ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্যের তিন লোকসভার উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয়কে ‘শেষের শুরুর ইঙ্গিত’ হিসেবে তুলনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপি অবশ্য মমতার এই আশাবাদকে পাত্তা দিচ্ছে না।
ভারতের বামশাসিত ত্রিপুরা রাজ্যে ২ মার্চ বিধানসভা নির্বাচনের ফল যখন ঘোষণা হচ্ছিল, তখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দপ্তরে আনন্দের বন্যা বইছিল। ত্রিপুরায় বামদলের ২৫ বছরের একটানা শাসনের অবসান ঘটানোর পর রাজ্য বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ থেকে মমতাকে হটিয়ে তাদের দলীয় সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল। ভেবেছিল আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও তৃণমূলকে হটিয়ে গেরুয়া ঝান্ডা তুলতে পারবে বিজেপি।
তবে হিসাব ওলটপালট করে দেয় উত্তর প্রদেশ আর বিহারের লোকসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল। এই তিনটি আসনেই ধরাশায়ী হয় দুই রাজ্যেরই শাসক দল বিজেপি ও তাদের জোট এনডিএ। ভারতের জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ। একসময় এই রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করত কংগ্রেস। তারপর আসে মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি ও কুমারী মায়াবতীর বহুজন সমাজপার্টি। গত বছরের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে সব হিসাব উল্টে উত্তর প্রদেশে জয়ী হয় বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হন যোগী আদিত্য নাথ আর উপমুখ্যমন্ত্রী হন কেশব প্রসাদ মৌর্য। এরপরই যোগী আদিত্য নাথ এবং কেশব প্রসাদ মৌর্য তাঁদের সাংসদ পদ ছেড়ে দেওয়ায় সেই শূন্য আসনেই নির্বাচনে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর আসনে বিজেপিকে পরাস্ত করে জয়ের পতাকা তোলে সমাজবাদী পার্টি।
উত্তর প্রদেশ ও বিহারের এ ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
লোকসভার উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। ফলাফলের পর মমতা বলেছেন, ‘উত্তর প্রদেশের এই ফলাফল আসলে শেষের শুরুর ইঙ্গিত।’
আর এই মন্তব্যের পর পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর মমতারাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লাইন ধরে বলবেন, ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ।’ অন্যদিকে সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর আসনেই বিজেপি হেরেছে। এই ফলাফলেই প্রতিফলিত হয়েছে দেশবাসীর মতামত।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান বলেছেন, উত্তর প্রদেশের উপনির্বাচনে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, জেতা আসনেই বিজেপি গোহারা হেরেছে। এতে প্রমাণিত হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রীর ‘আচ্ছে দিন’ আসার প্রতিশ্রুতি যে কত ভাঁওতা।