্চিত করে আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলে করোনা রোগে মৃত্যু হার বাংলাদেশে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ হবে এটাইতো সাভাবিক!
কিন্তু এই পরিসংখ্যান যদি সত্যি হয় ভাবুন কতোটা ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছি বাংলাদেশের সব মানুষ!
যারা ইতালির মৃত্যুর হার নিয়ে চিন্তিত, যারা এখনো শরীরে বাতাস লাগিয়ে ঘুরছেন তাদের বলছি, আমরা কি একবারও ভাবছি , কি ঘটতে চলেছে বা কি ঝড় ধেয়ে আসছে আমাদের দেশে। এতোদিন আমরা জিডিপি হার দেখে বলতাম, এতো সাল নাগাদ আমরা উন্নয়নশীল/মধ্য আয়ের/উন্নত দেশে পরিণত হবো। তাহলে এবার করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার দেখে কি বুঝে নিতে পারছি কি পরিণতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য?
যাই হোক। দেশটা আমাদের। দেশটাকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করার দায়িত্বও আমাদের সকলের। দয়া করে কেউ আর নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেবেন না। অনেক তো হলো! এবার সজাগ হোন।
দয়া করে সবাই নিজের এবং নিজ পরিবারের কথা চিন্তা করে হলেও সচেতন হোন। জনসমাগম এবং শারীরিক দূরত্ব যথাসম্ভব বজায় রাখুন। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।
আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলছি, সস্তা রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া আর পরিসংখ্যান বুঝে কাজ করা এক বিষয় নয়। দয়া করে দেশের স্বার্থে সব রাজনীতিবিদরা এক হয়ে বিজ্ঞজন এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলুন। কারণ করোনা সকলের অভিন্ন শত্রু।