এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : রাতের অন্ধকারে সৌদি আরবের রাজপ্রসাদ চত্বরে হঠাৎ গোলাগুলির ঘটনায় দেশটিতে অভ্যুত্থান চেষ্টা চলছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার রাতে রিয়াদে বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন সালমানের প্রাসাদের বাইরে গোলাগুলির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
বিকট গুলির শব্দ নানা গুঞ্জনের জন্ম দেয়। পরে সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনী বলেছে, গুলি করে একটি ড্রোন নামানো হয়েছে। ড্রোনটি খেলনা বলে চিহ্নিত করেছে তারা।
আসলে এটি অভ্যুত্থান চেষ্টা ছিল নাকি এমন সম্ভাবনা ধাপাচাপা দিতেই ড্রোনের নাটক সাজানো হয়েছে- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দেশটির বিভিন্ন মহলে। শুধু সৌদি আরবেই নয় সারা বিশ্বেই এ ঘটনাকে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর আলজাজিরা ও এএফপির।
সৌদি পুলিশের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এসপিএ বলেছে, স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে প্রাসাদের কাছে একটি ‘অননুমোদিত ড্রোনের’ উপস্থিতি ধরা পড়ে।
রিয়াদ পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, আল খুজামা এলাকায় রিমোট কন্ট্রোল চালিত ক্ষুদে একটি খেলনা ড্রোন উড়তে দেখা যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই আকাশে ওই ড্রোন উড়ানো হচ্ছিল। নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ম অনুযায়ী সেটার ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি এবং বাদশাহ সালমান সে সময় প্রাসাদে ছিলেন না বলে এক সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। বাদশাহ দিরিয়ায় তার অবকাশযাপন কেন্দ্রে ছিলেন।
শনিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে গুলির শব্দ আর আলোর ঝলকানি দেখা যায়। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে খবরও আসতে শুরু করে। সৌদি আরবে কোনো অভ্যুত্থান ঘটেছে কিনা। বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশটির বাদশাহ বা যুবরাজের ভাগ্যে কী ঘটেছে এমন প্রশ্নও ঘুরতে শুরু করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিওতে বলা হয়েছে, রাজপ্রাসাদে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ বিরোধী অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে। ওই সময় বাদশাহ সালমানকে রাজপ্রাসাদ থেকে একটি সামরিক ঘাঁটিতে সরিয়ে নেয়া হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
রয়টার্স লিখেছে, ওই ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি আরবের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি অজ্ঞাত ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে। বিনোদনের জন্য ড্রোন উড়ানোর বিষয়ে সরকার একটি নীতিমালা তৈরিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি আলজাজিরা।
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ গত বছর জুনে তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণার পর থেকে রক্ষণশীল এ মুসলিম দেশটি বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ সৌদি আরবের তেলনির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবে তার দেশকে আরও বেশি উন্মুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের সমালোচনার সুযোগও দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ছেলের অবস্থান সংহত করতে গিয়ে সৌদি আরবে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে কয়েক দফা বড় ধরনের রদবদল এনেছেন বাদশাহ সালমান। যুবরাজের নেতৃত্বে চালানো ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে’ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রিন্স আর ধনকুবেরকে কারাগারে যেতে হয়েছে। অবশ্য তাদের অধিকাংশকেই পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি প্রিন্সসহ সরকারি আমলা ও কর্মকর্তাদের ওপর যুবরাজের এমন হস্তক্ষেপের পরিণতি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে।