এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : দেশে ফিরেই বিচার বিভাগের ওপর ক্ষেপে উঠেছেন পাকিস্তানের পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানে কোনো গণতন্ত্র নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, পাকিস্তানজুড়ে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। লন্ডনে অসুস্থ স্ত্রী কুলসুম নওয়াজকে দেখে রোববার দেশে ফেরেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল) আজীবন সদস্য নওয়াজ। পরদিনই বিচার বিভাগের ওপর কামান দাগেন তিনি। এদিকে প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে পাকিস্তান পিপল’স পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বেনজির-পুত্র বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, নিজেদের কর্তব্য দ্রুততার সঙ্গে সম্পাদন করা উচিত বিচারপতিদের। ডন এ খবর দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে নওয়াজ শরিফ বলেন, এই মুহূর্তে দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। মার্শাল ল’ তথা সামরিক শাসনের চেয়ে খারাপ শাসন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলামাবাদে সোমবার দুর্নীতি দমন আদালতে হাজিরা দেন নওয়াজ। এ সময় আদালতের বাইরে সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, ‘দেশে এখন যা চলছে তাকে গণতন্ত্র বলা যায় না। প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসার পাকিস্তানে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন।’
২০১৮ সালে গৃহীত বিচার বিভাগীয় কর্মসূচির আওতায় মানবাধিকারের বিষয়গুলোর ওপর জোর দিচ্ছে পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতির আদেশে রোববার নওয়াজ শরিফের বাসভবনের নিরাপত্তা পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া দেশজুড়ে সরকারি আমলাদের বাসা-অফিসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা ১৩ হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। প্রধান বিচারপতির অভিযোগ, এসব পুলিশ সদস্য এমন ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছিলেন, যারা পুলিশি নিরাপত্তা পাওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।
ডন জানায়, এসব ব্যক্তির মধ্যে রাজনীতিবিদ, বিচারক, পুলিশ, সাংবাদিক, বিদেশি ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। বিচারপতির এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন নওয়াজকন্যা মরিয়ম নওয়াজ। বাবার ওপর জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের গৃহীত অভূতপূর্ব এ পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফতাব শেরপাও, জেইউআই-এফ প্রধান মওলানা ফজলুর রেহমান, এএনপি প্রধান আসফানদিয়ার ওয়ালি খান প্রমুখ। সর্বোচ্চ আদালতের এসব পদক্ষেপকে সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে আদালতের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে পাকিস্তানের জনগণের ‘সাংবিধানিক অধিকার’ অভিহিত করে তিনি বলেন, কোনো সমালোচনাই তাকে থামাতে পারবে না।
এদিকে প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসারকে পরামর্শ দিয়ে পপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, মামলার জট ছাড়াতে নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা উচিত বিচারপতিদের। তিনি জানান, পাকিস্তানের বিভিন্ন আদালতে প্রায় ১৮ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ন্যায়বিচারের জন্য জনগণ দশকের পর দশক ধরে অপেক্ষা করছে। বিলাওয়াল বলেন, আপনারা যদি আমাদের কাজও করতে চান, তবে করুন। তবে দয়া করে আপনাদের নিজের কর্তব্যও ভালোভাবে করুন।’ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এ কাজ আপনারা না করলে, আর কারা করবে?’