এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নপুষ্ট ৫ প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। অর্থছাড়ের অবস্থাও নাজুক। ফলে এগুলোর যথাসময়ে বাস্তবায়ন শঙ্কার মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পগুলো পরিদর্শনে নামছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ বিষয়ে ভ্রমণসূচি সরবরাহের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
১৮ মার্চ এ সংক্রান্ত ইআরডির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় ইআরডির প্রতিনিধির প্রকল্প পরিদর্শনের বিষয় আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্প প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তাদের প্রকল্প পরিদর্শনের ভ্রমণসূচির তালিকা পাওয়া যায়নি। এদিকে প্রকল্পের গতি বাড়ানো এবং পরিদর্শনের বিষয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি ইআরডিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থছাড় বাড়ানোর বিষয়েও তাগিদ দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির সচিব কাজী শফিকুল আযম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, অগ্রগতি কম হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়া প্রকল্পগুলো হল- ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট, কলেজ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প, কর্মসংস্থান বাড়াতে রফতানি প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রকল্প এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প।
২৫ ফেব্রুয়ারি ইআরডিতে পাঁচ প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বব্যাংক-৪ অধিশাখার উপসচিব জাহিদ হোসেন মুনশি। শনিবার তিনি জানান, তারা প্রকল্প পরিদর্শনে যেতে চাইলে ইআরডিকেও যেন অবহিত করে। কিন্তু এখনও সেটি করেনি। তবে প্রকল্পগুলো অগ্রগতি বাড়াতে চলতি মাসে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্বব্যাংকের উইংয়ের প্রধান ইআরডির অতিরিক্ত সচিব। এরপর প্রকল্প পরিদর্শনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, ইআরডির ওই বৈঠকে প্রকল্পগুলোর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় জানানো হয়, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে ১৯ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় দেয়া হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংকের সরবরাহ করা তথ্যে ১৯ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেখানো হয়েছে। এ প্রকল্পে ছাড়হীন অর্থের পরিমাণ ৪০ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ক্লায়েন্ট কানেকশনে দেখানো হচ্ছে ৩৩ দশমিক শূন্য ২ মিলিয়ন ডলার।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল হাসান শনিবার বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৫৫০ কোটি টাকা মোট ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ৪৪৯ কোটি টাকা। এতে নতুন পদ্ধতিতে অর্থায়ন করা হচ্ছে। অর্থাৎ ফলাফলের ভিত্তিতে অর্থছাড় করা হবে। কাজের বাস্তব অগ্রগতি দেখে বিশ্বব্যাংক অর্থছাড় করবে। কিন্তু ভ্যাট আইন কার্যকরে দুই বছর পিছিয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়নও পিছিয়ে গেছে। ফলে বাস্তব কাজ না হওয়ায় অর্থছাড়ও হয়েছে কম। এছাড়া প্রকল্পটি সংশোধনও করতে হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে পাইলট ভিত্তিতে এটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।
সভায় জানানো হয়, কলেজ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছরে এক টাকাও ছাড় দেয়া হয়নি। ছাড়হীন অর্থের পরিমাণ ৭৭ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বিষয়ে প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার ফেরদৌস আহমেদ জানান, এটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ৮০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত রয়েছে। একাধিক সংস্থা যুক্ত থাকায় কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। এখন সমন্বিতভাবে কাজ হচ্ছে। আগামীতে বাস্তবায়ন আরও বাড়বে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে অর্থছাড় হয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের প্রতিনিধি জানান, এ অর্থবছরে ১০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যা তৃতীয় কোয়ার্টার হিসেবে আগামী মে মাসের মধ্যে উত্তোলন করা হবে। তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পে ছাড়হীন অর্থের পরিমাণ ২২ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ক্লায়েন্ট কানেকশনে ১৪ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার দেখানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে চুক্তির মুদ্রা এসডিআর হওয়ায় এক্সচেঞ্জ লসের কারণে এমনটি হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার গাজী মো. নজরুল ইসলাম দাবি করেন, যে পাঁচটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে আমাদের প্রকল্পটির অগ্রগতি সবচেয়ে ভালো। প্রকল্পটির ব্যয় ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩২৪ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে হাজার ৭৩০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। তবে কারেন্সি লসের কারণে প্রকল্পের অনুকূলে আমরা পাব ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। আগামী ১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত সময় রয়েছে।
দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছরে ছাড় হয়েছে ৭ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার। এখনও ছাড়হীন অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৫৭ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে রফতানি প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি প্রকল্পের অনুকূলে চলতি অর্থবছরে এক টাকাও ছাড় হয়নি। ছাড়হীন অর্থের পরিমাণ ১০৪ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার। ইআরডির ওই সভায় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বাড়িয়ে অর্থছাড় বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়।