asianbangla.com

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.

    What's Hot

    রফিকুল টাওয়ার হ্যামলেটসের পাবলিক গভর্নর হিসেবে পুনঃনির্বাচিত

    October 18, 2024

    দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন

    October 1, 2024

    আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা

    August 20, 2024
    Facebook Twitter Instagram
    Trending
    • রফিকুল টাওয়ার হ্যামলেটসের পাবলিক গভর্নর হিসেবে পুনঃনির্বাচিত
    • দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন
    • আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা
    • করিডোর চুক্তি বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ইআরআইয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ
    • ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে প্রয়োজন দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই : ফাইট ফর রাইট ইন্টারন্যাশনাল 
    • লন্ডনে রাইটস অফ দ্যা পিপলস এর ভারতীয় হাইকিমশন ঘেরাও কর্মসূচি
    • লণ্ডনে জিবিএএইচআর এর ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ঘেরাও ও বিক্ষোভ সমাবেশ
    • বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণমানুষকে সোচ্চার হতে হবে
    Facebook Twitter Instagram
    asianbangla.comasianbangla.com
    Demo
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • বিশ্ব
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • কূটনীতি
    • খেলা
    • প্রযুক্তি
    • সংস্কৃতি
    • উচ্চশিক্ষা
    • প্রবাস
    • মানবাধিকার
    • মতামত
    • সারা বাংলা
      • ঢাকা
      • চট্টগ্রাম
      • রাজশাহী
      • খুলনা
      • বরিশাল
      • ময়মনসিংহ
      • রংপুর
      • সিলেট
    asianbangla.com
    Home»Uncategorized»স্মৃতিতে প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিঞা স্যার
    Uncategorized

    স্মৃতিতে প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিঞা স্যার

    By এশিয়ান বাংলাJune 13, 2020Updated:October 28, 2021No Comments0 Views
    Facebook Twitter Pinterest LinkedIn WhatsApp Reddit Tumblr Email
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Pinterest Email

    এম মাহাবুবুর রহমান

    আজ ১৩ জুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফসর ড. মনিরুজ্জামান মিঞার পঞ্চম মৃতু্য বার্ষিকী। আমি সরাসরি ড. মনিরুজ্জামান স্যারের ক্লাসের ছাত্র নই। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষকতাকালে আমি কাছাকাছিও ছিলাম না। কিন্তু তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোর একটি অংশে স্যারের অনেক কাছের ছিলাম। অনেক গোপন-কষ্টের কথা তিনি আমাকে বলতে পারতেন। আমিও তাতে পিতৃ¯েœহ অনুভব করে স্যারকে নানাভাবে সহায়তার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভ্যাগের পরিহাস!!! পরবাসে এসে স্যারের জন্য কিছুই করতে পারিনি। কেবল তাঁর বন্দী জীবনের অবসান ঘটিয়েছিলাম একবার। মুক্ত জীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হয়নি আমার সীমাবদ্ধতার কারনে। তাই নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। আজ তাঁর মৃতু্যবার্ষকীতে কেবল সেই ঘটনারই স্মৃতি রোমন্থন করতে চাই।

    সাংবাদিকতা পেশা থেকেই ড. মনিরুজ্জামান মিঞা স্যারের মতো কিছু অভিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সঙ্গে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠে। সখ্যতা বলছি এইজন্য যে, যৌবনের প্রভাবশালী দাপুটে মানুষগুলো যখন বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে পড়ে, তখন সমাজ-রাষ্ট্র এমনকি পরিবারের সদস্যদের কাছেও তারা অনেকটা মূল্যহীন হয়ে পড়তে থাকে। আর এমন সুযোগে আমি বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নাগরিকের সন্তানতুল্য ¯েœহ পেয়েছি।

