এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে আগের ম্যাচে ‘দুঃস্বপ্ন’ দেখেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে উইকেটশূন্য থেকে দিয়েছিলেন ৫৫ রান। তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সবচেয়ে খরুচে বোলিং। সেই দুঃস্বপ্ন ভুলে আজ রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ (৪-০-৩৫-১)। কিন্তু চাপের মুহূর্তে নিজের শেষ ওভারে উইকেট নিলেও দিয়েছেন মহামূল্য ১৫ রান। তাঁর দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসও জিততে পারেনি। জয়ের সুবাস পেতে পেতে হেরেছে।
মুম্বাইয়ের ৭ উইকেটে ১৬৭ রান তাড়া করতে তৃতীয় ওভারেই ওপেনার রাহুল ত্রিপতীকে (৯) হারায় রাজস্থান। আরেক ওপেনার অজিঙ্কা রাহানেকেও দ্রুত ফেরান মুম্বাইয়ের পেসার মিচেল ম্যাকলেনাহান। তৃতীয় উইকেটে স্টোকস- স্যামসন জুটি ঘুরে দাঁড়ালেও সেভাবে রান তুলতে পারেনি। প্রথম ১০ ওভার শেষে রাজস্থানের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৭০। অর্থাৎ জিততে হলে বাকি ৬০ বলে তখনো ৯৮ রান করার চ্যালেঞ্জ।
রাজস্থান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল মোস্তাফিজ সহ মুম্বাইয়ের বাকি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশের এ পেসারই সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন। প্রথম স্পেলে ২ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ১১ রান। প্রথম ওভারে ৬, পরের ওভারে ৫। কিন্তু তখন কে জানত, মোস্তাফিজের শেষ ওভারটি মুম্বাইকে হারের পথে ঠেলে দেবে!
স্যামসন-স্টোকস জুটির যে আলাদা পরিকল্পনা ছিল সেটা বোঝা গেছে তাঁদের ব্যাটিংয়ে। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে দেখেশুনে খেলেছেন দুজন। কিন্তু ১১তম ওভার থেকেই হাত খুলতে শুরু করেন। ম্যাকলেনাহানের করা ১১তম ওভারে ১৬ রান তুলে নেন দুই ব্যাটসম্যান। হার্দিক পাণ্ডিয়ার করা পরের ওভারে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই এসেছে ১০ রান।
৪২ বলে ৬৭ রানের দূরত্বে ছিল রাজস্থান। এ অবস্থায় ১৪তম ওভারে মোস্তাফিজকে বোলিংয়ে আনেন মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মা। চাপের মুখে এই ওভারে মোস্তাফিজের ৯ রান দেওয়া সেভাবে কারও চোখে লাগেনি। পরের ওভারে স্টোকসকে (২৭ বলে ৪০) ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন পাণ্ডিয়া। কিন্তু অন্য প্রান্তে স্যামসন ছিলেন আস্থার প্রতীক হয়ে। দারুণ কিছু স্ট্রোক খেলে ৩৬ বলে ফিফটি তুলে নেন স্টাইলিশ এ ব্যাটসম্যান।
জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৫০ রান দরকার ছিল রাজস্থানের। ১৬তম ওভারে মাত্র ৬ রান দেন ক্রুনাল পাণ্ডিয়া। পরের ওভারে পরপর দুই বলে স্যামসন (৫২) ও জস বাটলারকে (৬) ফিরিয়ে রাজস্থানকে চাপে ফেলেন জসপ্রীত বুমরা। ভারতের এ পেসার এই ওভারে ১ রানে ২ উইকেট নেন। কিন্তু এই ম্যাচের চিত্রনাট্যের তখনো অনেক বাকি ছিল।
রাজস্থান ১৮ বলে ৪৩ রানের দূরত্বে থাকতে ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজকে বোলিংয়ে ফেরান রোহিত। প্রথম বলেই হেইনরিখ ক্লাসেনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। এই ওভারে ১ উইকেট পেলেও ১৫ রান দিয়ে উল্টো দলকেই ফেলেছেন চাপে। কারণ ১৮ ওভার শেষে রাজস্থান তখন ১২ বলে ২৮ রানের দূরত্বে দাঁড়িয়ে। ১৯তম ওভারে বুমরা এসে ১৮ রান দিয়ে মুম্বাইয়ের জয়ের সুবাসকে পরিণত করেন হারের শঙ্কায়।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১০ রান দরকার ছিল রাজস্থানের। পাণ্ডিয়া প্রথম বলে জোফ্রা আর্চারকে (৮) তুলে নিলেও দ্বিতীয় বলে চার ও চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে রাজস্থানকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দেন কৃঞ্চপ্প গৌথম। রাজস্থানের ২ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটের এই দুর্দান্ত জয়ে ১১ বলে ৩৩ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন তিনি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সূর্যকুমার যাদবের ৪৭ বলে ৭২ ও ইশান কিষাণের ৪২ বলে ৫৮ রানের সুবাদে ৭ উইকেটে ১৬৭ রানের স্কোর পায় মুম্বাই। দ্বিতীয় উইকেটে এবারের আইপিএলে সর্বোচ্চ ১২৯ রানের জুটি গড়েন সূর্যকুমার-ইশান জুটি। কিন্তু মুম্বাই শেষ ৫ ওভারে ৫ উইকেট হারানোর বিনিময়ে তাঁরা তুলেছে মাত্র ৩২ রান।