মে ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগ দিয়ে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কমিশনের একটি নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, যদিও বাংলাদেশ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, তথাপি অনেক কাজ এখনো বাকী রয়ে গেছে।’
‘যে কারণে আমি ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের নতুন কার্যালয় খুলতে দেখে অত্যন্ত খুশী হয়েছি। এই নতুন অফিস বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন প্রচেষ্টা এবং ধারণার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এবং সমন্বয় সাধন করতে সহায়তা করবে এবং আমরা এখন পর্যন্ত যতটা সফলভাবে এই পথ অতিক্রম করেছি তা থেকে শিক্ষা লাভ করতে এটি সারা বিশ্বের জন্য ওয়েব পোর্টাল হিসেবে কাজ করবে,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোপরি, কোন জাতিই এটি একা করতে পারে না। এক্ষেত্রে আমাদের সমগ্র বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’
কমিশনের নেতৃত্ব প্রদান করছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন। বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার প্রযুক্তিবিদ বিল গেটস এবং বিশ্ব ব্যাংকের সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাও কমিশনে রয়েছেন।
এ বছর জুলাই মাসে ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’র প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ তথা রাজনিতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকার হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে দু’দিন ব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বান কি-মুন এবং ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা এই বৈঠকে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ঢাকা সফর করেন।
সফরকালীন তাঁরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন, কি করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে। তাঁদের সেই সফরের ফলেই গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকায় ’গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন’ এর নতুন অফিস খোলা হচ্ছে ।
গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন রিপোর্ট বিশ্বের ১০টিরও অধিক রাজধানী ও নগরী থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, যার মূল শ্লোগান হচ্ছে ‘অ্যাডাপ্ট আওয়ার ওয়ার্ল্ড।’
রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলবায়ুর প্রভাব ক্রমান্বয়ে সমগ্র বিশ্বের জনগণের জন্য জরুরী বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে, কোনরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি জনগণকে দরিদ্র সীমার নীচে ঠেলে দেবে।
রিপোর্টে একটি সুনির্দিষ্ট রূপকল্পের কথা বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে মূল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহকে আরো স্থিতিস্থাপক এবং উৎপানমুখী হিসেবে রূপান্তর ঘটানো যায়। কমিশন দেখেছে অভিযোজনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক আয় করা সম্ভব। সর্বপরি এই আয়ের পরিমান উন্নত স্থিতিস্থাপকতার ্েক্ষত্রে বেশি, লাভের এই হার ২ অনুপাত ১ থেকে ১০ অনুপাত ১ পর্যন্ত বা ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশি।
বিশ্লেষণে বলা জানানো হয়- ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার বিশ্বব্যাপী ৫টি স্থানে ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে এতে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার মোট মুনাফা অর্জিত হবে। এই ৫টি এলাকায় যে বিষয়গুলো অন্তর্র্ভূক্ত থাকবে তা হচ্ছে-আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো, উন্নত শুষ্ক-ভূমির অবকাঠামো, ম্যানগ্রোভ সুরক্ষা এবং পানি সম্পদকে অধিক স্থিতিস্থাপক করতে বিনিয়োগ- মূলত বিশ্বব্যাপী অভিযোজন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতে যা প্রয়োজন এগুলো তারই অংশ।
জলবায়ুর অভিযোজন ‘ট্রিপল ইকোনমিক ডিভিডেন্ট’ও সরবরাহ করতে পারে, এটি ভবিষ্যতের ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনে, উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাতে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধন করে এবং অন্যান্য সামাজিক এবং পরিবেশগত মুনাফাও সরবরাহ করে।
রিপোর্টে অভিযোজনের আহবান জানিয়ে সমাজে বিদ্যমান অসমতা দূর করা এবং অধিক সংখ্যক জনগণকে এর আওতাভূক্ত করা, বিশেষ করে সে সমস্ত জনগণেরা যারা জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবজনিত ঝুঁকির মুখে রয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা। বাস্তবতা হচ্ছে, যারা জলবায়ু পরবর্তনের শিকার হচ্ছে তারা মূলত এর জন্য দায়ী নয়, অভিযোজনকে একটি মানবিক এবং নৈতিক অপরিহার্য্য বিষয় করে তুলতে হবে।
রিপোর্টের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের চেয়ারম্যান বান কি-মুন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কোন সীমানা রেখা রেখা নেই, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, যা কেবল মাত্র বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা এবং যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘এটি এখন ক্রমান্বয়ে পরিস্কার হচ্ছে যে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ইতোমধ্যেই আমাদের পরিবেশে পরিবর্তন এসেছে এবং আমাদের এর সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে। অভিভাষণ এবং অভিযোজন দু’টি একই সঙ্গে চলতে পারে। যেহেতু, এই দু’টি বিষয়ই প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ভিত নির্মাণে সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি যোগ করেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এবং একটি জলবায়ু স্থিতিস্থাপক বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য অভিযোজন প্রযোজ্য।
গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের সিইও প্যাট্রিক ভারকুইজেন বলেন, ইতোমধ্যেই জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আমাদের জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য সম্ভব সবকিছুই করতে হবে। যাতে করে আমাদের বিশ্বকে আমরা ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় শক্তিশালী এবং সুসজ্জিত করে তুলতে পারি।
তিনি বলেন, অভিযোজন একাধারে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত মুনাফা-এই ‘ট্রিপল ডিভিডেন্ট’ সৃষ্টি করে।
রিপোর্টে তিনটি ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে-বোধগম্যতা, পরিকল্পনা এবং অর্থায়ন। যাতে জলবায়ুর প্রভাব, ঝুঁকি এবং সমাধান-সকল প্রকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল পর্যায়ে কার্যকরী হয়। রিপোর্টে আন্তঃসম্পর্ক যুক্ত ৭টি ক্ষেত্র যেমন-খাদ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, পানি, শহরাঞ্চল, অবকাঠামো, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ঝুঁকি এবং অর্থনীতি’র মত ক্ষেত্রে এই বড় ধরনের পদ্ধতিগত পরিবর্তন কিভাবে প্রযুক্ত হবে তাও খুঁজে বের করা হয়।
কমিশন ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে এই সম্পর্কে বেশ কিছু ঘোষণা প্রদান করবে এবং অন্যান্য কার্যবিধিও তুলে ধরবে। যেগুলো এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় রূপান্তরগুলোর ক্ষেত্রে জাম্পস্টার্ট প্রযোজ্য। কিছু ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপসমূহের বিদ্যমান উদ্যোগগুলোতে রাজনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা জড়িত, অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা পরিবর্তনের জন্য নতুন জোট গঠনের দাবি করতে পারে।
২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদন দপ্তরে অনুষ্ঠেয় এবং নেদারল্যান্ডের সরকার আয়োজিত অপর এক অনুষ্ঠানে কমিশন এক বছরের জন্য একটি ‘ইয়ার অব অ্যাকশন’ ঘোষণা করবে।
ইয়ার অব অ্যাকশন এর ক্ষেত্রে অর্জিত ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২০ সালের অক্টোবরে নেদারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ‘ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সম্মেলনে প্রস্তাব গ্রহন করা হবে।
সূত্র : বাসস