এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সিরিয়ায় একযোগে হামলা চালিয়েছে মার্কিন পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। শুক্রবার রাতে এ হামলা চালানো হয়। তিন দেশের যৌথ এ হামলায় ১০৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এর মধ্যে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ৭১টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচির প্রাণকেন্দ্রে আঘাত হেনেছে বলে দাবি করেছে হামলাকারী দেশগুলো। হামলায় রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সও হামলা সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে। এদিকে পশ্চিমা হামলার নিন্দা জানিয়ে হামলার পরদিন জাতিসংঘে রাশিয়ার তোলা এক নিন্দা প্রস্তাব সর্বসম্মতি উৎপাদনে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আর তার পশ্চিমা মিত্রদের এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় গত সাত বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রয়টার্স জানায়, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে পূর্ব ঘৌটায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ শহর দৌমায় রাসায়নিক হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের বাহিনীকে দায়ী করে দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন স্থাপনায় একযোগে হামলা চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এই হামলা শুরুর নির্দেশ দেন। ট্রাম্প বলেন, আসাদ সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের হামলা চালাতে ’মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুতি আছে।’ তার নির্দেশের দামেস্কে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।
বিবিসি জানিয়েছে, সিরিয়ার হোমস শহরের কাছে একটি সেনা ঘাঁটিতে যুক্তরাজ্যের চারটি টর্নেডো জঙ্গি বিমান হামলা চালিয়েছে। ওই ঘাঁটিতে রাসায়নিক অস্ত্রের সরঞ্জাম রাখা হতো বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দামেস্কের কাছে অন্তত ছয়টি বড় বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। সিরিয়ার রাজধানীর আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। এছাড়া দামেস্কের বারজাহ জেলায় বিমান হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী। এই বাজরাহ জেলায় সিরিয়ার প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও সিরিয়ায় একযোগে হামলার কথা জানান। তেরেসা বলেন, সিরিয়ায় হামলা চালানো ছাড়া যুক্তরাজ্যের সামনে ‘বিকল্প’ ছিল না। হামলার পর শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র স্থাপনায় ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের চালানো বিমান হামলা সফল হয়েছে বলে যুক্তরাজ্য নিশ্চিত। এ পদক্ষেপ নেয়াটা ‘সঠিক এবং বৈধ’ হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শনিবার ডাউনিং স্ট্রিটে এক বক্তব্যে তেরেসা বলেন, সুনির্দিষ্ট এবং টার্গেট করে বিমান হামলায় সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা কমানো গেছে।
যৌথ এ হামলা ‘ব্যর্থ’ হয়েছে বলে দাবি করেছে সিরিয়া। একে ‘আন্তর্জাতিক আইনের চরম লংঘন’ হিসেবেও অভিহিত করেছে দেশটির সরকার। এ হামলার পাল্টা জবাব দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেয় রাশিয়া। এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তিন সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের একযোগে চালানো বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা রাশিয়ার প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেছে। শনিবার মস্কোর আনা এ নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে বলিভিয়া ও চীন ছাড়া আর কেউ ভোট দেয়নি বলে রয়টার্স। পেরু, কাজাখস্তান, ইথিওপিয়া ও একোয়াটোরিয়াল গিনি ভোটদানে বিরত ছিল। অপরদিকে তিন স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ আট সদস্য বিপক্ষে ভোট দেয়।