এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনী বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি দৃশ্যমান করতে ‘ফাস্ট ট্র্যাক (মেগা)’ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রাথমিকভাবে আগামী বাজেটে সরকারের সাত মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের তুলনায় ৬ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৩০ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণলয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, আগামী বাজেটে মেগা প্রকল্পগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। বাজেট হবে গতানুগতিক। নতুন তেমন কিছু থাকবে না।
সরকারের নীতি-নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে সরকারের প্রচারের একটি বড় অংশজুড়ে থাকবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ফলে সরকার আগামী বাজেটে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আর এ কারণেই বর্তমান সরকারের ১০ মেগা প্রকল্পের (ফাস্ট ট্র্যাক) কয়েকটির বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি উন্নয়ন বাজেটে স্বল্পমেয়াদের জনবান্ধব প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হচ্ছে। যেখানে ভোটার সন্তুষ্টির বিষয় রয়েছে।
সূত্রমতে, যেসব মেগাপ্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, মেট্রো লাইন-৬, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, দোহাজারী থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ নির্ধারণ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে এসব প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের জন্য সম্ভাব্য বরাদ্দ সীমা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি পদ্মা সেতুসহ বড় বিনিয়োগের এসব প্রকল্প (ফাস্ট ট্র্যাক) দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ নীতিমালার মাধ্যমে উন্নয়নের গতি বাড়ানো হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখাতে চায়। নীতিমালা প্রণয়নের পেছনে পরোক্ষ ভাবে এটিও একটি কারণ।
সূত্র আরও জানায়, মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ বাড়ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৫০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ১০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে ৯ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
সরকারের সবচেয়ে আলোচিত প্রকল্প পদ্মা সেতুতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। চলতি বছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ প্রকল্পে আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। একই ভাবে মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পে আগামী বাজেটে সম্ভাব্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে ৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল এ প্রকল্পে। নির্বাচনী বছরে এ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে ৩২৪ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮২ কোটি টাকার বেশি। এ প্রকল্পের আওতায় আটটি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উল্লিখিত প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তিনটি মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমানো হয়েছে। কারণ নির্বাচনী বছরে এ তিন প্রকল্পে কাজ তেমন দৃশ্যমান হবে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, এ তিন প্রকল্পের মধ্যে আগামী বাজেটে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে ২ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। আর ৩৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে দোহাজারী থেকে ঘুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে। আগামী বাজেটে এ প্রকল্পে সম্ভাব্য বরাদ্দ হচ্ছে ১২০০ কোটি টাকা। যা চলতি বছরে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এছাড়া মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং দেড় হাজার কোটি টাকা।
সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বড় বিনিয়োগের দশ প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো হলে উন্নয়ন বেশি হবে। অপরদিকে নির্বাচনের আগেই দৃশ্যমান উন্নয়ন চোখে পড়বে।
তারা আরও জানান, নির্বাচনের আগে এসব প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে হবে ভোটারদের মধ্যে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন সরকারের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বাস্তবায়ন কাজ। সেতুর তৃতীয় স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৪৫০ মিটার সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল সেতুর ১০টি বটম সেকশন, ১১৮টি টম ও বটম সেকশন, ৪টি পিয়ার কলামের কাজ শেষ হয়েছে বলে সেতু বিভাগের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে মূল সেতু ৫৮ শতাংশ এবং নদী শাসনের কাজ ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ শেষ করা হয়েছে।