    গত দেড় যুগে বছরে ড. মনিরুজ্জামান মিঞা স্যারের মতো ভাষা সৈনিক মরহুম ড. আবদুল মতিন, সাংবাদিক ও ছড়াকার ফয়েজ আহমেদ, পরম শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ স্যার, প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজজামান স্যার, কবি আল মাহমুদ, আসাফউদ্দৌলাহ, শফিক রেহমান সহ অনেকের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয় আমার। তাদের সঙ্গে আমার জানাশোনার বিষয়টি অনেকেরই জ্ঞাত। প্রায়শ: জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ফোন নম্বরের জন্য সাংবাদিকরা আমাকে ফোন দিতেন। এখনও অনেক সাংবাদিক ফেসবুকে ম্যাসেজে অনেক সিনিয়র সিটিজেনের সাথে যোগােযাগের মাধ্যম সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চান।

    এসব মানুষের ব্যক্তি জীবনে খুটিনাটি দোষ থাকতে পারে, কিন্ত তাদের জ্যেষ্ঠ বয়সের দিনগুলোতে আমি তাদের ¯েœহ উপভোগ করেছি। এসএসসি পাশের পর হারানো বাবাকে আমি খুঁজে পেয়েছি তাদের মাঝে। তাই প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’এক জনের বাসায় ছুটে যেতাম আড্ডা দিতে। বাসায় গেলেই পরিবারের সদস্যদের প্রথম কথা থাকতো, ‘তিনি অসুস্থ্য। কথা বলতে পারছেন না। খেতে পারছেন না।’ আরো অনেক কিছু…….

    কিন্তু তাদের কাছে আমার নাম জানাতেই চলে আসতেন সিটিং রুমে। কোনো খাবার নিয়ে গেলে শিশুর মতো তা গ্রহণ করতেন। সে হোক, উত্তরবঙ্গের মেডিসিন বিহীন আম, মিষ্টান্ন কিংবা ফ্রাইড চিকেন। একেক জনের পছন্দ একেক রকম। এরপর আড্ডায় চলে যেত দুই-তিন ঘন্টা। চা, বিস্কুট, চানাচুর শেষ হয়ে যেত। বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শোনাতেন। জানতে চাইতেন, রাজনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি। কোথায় কি হচ্ছে। কে কেমন আছে? কবে নির্বাচন হবে। মানুষ ভোট দিতে পারবে কি-না। অনেক সময় পরিবারের সংকট-সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতেন তারা।

    ড. মনিরুজ্জামান মিঞা স্যার ছিলেন একটু ভিন্ন। তিনি নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াতেন আমাকে। বলতেন, যেহেতু আমার বাসায় কেউ নেই। তোমাকে আমি চা বানিয়ে দিচ্ছি। আর কাজের ছেলেটিকে বলতেন, বিস্কুট ও পানি দিতে। এরপর ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতেন।

    ২০১২ সালের রমজানের ঈদ। আগের দিন স্যারকে ফোন দিলাম। জানতে চাইলাম, স্যার কোথায় নামাজ পড়বেন? বললেন, তুমি চলে এসো সকালে। আমরা গুলশানের আজাদ মসজিদে নামাজ পড়ে ম্যাডামের (বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া) ঈদ-শুভেচ্ছা বিনিময়ে যাবো লেডিস ক্লাসে। আমি হরেক রকম মিষ্টান্ন নিয়ে স্যারের বাসায় গেলাম। ওইদিন স্যার আমাকে অনেক কষ্টের কথা শোনালেন। বললেন, ‘মাহাবুব- বিয়ে না করার পরিণতি যে এতো খারাপ হবে, তা বুঝতে পারিনি। ভাই ও ভাইপোদের উপর আমার নির্ভর করতে হয়। কিন্তু ওদেরকে অনেক স্বার্থপর মনে হয়। সবকিছুতে স্বার্থকে ওরা প্রাধান্য দেয়। তোমাকে আমার ছেলের মতো মনে হয়। তুমে একটু আমার খেয়াল রেখো।’

    এক ঈদে স্যারের বাসায় গেলাম। স্যার বললেন, একজন সাংবাদিক আসবে সাক্ষাতকার নিতে। সাক্ষাতকার দিয়ে আমরা বেরিয়ে যাবো নামাজে। বাংলাভিশনের ইলিয়াস হোসেন এলেন। সেদিন অনেক মজা হলো। ইলিয়াস হোসেন ভাই নিজেও বিয়ে করেননি (তখনো বিয়ে করেনি, বর্তমানটা আমি নিশ্চিত নই)। এসব নিয়ে আমরা অনেক মজা করলাম। বিশেষ করে ইলিয়াস হোসেন নিজেই অনেক মজা করলেন। স্যারের একা থাকার গল্প জানতে চাইলেন।

    ২০১৩ সালের দিকে স্যারের শরীরটা একটু বেশী খারাপ মনে হতো। একদিন ঠিক হলো, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম দিনে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিতব্য বিশেষ সংখ্যায় ড. মনিরুজ্জামান মিঞা স্যারের একটি লেখা দিতে হবে। ফোন করলাম স্যারকে। স্যার বললেন, আমার শরীর খুবই খারাপ। এবার লিখতে পারবো না। আমি বললাম, স্যার আপনাকে কখন দেখতে আসবো। তিনি বললেন, ফোন করে চলে আসো। পরের দিন গেলাম বাসায়। ফের অনুরোধ করলাম লেখার জন্য। স্যার আমাকে একটি গাইডলাইন দিয়ে বললেন, আমার এই আর্টিকেলগুলো পড়ো। এরপর একটি আর্টিকেল সাজিয়ে নিয়ে আসো, আমি ফাইনাল করবো। পরের দিন আর্টিকেলটি নিয়ে স্যারের বাসায় গেলাম, স্যার নিজের হাতে কারেকশন করতে গিয়ে প্রায় নতুনভাবেই একটি আর্টিকেল লিখে ফেললেন।

    এভাবে অনেক ঘটনা স্যারের সঙ্গে। একটি গোপন কথা বলি, একদিন স্যার আমাকে বললেন, ‘একটি কথা তোমার সাথে শেয়ার করতে চাই। আপাতত কাউকে বলো না। আমি লন্ডনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছিলাম। এখনও আমার বিয়ে করা সম্ভব। পরবর্তী প্রজন্ম রেখে যাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে এখন আমার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু সামাজিক কারণে এটি করছি না। তাছাড়া কে আমাকে বিয়ে করবে? একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করার পক্ষে আমি না। তাই বিয়ে করছি না। ভুল করেছি – ঠিক সময়ে বিয়ে না করে।’

    আমি জানতে চাইলাম, স্যার তাহলে আপনি আগে কেন বিয়ে করেননি। সেখানেও তিনি সামাজিক ও পরিস্থিতির বিবরণ টানলেন। বললেন, ‘পড়াশুনা শেষে শিক্ষকতায় যোগ দিলাম। বিয়ে করবো কথাবার্তা হচ্ছে। এমন সময় চলে গেলাম বিদেশে পড়াশুনার জন্য। দেশে ফিরে ফের শিক্ষকতায়। বিয়ে কথা-বার্তা হলো, আমার জন্য যে মেয়ে দেখা হয়, তাকে আমার পছন্দ হয় না। আর যে মেয়েকে আমার পছন্দ হয়, বয়সের কারনে সেই মেয়ে আমাকে পছন্দ করে না। একসময় ভাবলাম বিয়ে না করেই থাকি।’

    এভাবে অনেক গোপন কথা স্যার আমাকে শোনাতেন। তিনি কিভাবে বনানীর জমিটি পেলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তিনি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল। তাঁর ভাইয়েরা কেমন। পরিবারের অতীত ইতিহাস, শিক্ষাজীবন, চাকুরিজীবন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি কী কী কৌশল অবলম্বন করেছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।

