এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : দরকার ছিল মাত্র একটি উইকেটের। তাহলেই টি-টোয়েন্টিতে প্রথম বাঁ হাতি বোলার হিসেবে উইকেটের ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ হতো সাকিব আল হাসানের। চেন্নাই সুপার কিংস তা হতে না দিলেও সাকিব বোলিংয়ে (৪-০-৩২-০) একেবারে খারাপ করেননি। খারাপ করেছেন ব্যাটিংয়ে, ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আশার প্রদীপ জ্বালিয়েও তা নিজেই নিভিয়েছেন এক ফুৎকারে! তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদও ১৮২ তাড়া করে ৪ রানে হেরেছে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে।
টি-টোয়েন্টিতে ১৮৩ রানের লক্ষ্য মোটেও সহজ কিছু নয়। আর দলে যদি শিখর ধাওয়ানের মতো কেউ অনুপস্থিত থাকেন তাহলে কাজটি তো আরও কঠিন। সানরাইজার্সের টপ অর্ডার এই কঠিন কাজকেই প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নিয়ে। পরে কেন উইলিয়ামসন-সাকিবের ৩৭ বলে ৪৯ রানের জুটি কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও কাজ হয়নি। এমনকি উইলিয়ামসন-পাঠানের ঝোড়ো জুটিতে সানরাইজার্স জয় দেখলেও সেটা গেল চেন্নাইয়ের কাছেই। উইলিয়ামসনের দল ৬ উইকেটে ১৭৮ রানেই থেমে যাওয়ায় ৪ রানের রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় চেন্নাই।
প্রথম ৫ ওভারের মধ্যেই ৩ উইকেট নেই, রান উঠেছে মাত্র ২২! সানরাইজার্স টপ-অর্ডারদের গড়া এই ধ্বংসস্তূপের ওপর ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন সাকিব। শুরুটা ছিল দারুণ। ষষ্ঠ ওভারে শেন ওয়াটসনের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে খুলেছেন রানের খাতা। ওই ওভারেরই দ্বিতীয় বলে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে মেরেছেন ছক্কা। আর অষ্টম ওভারে দীপক চাহারকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ওপর দিয়ে লাফিয়ে চার মেরে সাকিব যেন বুঝিয়ে দেন আজ তাঁর দিন।
কিন্তু সুযোগটা নিজ হাতে নষ্ট করেছেন। ১১তম ওভারে ফিরেছেন দলকে বিপদে ফেলে। করণ শর্মার ‘গুগলি’ জোর করে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট ফাইন লেগে। সাকিব (২৪) ফেরার সময় সানরাইজার্স ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে হার দেখছে।
এখান থেকে পঞ্চম উইকেটে ৪৫ বলে ৭৯ রানের জুটিতে পাশার দান উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন উইলিয়ামসন ও ইউসুফ পাঠান। ৩৬ বলে ৮৮ রানে পিছিয়ে থাকতে ১৫তম ওভারে শর্মাকে তিন ছক্কা হাঁকান উইলিয়ামসন। পরের ওভারে দুটি ছক্কা মারেন ইউসুফ পাঠান। জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে ৪২ রান দরকার ছিল সানরাইজার্সের। ১৮তম ওভারের শেষ বলে উইলিয়ামসনকে (৮৪) ফেরান ডোয়াইন ব্রাভো। ৫১ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় অধিনায়কসুলভ ইনিংসই খেলেছেন এই কিউই।
সানরাইজার্স ১২ বলে ৩৩ রানের দূরত্বে থাকতে ১৯তম ওভারে পাঠানকে (৪৫) ফেরান শার্দুল ঠাকুর। শেষ ওভারে ১৯ রান দরকার ছিল সাকিবদের। ঋদ্ধিমান সাহা-রশিদ খান যেন জিততে জিততে হারলেন! শেষ বলে ৬ রান দরকার ছিল সানরাইজার্সের। রশিদ পারেননি, ১ রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
বল হাতে সানরাইজার্সের শুরুটা ছিল দারুণ। ১০ ওভার শেষে চেন্নাইয়ের রান ২ উইকেটে ৫৪। এবার আইপিএলে প্রথম ১০ ওভারে সর্বনিম্ন রান। চেন্নাই এ পথে নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভেঙেছে।
এই ১০ ওভারের মধ্যে সাকিব ২ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৯ রান। প্রথম ওভারে ৪, পরের ওভারে ৫। সানরাইজার্সের বাকি বোলারেরাও একেবারে খারাপ করেননি। কিন্তু পরের ১০ ওভারে চেন্নাই ১২৮ রান তুলেছে! ৩৭ বলে ৭৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে চেন্নাইয়ের এই রান উৎসবে নেতৃত্ব দিয়েছেন আম্বাতি রাইডু।
চেন্নাইয়ের এই ১০ ওভারের মধ্যে ২ ওভার বোলিং করে ২৩ রান দেন সাকিব। আফগানিস্তানের লেগি রশিদ খান এই সময়টায় ৩ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৪৪ রান! তৃতীয় উইকেটে রাইডু-রায়নার ৫৭ বলে ১১২ রানের জুটিতে মূলত পুড়েছেন রশিদ খান। ৪৩ বলে অপরাজিত ৫৪ রান করা রায়না মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ২০ বলে ৩৮ রান যোগ করে চেন্নাইকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন।