এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জামিন পেয়েছেন বলিউড সুপারস্টার সালমান খান। অনেক নাটকীয়তার পর শেষপর্যন্ত তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন যোধপুর সেশন কোর্টের বিচারক রবীন্দ্র কুমার যোশি। ৫০ হাজার রুপির ব্যক্তিগত বন্ডে তিনি এই বলিউড তারকাকে জামিন দিয়েছেন।
সালমানের আইনজীবীরা জানান, আদালতের নির্দেশসংক্রান্ত কাগজ কারাগারে পৌঁছার পর শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ছাড়া পান সালমান খান। আর শিগগিরই এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে তার পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার পর এরই মধ্যে ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। সেদিন আদালত থেকে তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে।
শনিবার মধ্যাহ্নভোজের পর এজলাসে এসে যখন বিচারক রবীন্দ্র কুমার যোশি বসেন, তখন ঘড়িতে বেলা ২টা। আবার শুরু হয় সালমান খান আর বিষ্ণোই সমাজের আইনজীবীদের উত্তপ্ত শুনানি। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই চলেছে এ অবস্থা। মাঝে ছিল বিরতি। একপর্যায়ে সালমান খানের আইনজীবীরা এই বলিউড তারকাকে মুক্তি দেয়ার জন্য কাকুতিমিনতি করেন। তাদের ধারণা, বিচারকের বদলি হওয়ায় জামিন মঞ্জুর বিলম্বিত হতে পারে। অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আরও দুই দিন। আর এ সময়টা কারাগারে থাকতে হবে সালমান খানকে। শুরুতে রবীন্দ্র কুমার যোশি জানান, মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর তিনি বেলা ২টায় সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু শুনানি শেষ না হওয়ায় সিদ্ধান্ত জানানো থেকে বিরত থাকেন। শুনানি শেষে তিনি জানান, বেলা ৩টার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। এদিকে আদালতে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সালমান খানের জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু শুক্রবার এ মামলার সংশ্লিষ্ট বিচারক রবীন্দ্র কুমার যোশি হঠাৎ বদলি হওয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তখন জানা যায়, পরবর্তী বিচারকের দায়িত্ব বুঝে না নেয়া পর্যন্ত সালমান খানের জামিন আবেদনের কোনো সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আগের দিনের ঘোষণা অনুযায়ী সকালে এজলাসে বসেন বিচারক রবীন্দ্র কুমার যোশি। তাকে ৫১ পাতার জামিন আবেদনের নথি পড়ে শোনানো হয়। এরপর শুনানিতে অংশ নেন দুইপক্ষের আইনজীবীরা। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন সালমান খানের দুই বোন আলভিরা ও অর্পিতা এবং দেহরক্ষী শেরা। শুক্রবার যোধপুর সেশন কোর্টে সালমান খানের জামিনের আবেদন করা হয়। এদিকে সালমান খানের মুক্তির জন্য মন্দিরে পূজা দিয়েছেন তার দাইমা রুকমাণী বাই। তার হাতেই ইন্দোর নার্সিং হোমে ১৯৬৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল সালমান খানের।
এরই মধ্যে যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে পরপর দুই রাত থেকেছেন সালমান খান। সেখানে কুলার খাটিয়া ও চারটি কম্বল দেয়া হয় তাকে। সালমান খান উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছেন। শুক্রবার রাতে তার রক্তচাপ বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর রক্তচাপ কমানোর জন্য আদালতে সালমানকে ওষুধ খেতে দেখা যায়। কারাগারে ঢোকার পর থেকেই তার শরীর খারাপ হতে শুরু করে। রাতে রুটি, ছোলার ডাল কিংবা বাঁধাকপির তরকারি দেয়া হলেও কিছুই খাননি সালমান। গতকাল সকালেও চা, ডালিয়া কিংবা খিচুড়ি খাননি। শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় শুধু চা আর গ্লুকোজ বিস্কুট খান তিনি। এরপর দুধের জন্য আবেদন করেন।
সালমান খানকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ভারতের রাজস্থান রাজ্যের যোধপুরের একটি আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়। তাকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০ বছর আগের কৃষ্ণসার হরিণ শিকার মামলার রায় হয় বৃহস্পতিবার সকালে। এ মামলায় অন্য তিন অভিযুক্ত সাইফ আলী খান, টাবু ও সোনালী বেন্দ্রেকে আদালত বেকসুর খালাস দেন।
বলিউডে সালমান খানকে বলা হয় ‘হিট মেশিন’। তাকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেয়ায় থমকে যায় বলিউড। অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন অনেক চিত্র প্রযোজক। কারণ এরই মধ্যে এক হাজার কোটি রুপির বেশি লগ্নি করা হয়েছে এই নায়ককে ঘিরে।
এদিকে রায় হওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে সালমান খানের আইনজীবী এইচএম সারস্বত দাবি করেন, সরকারি কৌঁসুলি অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেননি। মামলা সাজাতে ভুয়া সাক্ষী দাঁড় করিয়েছেন। এমনকি বন্দুকের গুলিতেই যে কৃষ্ণসার হরিণ দুটির মৃত্যু হয়েছিল তাও সরকারি কৌঁসুলি প্রমাণ করতে পারেননি। গত ২৮ মার্চ নিু আদালতে কৃষ্ণসার মামলার চূড়ান্ত পর্যায়ের শুনানি শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ১৯৯৮ সালের ১ ও ২ অক্টোবর যোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের মাঝে আলাদা আলাদা জায়গায় দুটি কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেন সালমান খান। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাইফ আলী খান, নীলম, টাবু ও সোনালী বেন্দ্রে। রাজস্থানের যোধপুরের কঙ্কানি এলাকায় গ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বিষ্ণোইর অধিবাসীদের অভিযোগ, গুলির শব্দ শুনে তারা সালমানের জিপসি গাড়িটি ধাওয়া করেন। কিন্তু তাদের ধরা যায়নি। ওই সময় চালকের আসনে ছিলেন সালমান খান। গ্রামবাসীর দাবি, প্রবলগতিতে গাড়ি ছুটিয়ে সালমান খান আর তার সঙ্গীরা পালিয়ে যান। বেআইনিভাবে জঙ্গলে ঢোকার অভিযোগে সালমান খান আর অন্য তিন তারকার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৯ নম্বর ধারায় মামলা এখনও চলছে।