    ২০১৪ সালের আগস্ট। আমি পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছি। একজন সাংবাদিক (যতদূর মনে পড়ছে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের আজহার) ড. মনিরুজ্জামান মিঞা স্যারের ফোন নম্বর জানতে চাইলেন। নম্বর দিলে বললেন, এই নম্বরটি ধরছে না। আমি কয়েকবার ফোন করলে বন্ধ পেলাম। পরের দিন ১২ আগস্ট সহকর্মী নুরুজ্জামান মামুনকে সঙ্গে নিয়ে স্যারের বনানীর বাসায় গেলাম। যেতেই গেইটে বাধা। ভেতর থেকে জানানো হলো, স্যারের ভাইয়ের নির্দেশ কাউকে সাক্ষাত করতে দেয়া যাবে না। একটু পরে স্যারের গাড়ির চালক আসলো। আমাকে দেখে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। এক পাশে নিয়ে বললেন, স্যার আপনি কিছু একটি করতে পারবেন। স্যারের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে দেখা করতে হবে। আপনি ফোন দেন তাকে। জানতে চাইলাম, মিঞা স্যারের ফোন কোথায়? জানালেন, তাঁর ভাইয়ের কাছে। ল্যান্ড ফোন? গংযোগ বিচ্ছিন্ন। ভাইয়ের নম্বর চাইলাম, ভয়ে নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে মনিরুজ্জামান মিঞা স্যারের ভাই ড. আসাদুজ্জামানকে ফোন দিলাম।

    ড. আসাদুজ্জামান প্রথমত একটু গম্ভীর কন্ঠে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলেন। বললেন, ডাক্তারের নির্দেশে কাউকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। আমার বিস্তর পরিচয় বলার পর তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন। স্ত্রী সরকারি বড় কর্মকর্তা। ড. আসাদকে শাসালেন। বললেন, তুমি বলে দেও – দেখা করা যাবে না। আমি নাছোর বান্দা। অনেক বোঝানোর পর তিনি পরের দিন আসতে বললেন। তখন আমি রেগে গিয়ে একটু ভয় দেখালাম। বললাম, আপনি এখন না এলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এখানে সংবাদ সম্মেলন করে জানাবো, আপনারা স্যারকে আটকে রেখেছেন। এরপর তিনি পাঁচ মিনিট পরে কথা বলছি বলে ফোন কেটে দিলেন। মিনিট পনেরো পরে তিনি ফোন দিলেন। জানালেন ২৫ মিনিটের মধ্যে আসবেন।

    এরই মধ্যে আমি ৭/৮ জন সাংবাদিককে ডাকলাম। যমুনা টেলিভিশনের শরীফ ক্যামেরা নিয়ে এলো। ইত্তেফাকের সাইদ, সমকাল, আমাদের সময়, মানবজমিন সহ আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সহকর্মীরা এলেন।

    স্বস্ত্রীক এলেন ড. আসাদুজ্জামান সাহেব। প্রথমে স্ত্রী কিছুটা উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু করলেন। আমার পাল্টা প্রশ্নে স্বামী তাকে থামালো। কেবল একজনকে উপরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। আমি সবাইকে নিয়েই উপরে গেলাম। ভাইয়ের স্ত্রীর নির্দেশ, তাদের সামনেই কথা বলতে হবে। আমি স্যারকে তাদের সামনে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি কি ডাক্তারের পরামর্শে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকছেন? স্যার অনেকক্ষণ চুপ থাকলেন। আমি সাহস দেয়ায় স্যার বললেন, ‘না, আমি সুস্থ্য। ডাক্তার আমাকে বাইরে যেতে নিষেধ করেনি।’ কেন বাইরে যাচ্ছেন না? ফোন বন্ধ কেন? এসব প্রশ্নের জবাবে স্যার কেবল হাত দিয়ে তাঁর ভাইকে দেখালেন। ভাইয়ের বউ চোখ গরম করে আমাকে বললেন, ‘আপনি কি চান। এসব প্রশ্ন করছেন কেন।’

    যাইহোক, আমি স্যারকে আলাদা রুমে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে কথা বললাম। স্যার বললেন, ‘মাহাবুব তুমি আমাকে রেখে যেও না। ভাই ও তার বউ চলে গেলে আমি তোমার সাথে কথা বলবো। ডাক্তার আমাকে পার্কে হাঁটতে বলেছে। মানুষের সাথে কথাবার্তা বলা ও স্বাভাবিক জীবনাচরণের প্রেসক্রাইপ করেছেন। কিন্তু ওরা আমাকে আটকে রাখছে।’

    এরপর স্যার শোনালেন, পেছনের কারন। আগে থেকেই আমি জানতাম, স্যার অনেক স্টুডেন্টকে পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিতেন। কর্মজীবী হোস্টেলে থাকে এমন একটি মেয়েকে বিদেশে পড়ার জন্য দুই দফায় স্যার ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। মেয়েটি কয়েকবার স্যারের বাসায় এসেছে। এভাবে একটি ফাউন্ডেশনেও স্যার কিছু টাকা দিয়েছিলেন। এসব জেনে স্যারের ভাই ক্ষিপ্ত হন। ব্যাংকের চেক এবং কার্ড তারা নিয়ে নেন। মোবাইল ও ল্যান্ড বিচ্ছিন্ন করা হয়। স্যারকে অবরুদ্ধ করেন রাখে তারা।

    ওইদিন অনেকগুলো পত্রিকা মনিরুজ্জামান স্যারের দু:সহ জীবন নিয়ে খবর ছাপে। ভাই জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আসাদুজ্জামান নিজের অবস্থান থেকে ব্যাখা দিলেন। স্ত্রীর চাপে তিনি যা করেছেন, আমি নিশ্চিত তিনি অনুতপ্ত। কেননা সরকারের বড় পদে চাকুরিরত স্ত্রী ব্যক্তিগত জীবনে যত ভালই হোক, তিনি যে লোভী সেটা এক ঘন্টার সাক্ষাতেই আমরা বুঝতে পেরেছি। মনিরুজ্জামান স্যার আমাকে বলেছিলেন, ‘মাহাবুব আমার কষ্টের কথা আমি আর কারো কাছে বলতে পারছি না। তুমি একটু ম্যাডামকে  (বেগম খালেদা জিয়া) জানাবে। বলবে, আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই। আমি দিব্যি ভাল আছি। আমি এখনো লেখালেখি করতে পারি। আমাকে পত্রিকাও পড়তে দেয়া হয় না।’ আমি ম্যাডামের গুলশান অফিসে যোগাযোগ করতেই এক কর্তা ব্যক্তি বললেন, ‘আমি খোঁজ নিয়েছি। মনিরুজ্জামান মিঞা স্যার আসলেই বিশেষ একটি রোগে ভুগছেন। তাকে একা থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার।’ পরে জানতে পেরেছি, একজন জেষ্ঠ্য সাংবাদিকের মাধ্যমে এই খবর নেয়া হয়েছিল। ওই সাংবাদিক বড় ভাই ড. আসাদুজ্জামানের কাছের বন্ধু। ড. আসাদুজ্জামানের ব্রিফিংটা কেবল পৌঁছানো হয়েছিল গুলশান কার্যালয়ে।

    এভাবে বাংলাদেশের অনেক জ্যেষ্ঠ নাগরিককে দু:সহ জীবন ভোগ করতে হচ্ছে। অনেক সম্পদ থাকার কারনে, অনেকে সম্পদের অভাবে। তবে সম্পদের অভাবে যারা কষ্টে আছেন, তারা অপেক্ষাকৃত ভাগ্যবান বলেই আমার মনে হয়। কেননা সম্পদের লোভ যে কত খারাপ, মানুষকে পশুতে পরিণত করে সম্পদের লোভ। যত বড় শিক্ষিত পন্ডিত হোক, সমাজে যতই খ্যাতি থাকুক, সম্পদের লোভ মানুষকে নীতিহীন করে তোলে। যা ঘটেছে উচ্চ শিক্ষিত ড. আসাদুজ্জামান ও তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে। তবে ড. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি চাইতেন ভাইকে (ড. মনিরুজ্জামান মিঞা) মুক্ত জীবনে থাকতে দিতে। কিন্তু স্ত্রীর জন্য পারতেন না।

    ২০১৪ সালের সেই আগস্টের পর আমি চলে আসি পরবাসে। কোনো প্রকার পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে থাকছি লন্ডনে। কেমন আছি, কতো ভালো-মন্দ আছি, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো- গত ২২ বছরে ঢাকা শহরে বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষের সঙ্গে গড়ে ওঠা নিত্যদিনের সম্পর্কটা একটু শিথিল হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়ে ওঠে না।

