এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা ব্যাংক ঋণের সুদহার কমছে না। এমনকি শিগগিরই কমবে, এমন লক্ষণও ক্ষীণ। সাধারণত ব্যাংকগুলো যত দ্রুত ঋণের সুদহার বাড়ায় তত দ্রুত কমায় না। এ কারণে বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে অনেক উৎপাদনশীল শিল্প লোকসানে পড়ছে। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধে সংশ্লিষ্টরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। যার প্রভাব পড়ছে খেলাপি ঋণে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ব্যাংক ঋণের সুদহার কমাতে কয়েক দফা তাগাদা দিয়েছেন ব্যাংক মালিকদের। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। উল্টো তারল্য সংকটের অজুহাতে মালিকরা এর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছে। এর একটি বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমানো। এর মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে মালিকরা। অন্যটি সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিধান। যা আগে ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ।
জানা গেছে, এসব সুবিধা দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী পৃথক দুই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আপনাদের অনেক সুবিধা দিয়েছি, এবার ব্যাংক ঋণের সুদহার কমান। তখন ব্যাংক মালিকরা কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু সুদহার কমানোর লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণের সুদহার কমাব, তবে আরও সময় লাগবে। বেশি দামে পণ্য কিনে কম দামে তো বিক্রি করা যায় না। সে কারণে সময় নেয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার একদিনে কমবে না। যেহেতু ১০ শতাংশের বেশি সুদ দিয়ে আমানত নিয়েছি, সে ক্ষেত্রে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। মূল কথা- আমি কম সুদে আমানত নিতে পারলে কম সুদে ঋণও দিতে পারব। আমি কখনও ঋণের সুদ বেশি হওয়ার পক্ষে নই। কারণ উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, এত দ্রুত কমবে না। আরও একটু সময় লাগবে। তবে নতুন করে বাড়ছে না এটাই আশার কথা। আগের জায়গায় থেমে আছে সুদের হার। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা সত্ত্বেও বরাবরই তা অমান্য করছে দেশি-বিদেশি ১০ ব্যাংক। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের উপরে ছিল। সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। এর পরেই রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদেশি খাতের ৫টি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। গত মার্চ শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। অথচ আমানতের বিপরীতে দিয়েছে মাত্র এক দশমিক ৭০ শতাংশ সুদ। এতে স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। বেশিরভাগ বিদেশি ব্যাংক বরাবরই স্প্রেড নির্দেশনা অমান্য করে আসছে। এদিকে সার্বিকভাবে বেসরকারি ব্যাংকের স্প্রেড ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ সুদ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে আদায় করেছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, স্প্রেড ৫ শতাংশের উপরে থাকা বিদেশি ব্যাংকগুলো হচ্ছে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্যাংক এনএ, উরি ব্যাংক এবং এইচএসবিসি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো হল- ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নির্দেশনা দিয়ে আসছে। কিন্তু তা মানছে না বেশ কয়েকটি ব্যাংক। ১০টি ব্যাংক আমানতকারীদের ঠকিয়ে ঋণের সুদ বেশি নিয়েছে। এসব ব্যাংক আমানতকারীদের সামান্য সুদ দিলেও ঋণের সুদ নিচ্ছে চড়া দামে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আমানতের বিপরীতে গড়ে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকটি ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ সুদ নিয়েছে। বিদেশি খাতের এ ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ দিয়েছে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ঋণের বিপরীতে সুদহার ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তথ্যমতে, গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ সুদ আদায় করেছে। অথচ আমানতের বিপরীতে ৫ দশমিক ০১ শতাংশ সুদ দিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।