মো. মাহাবুবুর রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানাবিধ আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির এখন কর্ণধার তিনি-ই। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে হোক, কিংবা দীর্ঘ সময়ে তারেক রহমানের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কারনে হোক; তাকে ঘিরেই বিএনপির ভবিষ্যত নির্মিত হবে। দল হিসেবে বিএনপির ও বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে তাঁর ভুমিকা এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকারের ‘তারেক-দমন’ প্রকল্প স্পষ্টতই তারেক রহমানকে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। তিনি যে নিকট-ভবিষ্যতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনায় সেটিও এখন অনেকটা অবধারিত।
রাজনীতিক তারেক রহমান অনেক দিক থেকেই এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। তিনি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র। এই মহান দুই শিক্ষকের রাজনৈতিক ছাত্রও তিনি। তারেক রহমান গত ৩৩ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তিনি অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তিনি এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা এখন ‘আতঙ্ক’ হিসেবে বিবেচিত। তাকে রুখতে শেখ হাসিনার সরকার আইন-আদালত সব কিছুই ব্যবহার করছে। ইতিহাসের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে আদালতের আদেশের মাধ্যমে মিডিয়ায় তাঁর বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত আরোপ করা হয়েছে।
অব্যাহত ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন তারেক রহমানকে জনগণের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তুলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র সাধারণের কাছেও স্পষ্ট। রাজনীতিক তারেক রহমানের সময় এখন আরো বেশী কৌশলী হওয়া।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ তাঁর এক নিবন্ধে বলেছেন, “.. .. .. .. বিএনপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটা জনগণের আস্থার জায়গা। এই দলের যোগ্য নেতৃত্বই পারে দেশকে পুনরুজ্জীবিত করতে। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার উত্তরসূরী তারেক রহমানকেই এজন্য চালকের আসনে থাকতে হবে। এজন্য তাকে যোগ্য শিক্ষকের যোগ্য ছাত্রের ভুমিকায় আবির্ভুত হতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে যে নিপীড়ন হয়েছে, এটাকে আশীর্বাদ হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে তারেক রহমান রাজনীতিতে অবশ্যই সফল হবে। যুগে যুগে যারা এমন নিপীড়ন মোকাবেলা করেছেন, তারাই সফল হয়েছেন। ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। আশা করি, বাস্তবতার নিরিখে তারেক রহমান বাংলাদেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরানোর দূত হয়ে উঠবেন। তিনি হয়ে উঠবেন ‘তারেক জিয়া’। রাজনীতিতে প্রবেশের পর তিনি সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে যে স্বপ্নের বীজ বুনেছেন, তাতে এ প্রত্যাশা প্রতিধ্বনিত হয়েছে।”
প্রকৃতপক্ষে, নিজের যোগ্যতা, কর্ম, ধৈর্য ও ত্যাগের মাধ্যমে তারেক রহমান ‘রাজনৈতিক নেতা’ হয়েছেন। তাঁর দলের নেতাকর্মীরা তাকে ‘দেশনায়ক’ উপাধি দিয়েছেন। ভিশনারী কিছু বক্তৃতা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তরুন সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তিনি এ উপাধির যথার্থতা প্রমাণও করেছেন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক গতিপথ মসৃন নয়। তিনি ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলা বিএনপি’র সাধারন সদস্য হয়ে রাজনীতি শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০০২ সালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং ২০০৯ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।তখন তাঁর ভিশন ছিল বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। আর তাঁর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ২০০১ সালের নির্বাচনে দলটি বিপুল বিজয় লাভ করে। এক্ষেত্রে তিনি একজন ‘রাজনৈতিক নেতা’র ভুমিকায় ছিলেন। তবে চিন্তা-দর্শনে তিনি নিজেকে আরো একধাপ এগিয়ে রেখেছিলেন। নির্বাচনে বিশাল বিজয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেও তিনি এমপি বা সরকারের কোনো মন্ত্রীর দায়িত্ব নেননি। বরং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি অনুসরন করে দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেন। চষে বেড়ান দেশের প্রতিটি জনপদ। মানুষকে স্বপ্ন দেখান নতুন করে। তিনি এদেশের মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেন-
‘একটু উদ্যোগ, একটু চেষ্টা
এনে দেবে স্বচ্ছলতা
দেশের আসবে স্বনির্ভরতা’
আর স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নিরলস পরিশ্রমে তিনি পুরো বাংলাদেশের উন্নয়নের ম্যাপ অঙ্কন করেন। কোন এলাকার কি অবস্থা, কোন উপজেলায় কত কিলোমিটার পাকা রাস্তা, কত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা, কোন রাস্তার মেরামত জরুরী, নতুন করে কোথায় কত কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ প্রয়োজন, কোন উপজেলায় কতটা সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে, কোথায় কতগুলো বিদ্যালয়-কলেজ-মাদ্রাসা স্থাপন জরুরী – এসবের প্রকৃত চিত্র ছিল তাঁর ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সফটওয়্যারে।
তারেক রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে বেশ কিছু কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান, যেমন: বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি পুনর্বাসন প্রকল্প, কমল শস্যবীজ প্রকল্প, কমল পানি সম্পদ প্রকল্প, শহীদ জিয়া শিশু হাসপাতাল, হাঁপানী রোগীদের জন্য সেবাদান কেন্দ্র, প্লাস্টিক সার্জারী ক্যাম্প প্রভৃতি। কৃষি ভিত্তিক বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ, ছাগল বিতরণ, ফলজ বৃক্ষ চারা বিতরণ, কৃষকদের জন্য ভাল মানের সার সরবরাহ ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন তিনি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচী গ্রহন করেন। শুধু জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই সারাদেশে পঞ্চাশ লাখ চারা রোপন করেন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও তাঁর দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সুসম্পর্ক রেখে তিনি ‘লুক ইস্ট’ বা পূর্বমুখী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেন। তিনি চীন, ভারত, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বার্মা প্রভৃতি রাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তারেক রহমান একজন সুদুরপ্রসারী ভিশনারী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করছেন। ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই লন্ডনে এক সভায় তারেক রহমানের ঘন্টাব্যাপী এক বক্তৃতায়ও এর প্রমাণ স্পষ্ট। সেখানে তিনি ভবিষ্যত বাংলাদেশের একটি উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অতীতমুখিতা নয় দৃষ্টি দিতে হবে ভবিষ্যতের দিকে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে গেলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব নয়। কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও পর্যটন, রাজধানীর যানজট, পানি, বিদ্যুৎসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর চিন্তা ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে শক্তিমান কবি আল মাহমুদ আমাকে সাক্ষাতকারে বলেছিলেন , “ব্যক্তিগতভাবে তারেক রহমানের সঙ্গে একবার আমার দেখা হয়েছে। বিএনপি জোট সরকারের আমলের কোনো একটি সময়ে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখন কথা হয়। মনে হয়েছে, তিনি (তারেক রহমান) রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। আবার রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার যে স্পৃহা সেটাও তার মধ্যে দেখেছি।” শক্তিমান কবি আল মাহমুদ আরো বলেন, “নির্যাতন করে কাউকে দাবিয়ে রাখা যায় না। বরং নির্যাতিত ধৈর্যশীল ব্যক্তি বা গোষ্ঠী-ই জয়ী হন। তারেক রহমানও ভাল করবেন।”
রাষ্ট্রদার্শনিক প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান তাঁর এক নিবন্ধে বলেন, “.. .. .. .. .. তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত সেখানেই। তিনি কর্ম-বিশ¡াসে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ¡াসী। তাঁর বাবার মতো তিনিও দেশের যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দাবিদার। তিনি এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং লেখাপড়া করছেন। আমি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বলি, যখন এই যোগ্য লোকটি অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তখন দেশবাসী তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে। এখন একটি মানসিক অবকাঠামো সবার মধ্যে স্থির হয়ে গেছে, তারেক জিয়া তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে জাতীয়তাবাদী আদর্শের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেবেন। আমার মনে হয়, শহীদ জিয়াউর রহমানের মতো একজন ঈমানদার ব্যক্তির প্রতিষ্ঠিত এই ‘জাতীয়তাবাদী আদর্শ’ বাংলাদেশে চিরন্তন হয়ে টিকে থাকবে। আর সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার পর তারেক রহমানকে দায়িত্ব নিতে হবে। আশা করি, তারেক রহমানও সফলতা পাবে।”
যে মানুষটিকে নিয়ে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রদার্শনিক, তাঁর নিজের দল এবং শত্রু পক্ষেও এতো বিশ্লেষণ; তিনি (তারেক রহমান) সফলতা পাবেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে তাঁর জন্ম দিনে এ প্রত্যাশা করি। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুভ কামনায় ‘শুভ জন্মদিন’। ১৯৬৫ সালে জন্ম নেয়া তারেক রহমান এখন অনেক পরিপক্ক। এখন তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাকে ঘিরেই এখন স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশের মানুষ। একটি গণতান্ত্রিক সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য তারেক রহমানকে জাতির ভীষণ দরকার – এ কথা যৌক্তিকভাবেই বলা যায়।