    ২০১৬ সালের এপ্রিলের কথা। প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিঞা স্যারকে ফোন করেছিলাম। বন্ধ। পরে যোগাযোগ করলাম সাংবাদিক সহকর্মী ইনকিলাবের সিনিয়র রিপোর্টার আফজাল বারীর সঙ্গে। পয়লা বৈশাখের আগে-পরে স্যারের বাসায় যাওয়ার একটি পরিকল্পনা করার অনুরোধ করলাম। কয়েকজন সাংবাদিক গিয়ে স্যারের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার কথা বললাম। বারী সানন্দে সম্মত হলেন। কথা বললাম, নুরুজ্জামান মামুনের সঙ্গে। সেও রাজী। তারা যোগাযোগের চেষ্টা করলো। পারলো না। কাজের ব্যস্ততায় আমি নতুনভাবে কিছু করতে পারলাম না। এর মাত্র দুই মাসের মধ্যে স্যারের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। নিজেকে আসামী আসামী মনে হয়েছিল সেদিন। স্যারের জীবনের শেষ সময়ে পাশে থাকতে পারিনি। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন।

    খারাপ শোনলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি – একজন এতো বড় মাপের মানুষকে জীবনের শেষ সময়টা কত না কষ্টে কাটাতে হয়েছে। আমাদের মতে, তাঁর হত্যাকারী ড. আসাদুজ্জামানের স্ত্রী। তিনি সরাসরি হয়তো স্যারকে হত্যা করেননি। কিন্তু এই মহিলার লোভের কারণে স্যারের শেষ জীবনটা অনেক কষ্টে কেটেছে। অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন স্যার। বাবার সম্পত্তি পেয়েছেন অনেক। বনানীর ছয়তলা একটি বাড়ি। ব্যাংক ব্যালেন্স সব মিলিয়ে স্যার সম্পদশালী হয়েও নিপিড়নের কারনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। হয়তো এটা তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু। তবুও জীবনের শেষ দুই বছরের বন্দী জীবনই তিলে তিলে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। এই হত্যার দায় বাংলাদেশের নীতিহীন সমাজের। এই সমাজের একজন হিসেবে আমিও আসামী। এই আসামীকে ক্ষমা করবেন স্যার। খুব জানতে ইচ্ছা করছে, স্যার আপনাকে হত্যা করা হয়নি তো?

    লেখক: যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত সাংবাদিক ও আইনজীবী।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Telegram Email
    এশিয়ান বাংলা

    Related Posts

    লন্ডনে হাসিনার হোটেলের সামনে চারদিন বিএনপি – জামায়াতের প্রতিবাদী বিক্ষোভ

    October 17, 2022

    7 Benefits of Using an 85mm Lens for Portrait Photography

    March 10, 2022

    Keep an Eye on Cell Phone Use by Mobile Cell Phone Monitoring

    March 10, 2022

    Comments are closed.

    Demo
    Top Posts

    আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা

    August 20, 202493

    সেনা হত্যার মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে শেখ হাসিনা

    March 1, 202466

    দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন

    October 1, 202441

    বাংলাদেশ নতুন নির্বাচনের দাবীতে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানব বন্ধন

    February 19, 202437
    Don't Miss

    রফিকুল টাওয়ার হ্যামলেটসের পাবলিক গভর্নর হিসেবে পুনঃনির্বাচিত

    By এশিয়ান বাংলাOctober 18, 20242

    স্টাফ রিপোর্টার  টাওয়ার হ্যামলেটসের জন্য ইস্ট লন্ডন ফাউন্ডেশন ট্রাস্টে (ইএলএফটি) তাদের পাবলিক গভর্নর হিসেবে রফিকুল…

    দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন

    October 1, 2024

    আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা

    August 20, 2024

    করিডোর চুক্তি বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ইআরআইয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ

    July 9, 2024
    Stay In Touch
    • Facebook
    • Twitter
    • Pinterest
    • Instagram
    • YouTube
    • Vimeo

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from SmartMag about art & design.

    Demo
    Facebook Twitter Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp TikTok
    © 2025 AsianBangla. Designed by AsianBangla.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Go to mobile version